দাদাবৌদি ফিরে এল। ইন্দ্রাণী বাড়ি ফিরে গেল।
কদিনের সুখস্মৃতিটুকু দুজনের সম্বল।
কদিন পর ইন্দ্রাণী আবার বেড়াতে এল।দুপুরে বন্ধ দরজার আড়ালে দুবোনের কি কথা হল কে জানে?
ইন্দ্রাণী চোখমুখ লাল করে ফিরে গেল।
অর্ক আন্দাজ করল বৌদি তাদের বিষয়টা ভালভাবে নেয়নি।
কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করতে পারল না।
কৌতূহলে চেষ্টা করল ইন্দ্রাণীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টা জানতে।
কিন্তু ইন্দ্রাণীর কাছ থেকেও রহস্য উদ্ধার হল না।
ইন্দ্রাণী শুধু বলল--"আমাকে সত্যি ভালবেসে থাকলে চুপচাপ অপেক্ষা কর।"
এরপরও ইন্দ্রাণী এ বাড়ি এসে ঘুরে গেছে দু তিনবার।
কিন্তু কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।
******************************* ************************
বৌদির এখন আটমাস। দেখাশোনার জন্য লোক দরকার।
এ সময় মেয়েরা সাধারণত বাপের বাড়ি থাকে।কিন্তু এখানে থাকলে ভালো ডাক্তার আর নার্সিংহোমের সুবিধে হবে বলে বৌদি এ বাড়িতেই রইল।বৌদির ইচ্ছে না থাকলেও মুখে কিছু বলতে পারল না।
সবার ইচ্ছেতে ইন্দ্রাণীর আবার এ বাড়িতে আগমন ঘটল।
সেও হাসিমুখে সব সামলাতে লাগল।
ভিতরে ভিতরে কী পরিকল্পনা করছে সে তা কেউ জানে না।
অর্কর সন্দেহ হয় কিছু একটা আছে।
কিন্তু সেটা কি বলে না ইন্দ্রাণী। বলবেই বা কি করে।অর্ককে কেন্দ্র করে দিদি তাকে যাচ্ছেতাই অপমান করেছে।সম্পর্কটার জন্য সরল মনে একটু সাহায্য চেয়েছিল।
সাহায্য তো দূর তার বদলে অমন আচরণ।
অর্ক আর তার নাকি চরিত্র খারাপ।
আরে অর্কর কি বিয়ে দিতে হবে না কোনোদিন?কেউ আসবে না এ বাড়িতে?
তাহলে সে এলে কি এমন ক্ষতি?
এক বাড়িতে কোনোদিন কি দুবোনের বিয়ে হয়নি?
উল্টে ভয় দেখিয়েছে দরকারে বরকে বলে হেস্তনেস্ত করবে। তার বর নাকি ওদের মতো চরিত্রহীন না।
সেদিন ইন্দ্রাণী শুধু বলেছিল----
"বেশী অহঙ্কার ভাল না। আমাকে কেন শত্রু ভাবছিস তুই জানিস। তোর সংসার তো ভাঙতে যাইনি।
শুধু একজনকে ভালবেসে বিয়ে করতে চেয়েছি। কি সমস্যা তাতে তোর?
ছাড় আমারই ভুল। তোকে কোনো সাহায্য করতে হবে না।"
তখন থেকেই একটা প্রতিশোধস্পৃহায় পাগল ইন্দ্রাণী।
এটা শুধু তার নিজের লড়াই। কারো সাথে শেয়ার করবে না সে।
******************************* ************************
বৌদি নার্সিংহোমে ভর্তি হল। সীজার করে ছেলের জন্ম হল। সবাই খুব খুশি। তিন দিন অন্তত থাকতে হবে। তারপর ছাড়বে।
দাদা ডাক্তারকে বলেছে দরকারে বেশি রাখতেও আপত্তি নেই। খরচের জন্য ভাবতে হবে না। কিন্তু কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।
সেদিন অনেক রাত অবধি ইন্দ্রাণী দাদার সাথে তার ঘরে গল্প করতে লাগল।দুজনের নানা রকমের ঠাট্টা ইয়ার্কি চলতে লাগল।
বাবা ঘুমিয়েছে অনেক আগে।
অর্কর ভাল লাগে না। ভাবে যদি ইন্দ্রাণীকে পেত কাছে।
কিন্তু সেটা সম্ভব না। ইন্দ্রাণী সে ঝুঁকি নেবে না।
বাইরে হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
অর্ক নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়ল।
তখন মাঝরাত।
ইন্দ্রাণী বলে---"জিজু এবার ঘুমিয়ে পড়। আমি যাই।" -
"আমার এখন ঘুম আসবে না। তবে তোমার ঘুম পেলে শুয়ে পড় গিয়ে।"
----"ঘুম আসবে না কেন?
বৌয়ের চিন্তায়?"
----"চিন্তার তো কিছু নেই।" ----
"নেইই তো। তবে মিস করছ তো। তুমি তো আবার বৌ-পাগলা।"
----"তবে কি শালি পাগলা হব? "
কথাটা মুখ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে যেতেই জিজু লজ্জায় পড়ে।
সামলাতে গিয়ে বলে---
"না মানে----।"
-----"কি আবার মানে মানে করছ? দেখ জিজু যা বলেছ বলেছ। দিদির সামনে ভুলেও অমন কথা উচ্চারণ কোরো না।" ----"কি হবে করলে?
আমি তো মজা করেছি মাত্র। শালির সাথে ওটুকু মজা করাই যায়।" ----"ওটুকু কেন আরো বেশি কিছুও করা যায়। আমি তা নিয়ে কিছু বলিনি। তবে তোমার বউ শুনলে তোমাকে ত্যাজ্যস্বামী করবে সেকথা নিশ্চিত।" ----
"অসম্ভব। তোমার দিদির আমাতে আস্থা আছে। বিশ্বাসই করবে না।" ----"তাহলে আর কি? বিশ্বাসের সুযোগে যা খুশি করে যাও।"
----"পেলে কি করবে?"
----"আগে পাই তো তখন দেখা যাবে।"
----"অত সহজ না। বুকের পাটা লাগে।"
----"দেখবে তাহলে?" ----
"মুখে যত বড় বড় বুলি তোমার।"
পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক সময় দারুণ প্রভাব ফেলে মনে।গভীর রাত, বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি, এক ঘরে যৌবনবতী অনাঘ্রাতা ( জিজু মানে অর্নব তাই জানে)
শালির সাথে কয়েক মাসের উপোসী জিজু, এতক্ষণের তাৎপর্যপূর্ণ কথাবার্তা,
সব মিলে মন আন্দলিত করে।
শালিকে রেখে জিজু ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ভাল করে দেখে নেয় অর্ক অঘোরে ঘুমাচ্ছে। কোনো সমস্যা কোথাও নেই।
জিজু বেরোতেই ইন্দ্রাণী ভাবে দিদির উপর প্রতিশোধ নিয়ে অর্ককে পুরোপুরি নিজের করে পাওয়ার
ব্যবস্থা কি হবে? একবার মনে হয় সে কি ঠিক করছে?
নিজেই নিজেকে বোঝায় "nothing is unfair in love and war."
আর দ্রৌপদী তো পাঁচ ভাইকে স্বামী হিসেবে পেয়েছিল।
সমাজের কাছে সে কি অচ্ছুত ছিল?
তাহলে?
একটাই সমস্যা অর্ক যদি জানতে পারে?
সে তো আর মহাভারতের চরিত্র নয়।
তারপর মনে হয় তার না জানিলেই তো হল।
নিজের লক্ষ্য তাকে পূরণ করতেই হবে।
না হলে পরাজয়ের গ্লানি তাকে সারাজীবন দগ্ধ করবে। অপেক্ষা শুধু জিজুর ফিরে আসার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন