Breaking

বৃহস্পতিবার, মে ১৬

সম্পর্ক - ( দ্বিতীয় পর্ব )

 



সম্পর্ক

( দ্বিতীয় পর্ব )

লেখকঃ- Motiur Miazi


আনিকা সত্যি করে বলো, রিফাতের সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক ?


আজকের রাতটি তাদের বাসর রাত। এই রাতটিতে দু'জন দু'জনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। দু'জনার মাঝে রিফাত আসলো কোথা থেকে ? আনিকা কিছুই বুঝতে পারছে না! আনিকা প্রথম বারের মতো তুহিনের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো। তুহিনের চোখে একই সাথে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস খেলা করছে।সে আনিকার জবাব শুনার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।


আনিকা দৃষ্টি আরো কঠিন করে বললো, রিফাতটা কে ? আপনিই বলেন আমি রিফাতকে চিনবো কিভাবে ?


আমি কিভাবে বলবো রিফাত কে ? অথবা তাকে চিনবে কিভাবে ? বলার তো কথা তোমার। নামটি যদি অপরিচিত হয়, তাহলে তোমার সম্পর্কে এতো কিছু কিভাবে জানে ?


তুহিনের কথা শুনে আনিকা বিস্মিত হলো। আনিকা বিস্ময় ঢেকে রাখার কোন চেষ্টা না করে ভিভ্রান্তির স্বরে বললো, খোঁজ নিয়ে দেখেন রিফাত নামের লোকটি পরিচিত কেউ কিনা ? আর আমার সম্পর্কে কি এমন বলছে যার জন্য আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন ?


রিফাত নামে পরিচয় দেওয়া ছেলেটি ফোন দিয়ে তুহিনকে যা কিছু বলেছিল, তুহিন আনিকার কাছে হুবহুব বর্ননা দিলো। পাশের রুমটি তুহিনের বড় বোন তাহমিনার। তাহমিনার বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর হয়েছে। বিয়ের পর রুমটি খালি থাকে। তাহমিনার শ্বশুর বাড়ি দূরে হওয়ায় কোন বিশেষ প্রোগ্রাম ছাড়া বাবার বাড়িতে আসে না। আসলে খালি রুমটিতে থাকেন। তুহিনের বিয়ে, ভাইয়ের বিয়ের প্রোগ্রাম পৃথিবীর সকল বোনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাহমিনা বিয়ের দু'দিন আগেই চলে এসেছে। সারাদিনের ব্যস্ততায় ক্লান্ত হয়ে পাশের রুমে শুয়ে ছিল। তুহিন আর আনিকার কথা কাটাকাটির শব্দ শুনে শুয়া থেকে উঠে এসে তুহিনের রুমে ডুকলো।



হঠাৎ বোনকে দেখে তুহিন আমতা আমতা করে বললো, আপু তুমি ঘুমিয়ে যাওনি ?


তদের কথার শব্দ শুনে কি ঘুমানো যায়! সারাদিন কতো রকম পেরেশানিতে ছিলি, এখন তারাতারি ঘুমিয়ে যাবি, তা না উল্টো দু'জনে ঝগড়া করছিস!


তুহিন ক্ষীণ গলায় বললো, কই ? ঝগড়া করছি নাতো। এমনিতেই...


তাহমিনা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, এমনিতে কি ?


তুহিন হাত বাড়িয়ে মোবাইলটি বোনের কাছে দিলো। তাহমিনা বললো, আমি মোবাইল দিয়ে কি করবো ? তাহমিনাকে কিছুই করতে হলো না। তুহিন কল লিষ্টের নাম্বারটি দেখিয়ে অপরিচিত নাম্বারে আসা ফোনটির ব্যাপারে বোনকে বলতেই তাহমিনা বললো, বাড়িতে এতো মেহমান, সবাই জানলে ব্যাপারটা কোন পর্যায়ে যাবে বুঝতে পারছিস ?



জানি না আপু! আমার কি করা উচিত সত্যিই বুঝতে পারছি না! তুহিন এবার গলা নামিয়ে চুপ হয়ে গেলো। তাহমিনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, একটা সম্পর্কের শুরু এবং শেষ দু'টারই মূল ভিত্তি বিশ্বাস। তুই সঠিক প্রমান পাওয়ার আগে মেয়েটাকে অবিশ্বাস করছিস কেন ? সঠিক প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত তরে অব্যশই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হবে, বিশ্বাস নিয়েই টিকিয়ে রাখতে হবে। আনিকা এমন ধরণের মেয়ে হতে পারে এটা আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না। ঠিক আছে তুই এখন বারান্দায় যা, আমি আনিকার সাথে কথা বলে দেখছি...



তুহিন বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। তাহমিনা আনিকার সাথে কি কথা বলছে সে স্পষ্ট শুনতে পারছে না। তবে তার মনে সামান্য স্বস্তি ফিরে এসেছে। তুহিন মোবাইলটির ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে ভাবলো, নাম্বারটিতে ফোন দিয়ে রিফাত নামের লোকটির সাথে কথা বললে কেমন হবে ? আনিকাকে সে কিভাবে চিনে জানতে চাইলে বলবে তো ? অব্যশই বলবে, বলা উচিত, কেন বলবে না ?



আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তুহিন পর পর পাঁচ বার ট্রাই করলো, প্রতিবারই এই কথাটি শুনতে হলো। যেই মানুষটি নিজের নাম বলে দিয়েছে, সে ফোন বন্ধ করে রেখেছে কেন ? নাম বলে দেওয়া মানুষটি নাম্বার বন্ধ করে নিজকে লুকাতে চাইছে নাতো ? নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে নামটি না বললেই পারতো ? লোকটি কি তাহলে আমার নিজেরই পরিচিত কেউ ? কে হতে পারে ? আশিককে ফোন দিয়ে দেখি নাম্বারটি চিনতে পারে কিনা।



আশিক তুহিনের কাছের কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে একজন। তুহিনের যে কোন সমস্যায় সবার আগে আশিককে জানায়। তুহিন আগে কখনো এই ধরণের সমন্যার মুখমুখি হয়নি, সে বুঝতে পারছে না আশিকের কাছে পুরো ব্যাপারটি শেয়ার করা উচিত কিনা। আশিককে ফোন দেওয়া হলো।



কিরে দোস্ত, আজকের রাতে আমাকে ফোন। ভাবীকে সময় না দিয়ে আমাকে সময় দিতে বলেছে কে ?

আশিকের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে তুহিন বললো, একটা বিশাল জামেলা হয়ে গেছে।

আশিক বিষণ্ণ গলায় বললো, কি জামেলা ?

একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল। ফোন দিয়ে আনিকার নামে অদ্ভুত সব কথা বার্তা বললো। তুই কি একটু দেখবি নাম্বারটা আমাদের পরিচিত কারো কিনা ?

আশিক বললো, নম্বরটি আমাদের পরিচিত কারো না হয়ে, আনিকার পরিচিত ও তো হতে পারে! তুই কিভাবে ধারণা করছিস আমাদের কারো হবে ?

তুহিন দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললো, লোকটি আমার পরিচিত হলে ও হতে পারে, কারণ আনিকার পরিচিত হলে আমার ফোন নাম্বার পাওয়ার কথা নয়! ঠিক আছে নম্বরটি দে আমি দেখছি, বলেই আশিক ফোনটি কেটে দিলো।


তুহিন একবার বারান্দার এদিক যাচ্ছে, আবার এদিক থেকে ওইদিকে যাচ্ছে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। তার ভেতরে অস্বস্তি শুরু হয়ে গেছে, এই অস্বস্তির কারণ কি ? অপরিচিত একজন মানুষের ফোন পেয়ে আনিকার সাথে বাজে আচরণ করায়, নাকি অন্য কোন কারণে ?


ভেতর থেকে কান্নার শব্দ আসছে। তুহিন বারান্দা থেকে রুমে আসলো। তাহমিনা আনিকার পাশে খাটে বসে আছে। তুহিন আনিকার দিকে তাকালো। আনিকার চোখ বেয়ে পানি পরছে। তুহিন সামান্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছে। আনিকার পাশে বসে বলতে ইচ্ছে করছে, আনিকা কাঁদবে না প্লিজ। তোমার চোখের পানি আমার হৃদয়ের যন্ত্রনা বহুগুনে বাড়িয়ে দিচ্ছে।


মানুষের জীবনটা কারো চোখে অনেক বড়, কারো চোখে ছোট, ক্ষুদ্র বালিকনার মতো। এই পার্থক্যেটি তৈরি হয় জীবনের ইচ্ছেগুলোর পূর্নতার উপর। জীবনে কোন ইচ্ছেই অপূর্ন থাকুক এটা কেউ চায় না। তবে চলার পথে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন ইচ্ছেগুলোকে আটকে রাখতে হয়। তুহিনের ইচ্ছে থাকা সত্বে ও আনিকার পাশে গিয়ে বসলো না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বারান্দার দিকে পা বাঁড়াতেই আশিকের ফোন আসলো।



তুহিন ফোনটি রিসিভ করে আগ্রহ নিয়ে বললো, কি হলো আশিক, কিছু জানতে পেরেছিস।


ওদিকে হতাশার সুর। আশিক হতাশ গলায় বললো, ফোন নাম্বারটি বন্ধ! কোন ভাবেই ফোন ডুকাতে পারছি না! ফেইসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপ কোথাও সার্স দিয়ে এই নাম্বার দিয়ে খোলা নাম, ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছি না!


তুহিন শীতল গলায় বললো, আমাদের পরিচিত সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছিস ?

হুম, নম্বরটি কেউ চিনতে পারছে না! আর তুহিন শুন ?

তুহিন বললো, শুনছি বল ?

নম্বরটা বের করা কি খুব প্রয়োজন ? তুহিন বললো, হুম, এর মাঝে নির্ভর করছে একটি সম্পর্কের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভালবাসা মেশানো হিসেব। বের করার আর কি কোন উপায় নেই ?

আশিক ক্ষীণ স্বরে বললো, আছে। এই নম্বরটি কার ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে রেজিষ্টেশন করা তা বের করলেই খুব সহজে ফোন দেওয়া মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে আগে থানা থেকে একটি অভিযোগ পত্রের পেপার বের করতে হবে।

তুহিন বারান্দা থেকে রুমে এসে আপুকে বললো, আপু আনিকাকে কাঁদতে না করো। আপু সত্যি বলছি আজকের রাতটিতে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে ভাবতে ও পারিনি! তাহমিনা আনিকাকে সান্তনা দিয়ে কান্না থামালে ও তুহিনের অস্বস্তি থামেনি।



তুহিন আনিকাকে বললো, অপরিচিত নম্বরে আসা ফোনটির ব্যাপারে বাড়ির কাউকে ততোক্ষণ জানাবো না, যতোক্ষণ ফোন দেওয়া মানুষটিকে খুঁজে বের না করতে পারি। আনিকা আমার মন বলছে রিফাত নামে পরিচয় দেওয়া মানুষটির সবগুলো কথা মিথ্যা ছিল, আমার মন কখনো মিথ্যা বলে না। তোমাকে প্রমিজ করছি আগামীকাল সকালেই ফোন দেওয়া নম্বরটির মানুষটাকে খুঁজে বের করে ফেলবো।


বসন্তকালে বাতাস ছাড়া পুরো দিনটিকে প্রাণহীন মনে হয়। আজকের দিনটি ব্যতিক্রমী, সকাল থেকেই বাতাস শুরু হয়েছে। রাতে আনিকার সাথে তাহমিনা ঘুমিয়েছিল। তুহিন তাহমিনার রুমে ছিল। অন্যান্য দিন তুহিনের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়, আজকে হয়নি।



সকাল সাতটা বাজতেই ঘুম থেকে উঠে গেল। বাসার সবাই ঘুমিয়ে আছে, তাই তুহিন কাউকে না জানিয়ে সোজা আশিকের বাসায় চলে আসলো। আশিক এতো সকাল সকাল তুহিনকে তার বাসায় দেখে বুঝতে পারলো পুরো ব্যাপারটি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আশিক দেরি না করে তুহিনকে নিয়ে থানায় আসলো।


পুরো ব্যাপারটি ওসিকে বুঝাতে অনেক্ষণ দেরি হলো। তবে যখন ওসি ঠিকভাবে বুঝতে পারলো, বুঝার পর নম্বরটির ডিটেইলস বের করার অনুমোদন পেপার দিতে দেরি করলো না।



তুহিন আশিককে নিয়ে সিমের কাষ্টমার পয়েন্টে আসলো। তুহিন কাষ্টমার পয়েন্টে পেপারটি সাবমিট করে বিস্মিত হয়ে গেল। তুহিন দেখলো - রিফাত পরিচয় দেওয়া অপরিচিত নম্বরটির সিম থেকে ভোটার আইডি কার্ডের রেজিষ্টেশন ডিএক্টিভ করে দেয়া হয়েছে! আশিক থমথমে স্বরে বললো, রিফাত পরিচয় দিয়ে যে মানুষটি তরে ফোন দিয়েছে, সে পুরো কাজটি পরিকল্পিতভাবে করেছে। নয়তো রেজিষ্টেশন ডিএক্টিভ করে দেওয়ার কথা নয়! কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে কারো জীবনের ক্ষতি করতে চায়, তাহলে সেই ক্ষতি থেকে কি বাঁচার কোন উপায় আছে ?



তুহিন আত্নবিশ্বাসী গলায় বললো, উপায় একটি আছে। উপায়টি কাজে লাগাতেই হবে, যদি কাজে লাগিয়ে সত্যিটা বের করতে পারি তাহলে দীর্ঘস্থায়ী হবে বিশ্বাস আর ভালবাসায় পরিপূর্ন একটি সম্পর্কের...........

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন