Breaking

সোমবার, ডিসেম্বর ৪

প্রথম রাত




সানাইয়ের শব্দ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো।সুজয় ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে মিথিলা একবার তার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় আবার মাথা নামিয়ে নিলো।

মিথিলার কাছে সেই ঘর একদম নতুন,মানুষটা নতুন।তাই তার মনের মধ্যে নানা রকম আশঙ্কা বাসা বাধতে লাগলো যে এই, নতুন মানুষটা কেমন হবে,সে তার মনের কথা বুঝবে কি না-ইত্যাদি ইত্যাদি।

মিথিলা এসব ভাবছে এমন সময় সুজয় তার সামনে এসে বসলো।মিথিলার হৃৎপিণ্ডটা তখন উৎকণ্ঠায় নড়ে চড়ে উঠলো।সুজয় মিথিলার অস্থিরতা লক্ষ্য করে খানিক কিন্তু গলাতেই তাকে মৃদু সুরে বলল-'কিছু কি অসুবিধা হচ্ছে তোমার এখানে?'

মিথিলা নদীর মত শান্ত গলায় উত্তর দিলো-'না,না,ঠিক আছি।' 

সুজয় আবার বলল-'দেখো,আমায় তোমার বন্ধুর মত ভাবতে পারো।আর যা বলতে ইচ্ছে হয় বলবে।'

-'আচ্ছা,ঠিক আছে।'মাথা নীচু করেই জবাব দিলো মিথিলা।

-'আচ্ছা,তোমার বাড়ির জন্য মন কেমন করছে না?'-'মায়ের জন্য একটু মন কেমন করছে।'-


'এখন কথা বলবে একবার মায়ের সঙ্গে?' 

-'না।মা হয়তো ঘুমিয়েছে।এখন থাক।' 

-'আচ্ছা বেশ।অষ্টমঙ্গলার পর গিয়ে তুমি যত দিন চাও থেকে আসবে ওবাড়িতে।'


মিথিলা শুধু ঘাড় নেড়ে সম্মতির সুরে বলল- 'হুম।'

কিছুক্ষন কেউ আর কিছু বলল না।এদিকে রাতও হয়েছে।ঘুমও পাচ্ছে দুজনের।কিন্তু দুজনেরই পাশাপাশি এক বিছানায় শুতে একটা কিন্তু বোধ হচ্ছিলো।তাই সুজয়ই মিথিলাকে প্রশ্ন করলো -'আমি কী এখানেই শোবো? নাকি..।'

-'এখানেই শোন না।অসুবিধে নেই।আমরা তো এখন স্বামী স্ত্রী..।' 

সুজয় তখন একটু হেসে বলল- 'আমার কিন্তু একটু অসুবিধে আছে।' 

মিথিলা সুজয়ের অসুবিধার কথা জানতে পেরে জিজ্ঞেস করলো -'তবে কী আমি..।' 

সুজয় বলল- 'আমাকে আপনি বলাটা ছাড়তে হবে আগে।'

-'আচ্ছা বেশ।' 

সুজয় এবার অন্য একটা কথা জিজ্ঞেস করলো-'তোমার কী আগে কোনো প্রেম ছিলো?মানে বন্ধু ভাবলে বলতে পারো।'

সে বলল-'না না।তবে একটা সত্যি কথা বলছি কিছু মনে করবে না,আসলে আমার না সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়।ক'দিন যদি একটু...মানে অভ্যেস করে নেবো।'

সুজয় ফের হাসতে হাসতে বলল -'ও এই কথা...।ঠিক আছে,অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই তোমার শ্বাশুড়ি মা মানে আমার মা কিছু বলবেন না।তোমার সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যাবে মনে হচ্ছে আমার।'

মিথিলা বলল-'আর একটা কথা বলার ছিলো তোমায়।-'হ্যাঁ,কি কথা বলোনা...' 

সাহস পেয়ে মিথিলা বললো-'তুমি তো জানো আমি ও বাড়িতে নাচ শেখাতাম। আমার মা বলে দিয়েছে ওখানে গিয়ে আর এসব না করতে..কিন্তু আমি না ছাড়তে পারবো না..'

 মিথিলার কথার মাঝেই সুজয় বলে উঠলো-'কে ছাড়তে বলেছে তোমায়...'..-

'না যদি তোমাদের বাড়ির কেউ কিছু মনে করেন...' 

-'কেউ কিচ্ছু মনে করবে না।আর কিছু মনে করলেও আমি আছি তো...' 

-'সত্যি বলছো?' সুজয়ের মুখে শেষ কথা গুলো শুনে মিথিলা যেন আনন্দে চেঁচিয়ে উঠেছিলো...

আর শুধু চেঁচিয়েই ওঠেনি তো,সাথে সুজয়ের হাতটাকেও সে নিজের অজান্তে আঁকড়ে ধরেছিলো।

সুজয়ের বুকের ভেতরটা যেন মিথিলার স্পর্শে আর ঠোঁটের হাসিতে কেমন করে উঠলো।

মিথিলা ফের বললো-'তুমি ভীষন ভালো মানুষ সুজয়..' মিথিলার ওই টুকু কথায় সুজয়ের মন ভরে গেলো।

সেও মিথিলাকে বললো-'তুমিও ভীষন মিষ্টি একটা মেয়ে।তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করাই যায়...'

 মিথিলার অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটা তখন সাধারন।মাত্র কিছুক্ষনের জন্য হলেও সে সুজয়কে সামনে থেকে যতটুকু চিনেছে তাতে তার এটাই মনে হয়েছে 
-
ছেলেটা তাকে আগলে রাখবে।...তার সব স্বপ্ন পূরন করবে...

-'বলছি একটা কথা বলবো..?

-'হ্যাঁ বলোনা...'

-না থাক..'

-'আরে বলোই না...'

-'আমার একেবারে পাশটাতে শুয়ো..অন্ধকারে আমার ভয় হয়..'

-'তাহলে কী নাইট ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেবো?'

-'না..'

-'ভয় করবে না তোমার..?'

মিথিলা খানিক চুপ থেকে তারপর বললো-

-'তুমি আছো তো..ভয় কীসের..."

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন