শুক্রবার, নভেম্বর ২৪

অসমাপ্ত গল্প







আমাকে এত রাতে এখানে নিয়ে আসার মানে কি রপ্তদা ? 
 আমার কথাটা একটু শোন বিধি। 

 শোনার মতো কিছু বাকি আছে কি আদৌ ! সবকিছুই তো শেষ হয়ে গেছে। 

 এখনো সময় আছে বিধি, আমি সবটা সামলে নেবো। তুই আমার পাশে থাক শুধু। 

 পাশে থাকার দায়িত্ব বুঝি আমার একার রপ্ত দা! 
সেদিন যখন তোমার লেখা বেনামী চিঠিটা পেয়ে বাবা আমার গায়ে হাত তুলে ছিলো, তুমি ছিলে আমার পাশে! যেদিন বাবাকে চিঠি যে পাঠিয়েছে তার আসল পরিচয় বলতে চেয়েছিলাম, তুমি সেদিনও আমার পাশে ছিলে না বরং আমার উপর রাগ দেখিয়ে ছিলে। 

 তুই ... তুই তো জানিস বিধি তখন আমার কি অবস্থা ছিলো, আমি রোজগার পর্যন্ত করতাম না। আর আমি বাবা মাকে বলতামই বা কি করে যে আমি আমারই দূর সম্পর্কের পিসির মেয়েকে ... 

সেটাই তো আমিও বলছি। 
তুমি আমার দাদা হও হিসাব মতো তাই আমাদের মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক থাকার জায়গা নেই। সেদিন যখন সাহস পাওনি, দয়া করে আজকে আর সাহস দেখাতে এসো না। 


আমি তোকে ভালবাসি বিধি। বিশ্বাস কর তুই। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না। 

 ভালো আমিও বেসেছিলাম তোমাকে, বিশ্বাস করেছিলাম নিজের থেকে বেশি। 
কিন্তু কি জানো বিশ্বাস হলো অনেকটা কাঁচের মতো একবার ভাঙলে হয়তো আবার জোড়া লাগে কিন্তু ওই জোড়ার দাগগুলো বিশ্বাসের ভিতেটা দুর্বল করে দেয়। 
আর ওই দুর্বল ভিতে নিজের ভালোবাসার প্রাসাদ গড়তে আমি পারবো না। আমায় এবার যেতে দাও। 


 সব মিথ্যে হয়ে গেলো বিধি! আমাদের এতদিনের সম্পর্ক মিথ্যে! ভিক্টোরিয়া মিথ্যে! নন্দন মিথ্যে! পুজোয় ঠাকুর দেখা থেকে শুরু করে বসন্ত উৎসবের রং, সবটা মিথ্যে হয়ে গেলো! 

 কোনো কিছুই মিথ্যে হয়ে যায় না রপ্ত দা, সবটা রয়ে যায় মনের মধ্যে। 
তোমার মনে আছে যেদিন প্রথম আমায় কাঠগোলাপ দিয়ে প্রেম নিবেদন করেছিলে, সেদিন সমাজের কথা বাড়ির সকলের কথা ভেবে আমি তোমায় না বলে দিতে চেয়েছিলাম, সেদিন তুমি বলে ছিলে সবটা সামলে নেবে। সেদিন তোমার দেওয়া কথাটা সত্যি মেনে নিজেকে আবেগের জোয়ারে ভাসিয়ে ছিলাম। সেইটা হয়তো আমার করা সবথেকে বড়ো ভুল ছিল। 


তুই আর একবার আমার কথাটা ভেবে দেখ বিধি। আমরা এসব ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো। আর কোনো বাধা মানব না আমি।

 তোমার মানা না মানাতে আমার আর কিচ্ছু এসে যায় না। যাকে বিপদের দিনে পাশে পাইনি, বাকিটা জীবন তাকে পাশে নিয়ে চলার ভুল আমি করতে চাই না। 

বিধি আমায় একটা সুযোগ দে, প্লিজ বিধি! 

 একটু পরেই আমার আশীর্বাদ রপ্ত দা। পারলে আমাকে ভুলে যেও। 

 তুই পারবি সবটা ভুলতে ? প্রথম প্রেম তো, ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। ভুলতে পারবো না হয়তো।

 তাহলে কেনো ... কেনো আমায় ছেড়ে যাচ্ছিস! 

 মায়া কেটে গেছে রপ্ত দা, সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে গেছে। যেদিন তোমার মুখে শুনেছিলাম এই নিষিদ্ধ সম্পর্কের স্বীকৃতি দেওয়ার সাহস তোমার নেই, সেই দিনই সবটা শেষ হয়ে গেছে। তুমি নিজের হাতে সবটা শেষ করেছো। 


 তাহলেই এটাই তোর শেষ সিদ্ধান্ত! 

হ্যাঁ। তবে তাই হোক। 
নিজের একপাক্ষিক মতামতটাকে ভরসা করে তুই ভালো থাক, সুখে থাক। 

 আমার একটা অনুরোধ আছে, বলতে পারো শেষ অনুরোধ। 

তোর অনুরোধগুলো সারাজীবন রাখতে চেয়েছিলাম। সেই সুযোগটা যখন দিলি না, তখন তোর অনুরোধ আমি রাখব। বল কি দরকার। 


 শেষবারের মতো তোমার নিশ্বাসে আমার নিশ্বাস মিলিয়ে দাও। শেষবারের মতো আঁকড়ে ধরো।


 শেষবারের মতো নাহয়... কথাটা শেষ হতে দিল না রপ্ত।

 বিধির ঠোঁটে নেমে এলো রপ্তর ঠোঁট, আঁকড়ে ধরলো দুজন দুজনকে। 


পারিবারিক অশান্তি, চাকরির অস্থিতিশীল অবস্থা আর কিছু না বলা কথার ভার বইতে না পেরে অসমাপ্ত রয়ে গেলো একটা গল্প।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন