জিজু ফিরল। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে দিয়ে ইন্দ্রাণীর মুখোমুখি দাঁড়ল। খোলা জানলা দিয়ে ঢোকা আবছা আলোয় ইন্দ্রাণী
দেখে জিজুর চোখে লালসার ছায়া।
তাতে অবশ্য একটুও ঘাবড়ায় না সে।
নিজেকে সে ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করে নিয়েছে।নানা ভাবনার শেষে লক্ষ্য আর কর্তব্য স্থির করে ফেলেছে।
জিজু তার দুই কাঁধ শক্ত করে ধরে বলে---" কি সুন্দর লাগছে তোমাকে! দিদির থেকে অনেক বেশি সুন্দরী তুমি।"
----"সব পুরুষই নিজের বৌয়ের থেকে অন্য মেয়েকে সুন্দর দেখে। এ আর নতুন কি?"
----"বিশ্বাস কর----।"
-----"করেছি তো। তবে ঘর অন্ধকার বলেই আরও সুন্দর দেখছ বোধহয়।" -----
"নাগো, আমি অনেকদিন তোমাকে নিয়ে ভেবেছি। বলতে পারিনি।" -----"এরকম অন্ধকারে বৌকে আদর করতে করতে ভেবেছ বুঝি?"
-----"তা বলতে পার।" -----
"তার মানে আমাকে ভেবে বৌকে আদর করেছ?"
-----"অনেকবার।"
-----"ভাগ্যিস অন্ধকার ছিল। বৌ বুঝতে পারেনি।"
-----"খুব দুষ্টু তুমি।"
-----"নইলে কি আর তোমার ভালো লাগত?" -----
"আচ্ছা একটা কথা বলতো জিজু।"
-----"কি?" -----
"আমার কোন জিনিসটা তোমার সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে?" -----
"ওভাবে আলাদা করে বলা যায় নাকি? তোমার সব, সবকিছু সুন্দর লাগে।" ---
বলতে বলতে জিজু খাটে বসে তাকে টেনে নিয়ে কোলের উপর বসিয়ে গালে গাল ঘষতে শুরু করে।ইন্দ্রাণী এক হাতে তার গলা জড়িয়ে অভিমানের সুরে বলে---
" থাক, কিছু বলতে হবে না। মিথ্যেবাদী একটা।"
একটা অন্তরঙ্গ মুহূর্তে এসব ফালতু গল্প একদম ভালো লাগছিল না জিজুর। শরীরে জ্বালা আর মনে লালসার আগুন লকলক করে জ্বলছে। মিলনের মধুসুধা পানের জন্য সে আকুল। তার উষ্ণতার ছোঁয়ায় শালি কোথায় ব্যকুল হয়ে উঠবে তা না ভাট বকছে।
গালি আসে মুখে কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় সুযোগ হাতছাড়া হবার ভয়ে।
মনে মনে বলে-
---"আগে সব দেখি তারপর বলব সবচেয়ে সুন্দর কি।"
মুখে বলে
---" মিথ্যে কি বললাম?
তোমার চোখ মায়াবি, ঠোঁটদুটো দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।"
----"দিদির থেকে বেশি ইচ্ছে করে আমার ঠোঁট খেতে?" ----
"করে বলছি তো।"
-----"আর?"
-----"দেখতে দেখতে বলি।" -----
"বেশতো, দেখতে দেখতেই বল।"
জিজুর হাত তাকে আরও শক্ত করে জাপ্টে ধরে।
গলায় জিভ বুলিয়ে দিতে দিতে হাত যায় বক্ষদেশে।
ইন্দ্রাণী বলে----"আমার সব আজ তোমার। যেমন ইচ্ছে গ্রহণ কর। ভাল লাগছে তো?" -----"খুব, খুব ভাল লাগছে।"
---বলতে বলতে হাত ইন্দ্রাণীর ব্লাউজের ভিতর প্রবেশ করে। -----
"একি? এমন শক্ত কি এটা?"
---জিজুর বিস্মিত প্রশ্নের উত্তরে ইন্দ্রাণী স্বাভাবিক গলায় বলে -----
"আমার মোবাইলটা। প্রমাণ রাখতে হবে তো।"
জিজু ছিটকে সরে যায়। কঠিন স্বরে বলে ওঠে
---- "তুমি সব মোবাইলে রেকর্ডিং করছিলে?" -----
"হ্যাঁ তো। দিদিকে মুখে বললে বিশ্বাস করবে না। তোমাদের ডিভোর্সটা হবে না। তাহলে কি করে আমাদের বিয়েটা হবে?"
-----"বিয়ের কথা কোথা থেকে এল?" -----
"বারে এরপর বিয়ে না হলে আমার কি হবে?" -----
"সে তুমি জান। আমি কি বিয়ে করব বলেছি?"
-----"তা বললে তো হবে না। গায়ে হাত দিলে, কোলে বসিয়ে এতকিছু বললে, এরপর কি আমি আর অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব?" -----
"কেন পারবে না?
এমন কিছু হয়নি। আমার ছেলেটার কথা ভাব।"
-----"তুমি আমার কথা ভাব।"
জিজু অগত্যা মোবাইল কেড়ে নিতে যায়।
ধস্তাধস্তিতে ইন্দ্রাণীর পোশাক ছিঁড়ে যায়।
সবকিছু অবিন্যস্ত।
শক্তিতে না পেরে ইন্দ্রাণী বলে---" এবার চিৎকার করব, ভাল হবে তো?"
তাকে ছেড়ে দেয় জিজু। কাকুতি-মিনতি করে।
ইন্দ্রাণীর এক কথা এ বাড়ির বৌ করতে হবে তাকে।
জিজু ভেঙে পড়ে। লালসার বদলে তার চোখে জল।
ইন্দ্রাণী বলে---"সব কিছু থেকে তোমাকে রেহাই দিতে পারি জিজু। আমি সব ভুলে যাব। তুমি এ বাড়ির বৌ করতে পার যদি আমাকে।"
জিজুর মাথায় হঠাৎ বুদ্ধি খেলে যায়। আসলে ডুবন্ত মানুষের মতো খড়কুটোর সন্ধান করতে করতে রাস্তা পায় যেন।
বলে----"অর্ককে বিয়ে করবে?"
-----"সে রাজি হবে কেন?" -----
"সে সব দায়িত্ব আমার। তুমি আপত্তি কোরো না।"
-----"মনে রেখ কথাটা। রেকর্ডিংটা আমার কাছে যত্নে থাকবে।"
ইন্দ্রাণী ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই জিজু দরজা বন্ধ করল।ইন্দ্রাণী নিজের ঘরে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিল।
জয়ের আনন্দে সে উচ্ছ্বসিত।
একা এ আনন্দ উপভোগ করতে ভাল লাগে না।
আরেকজনের সাথে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করে।
ঘড়িতে দেখে রাত দুটো বেজে দশ।
এখনো ঘন্টা তিনেকের আগে সকাল হবে না।
নিজের ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে সে গিয়ে দাঁড়ায় অর্কর ঘরের সামনে।
বন্ধ দরজায় আস্তে আস্তে টোকা দেয়। তারপর ভাবে অর্ক ঘুমাচ্ছে, শুনতে পাবে না।
বেশি জোরে শব্দ করে ডাকা ঠিক হবে না।
ঘরে যাবে বলে ঘুরতে যাচ্ছে এমন সময় দরজা খুলে যায়।
ইন্দ্রাণী ঝাঁপিয়ে পড়ে অর্কর বুকে।
চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে থাকে তার সারা মুখ।
তাকে ছাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে অর্ক।
বিছানায় গিয়ে বসে। ইন্দ্রাণী জিগ্যেস করে---"ঘুমাও নি তুমি?" -----
"না।"
-----"ঘুম আসতে চায় না। তুমি ঘুমাও নি? এতোক্ষণ গল্প করছিলে নাকি ?" -----
"নাগো, ঘরে গিয়ে আমারো ঘুম আসছিল না।"
-----"কেন?"
-----"যে কারণে তোমার ঘুম আসতে চায় না সেটাই হয়তো।" -----"তা কি করে হবে? তুমি তো আমাকে ভুলেই -----"খুব অভিমান তাই না? বোঝ না আমার অবস্থা? চাইলেই কি আসতে পারি গো?"
-----"এখন যে এলে?"
-----"মনে হল এখন বিপদ নেই।" -----
"কিন্তু তোমার জিজু আছে তো বাড়িতে।" -----
"থাক, আমি তোমার কাছেই থাকব এখন যা হয় হবে।"
ইন্দ্রাণী বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
অর্ক বলে--- "সাহস বেড়ে গেছে দেখছি। জিজুকে ম্যানেজ করেছ নাকি?" -----"বয়ে গেছে আমার ম্যানেজ করতে।" -----"যদি তোমার জিজু জেনে বাবাকে কিছু বলে তাহলে বাবার ধারনা খারাপ হবে কিন্তু।" -----"ধূর ভাল্লাগে না। একটা ভীতুকে কেন যে ভালবাসলাম?"
ইন্দ্রাণী রেগেমেগে উঠে বেরিয়ে যেতে গেল। অর্ক হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিতেই সে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল অর্কর কোলের উপর। অর্ক আদরে সোহাগে তাকে ভরিয়ে দিতে লাগল। ইন্দ্রাণী সুখে সাগরে ভেসে যেতে যেতে ভাবতে লাগল সে বৌয়ের পূর্ণ মর্যাদা পেয়েছে। আর কোনো সমস্যা নেই। কাঙ্ক্ষিত ভালবাসার মানুষের কাছে আসতে তাকে আর ভাবতে হবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন