Breaking

বুধবার, ডিসেম্বর ৬

মন বলছে





পৌনে নটা বাজবো বাজবো করছে তখন।শক্তিগড় পৌছেই বাসটা থামলো।প্রতিদিনের মতই মিনিট পনেরোর মত বাস টা দাঁড়ায় এখানে।প্যাসেঞ্জারদের যাদের যাদের খাওয়ার প্রয়োজন তারা রাতের খাবার খেয়ে বা সাথে নিয়ে নেয় আর নতুন প্যাসেঞ্জারও কিছু আসে স্টেশন থেকে।স্টেশন থেকে যারা আসে তাদের বেশিরভাগটাই অফিসকর্মী।

বাসের মধ্যে থেকে হঠাৎই নেমে এলো পিউ।তার একটা জলের বোতল আর টুকিটাকি কিছু খাবার নেওয়ার আছে।তাই সে বাস থেকে নেমে যখন সামনের একটা দোকানের দিকে এগিয়ে গেলো তখন আশেপাশের লোকজন হাঁ করে তার দিকেতে তাকিয়েই রইলো।

কী ব্যাপার? সবাই এমন করে পিউর দিকে তাকাচ্ছে কেন? 

কৌতুহল লাগছে না ব্যাপারটা।বলছি।


হয়েছে কী পিউর পরনে নতুন বেনারসি শাড়ি ও মোটামুটি গা ভর্তি গহনা।পায়ে আলতা।শুধু কপালের সিঁথিতে সিঁদুর ওঠেনি।তাই তাকে অমন অবস্থায় দেখে সকলেরই কৌতুহল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না আশা করি।

সে বিষয়টা প্রথম লক্ষ্য করলো যখন সে দোকানদারটিকে বললো-

-আমায় একটা জলের বোতল আর দু প্যাকেট বাটার বিস্কুট দিন তো।

দোকানদারটিও তাকে দেখা মাত্র খানিক অবাক চোখে তার দিকে তাকাতে পিউ বুঝলো যে তার সাজসজ্জা দেখেই ওই দোকানদার অমন ভাবে তাকিয়ে আছে।তাই সে প্রশ্ন করল-

-কী হলো,কী দেখছেন এমন ভাবে?

দোকানদারটি একটু আমতা আমতা করে বললো-

-না না..কই কিছু না তো..

জলের বোতল আর বিস্কুট নিয়ে পিছনে ফেরার সময়ই সে আরও কয়েকজনকে তার আশেপাশে লক্ষ্য করলো যারা কিনা তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েছিলো।পিউ একটু ঠোঁটকাটা।সে তাই নিজের ঠোঁটকে সামলাতে না পেরে যারা তার দিকে তাকিয়ে ছিলো তাদের উদ্দ্যেশ্যে বললো-

-আমি বিয়ের মন্ডপ থেকে পালিয়ে এসেছি।মিটেছে সবার কৌতুহল।

কথাটা শুনে সবাই এদিক ওদিক চোখ ফেরালো।পিউ মনে মনে(যত্তসব) কথাটা উচ্চারণ করে বাসে গিয়ে উঠলো। এত ক্ষন তার পাশের সীটটা ফাঁকাই ছিলো।ফিরে এসে দেখে সেই সীটে একজন বছর ত্রিশেকের যুবক এসে বসেছে।

সেই যুবককে পিউ যখন বললো-

-একটু উঠবেন।ভেতরের সীটটা আমার।

যুবক ছেলেটি তার মুখের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল।পিউ নিজের সীটে গিয়ে বসে পড়লো।যুবক ছেলেটির নাম শান্তনু , সে কামারকুন্ডু যাচ্ছিলো বন্ধুর বিয়েতে। কিন্তু মাঝ রাস্তায় জানতে পারে যে বন্ধুর যে মেয়েটার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিলো সে নাকি বিয়ের মন্ডপে বসার আগে কোন এক ছেলের সাথে পালিয়েছে। তাই সে শক্তিগড় পর্যন্ত ট্রেনে এসে বাকি বাড়ির পথ তার এই রুটের বাসে যেতে সুবিধা হবে বলেই বাসে এসে উঠেছে।আর উঠে যে তার পাশের সীটে এমন একজন মহিলাযাত্রীকে পাবে সে আশা করেনি।বাস ছেড়ে দিলো।পিউ জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসেছিল।

শান্তনু তার সেলফোন নিয়ে ব্যস্ত হলেও তার চোখ গোপনে বারবার চলে যাচ্ছিলো পিউর দিকে।রাস্তার আলো আঁধারি আবেশে পিউর চন্দন পড়া পরিপাটি ভাবে সাজানো মুখটা দেখে সে নিজেকে সেলফোনের মধ্যে নিবেশ করতে পারল না।অদ্ভুত মায়ামাখানো মুখখানা পিউর।যেন চোখের পলক পড়ে না তাকে দেখে শান্তনুর।কিন্তু শান্তনু বুঝতে পারেনি পিউর নজর তার ওপরেও ছিলো।তাই পিউ যখন আচমকা জানালার ওদিক থেকে হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে প্রশ্নটা করলো-

-আপনি কী দেখছেন আমার মুখের দিকে?

শান্তনু একটু থতমত খেয়ে গেলো।সে কাঁচুমাচু গলা করে বললো-

-ইয়ে..মানে..কই না তো..

-মিথ্যে বলবেন না..আপনার আমার সাজপোশাক দেখে সন্দেহ হচ্ছে তাই তো?

-হ্যাঁ..মানে ওটাই..

-আপনাকে নিয়ে অন্তত পক্ষে বিশ ত্রিশ জনকে কৈফিয়ত দিতে হলো আমাকে।আমি বিয়ের মন্ডপ থেকে পালিয়েছি।

-কেন?

-আপনার জেনে কী লাভ?

-হ্যাঁ তাও ঠিক।

ওদের মধ্যে আর কোনো কথা হলোনা।বেশ খানিকটা সময় পর হঠাৎই শান্তনুর ফের একবার চোখ গেলো মেয়েটার দিকে।ঘুমিয়ে পড়েছে পিউ।আর ঘুম চোখের পিউর মুখটা আগের চেয়ে আরও নির্মল।

ঠিক যেন সদ্য কুঁড়ি থেকে নতুন একটা গোলাপ পাপড়ি মেলেছে এই।অচেনা কাউকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা ঠিক না কিন্তু শান্তনু কী করবে,পিউর মুখটার দিক থেকে যে চোখ সরানো যায়না একটা মুহুর্ত।

আচমকা শান্তনুর খেয়াল পড়লো পিউর মাথাটা বাসের ওই জানালা দিয়ে ক্রমে বাইরের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।অবস্থাটা তার কাছে বিপজ্জনক মনে হতে লাগলো।দু একবার তাকে ডাকলো কিন্তু সাড়া পেলোনা সে এতটাই গভীর ঘুমের মধ্যে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।তাই সে বাধ্য হয়েই খুব আলতো ভাবে পিউর মাথাটা সোজা করে দিলো সীটের ওপর।শান্তনুর মনে অনেক প্রশ্ন।মেয়েটাকে দেখে তো একবারের জন্য খারাপ বলে মনে হয়না।তাহলে কেনই বা সে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে?

আরও কিছুটা সময় এইভাবে কেটে গেলো।দেখতে দেখতে বর্ধমান ঢোকার আগে যেখানে শান্তনুর বাড়ির স্টপেজ সেই স্টপেজে বাস এলো বলে কথা।পিউ তখনো ঘুমিয়ে যাচ্ছে।

কোথায় যাবে মেয়েটা? বর্ধমানে কী? নাকি তার নামার জায়গা সে ফেলে রেখে চলে এসেছে? একবার ডাকবে তাকে সে? এসব ভাবতে ভাবতে এবার সে ফের তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করলো। আর এইবার সে ব্যর্থ হলোনা।

ঘুম ভাঙলো পিউর।আর ঘুম ভাঙা মাত্রই পিউ চোখের সামনে শান্তনুকে দেখে যেন একটু উঠে-

-কে আপনি?

স্বপ্ন দেখছিলো পিউ।তাই তার খেয়ালও পড়লোনা না সঙ্গে সঙ্গে যে শান্তনুর তার পাশের সীটের যাত্রী।শান্তনু তাই তাকে বলে উঠলো-

-আমি।আপনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।তাই বাধ্য হয়েই ডাকলাম।দু:খিত।

-ও..বাসটা এলো কোথায়?

-এই তো আর একটা স্টপেজ বর্ধমান আসতে।আমি এবার নেমে যাবো।

কথাটা শোনা মাত্র মেয়েটার মাথায় যেন বাজ পড়লো।সে উতলা হয়ে উঠলো।দুর্গাপাড়া পেরিয়ে চলে এসেছে আর আপনি আমায়...উফফ সরুন সরুন..বলে পিউ হাতের ব্যাগটা বুকে চেপে নিয়ে সীট ছেড়ে চটজলদি উঠতে গেলে পর শান্তনু তাকে বললো-

-দাঁড়ান দাঁড়ান।আর মিনিট পাঁচেক পর স্টপেজ।আমিওতো ওখানেই নামবো।

পিউ শান্তনুর কথা শুনে সীটে বসে কাকে যেন ফোন করল। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে গলার শব্দটা আর একটা মেয়ের গলা শুনতে পেলো।

-তুই ওখানে চলে গেলি কীভাবে? এত রাতে এতটা ফিরে আসবার আর কিছু পাবি কীকরে?

ফোনটা শেষ হতে শান্তনু লক্ষ্য করলো পিউর চোখে মুখে কেমন যেন একটা চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে এই প্রথমবার। স্টপেজ আসতে শান্তনুর পিছু পিছু পিউ নেমে পড়লো বাস থেকে।তখনও বাসের কয়েকজন যাত্রী পিউর দিকে চেয়ে আছে।আর তারা বোধহয় এটাই তখন ভাবছে যে মেয়েটা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে এই ছেলেটার সাথে। মানে শান্তনুর সাথে।

বাস থেকে নেমে ঘড়িতে শান্তনু দেখলো প্রায় ভালোই রাত।
এত রাতে দুর্গাপাড়ায় ফিরে যাওয়া বেশ অসম্ভব একটা ব্যাপার।এবার সে যে চলেও যাবে পিউকে একা ফেলে রেখে সেটাও তার মন চাইলো না।একা একটা মেয়ে তার ওপর গা ভর্তি গয়না।সে খানিক্ষন অপেক্ষা করলো পিউ কী বলে এটা দেখবার জন্য।আর পিউ বললোও তাকে কথাটা।

-বলছি,একটু হেল্প করবেন?

-হুম বলুন..

-আমি কীভাবে এখন দুর্গাপাড়া ফিরে যেতে পারি এখন?

-এই মুহুর্তে ফিরে যাওয়া খুব টাফ।

-তাহলে কী করবো?

-আমিও সেটাই ভাবছি..

সামনেই একটা চা দোকান খোলা ছিলো।সেটা খোলা আছে দেখে শান্তনু পিউকে বললো-

-আপনি চা খাবেন?

পিউর সত্যি বলতে কী অচেনা একটা ছেলেকে বিশ্বাস করতেও মন চাইছিলো না কিন্তু কোথাও গিয়ে ছেলেটাকে দেখে খারাপ মানুষ বলে মনেও হচ্ছিলোনা তার।মানুষের আচার ব্যবহার দেখে যতটুকু আন্দাজ করা যায় আরকি।
শান্তনু ফের জিজ্ঞেস করলো একই কথা।পিউ শুধু বললো-

-কীভাবে যাবো আমি মৌ এর কাছে..?

-দেখছি দেখছি..এতটা উতলা হবেন না।কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ঠিক।

পিউ খানিকটা আশ্বস্থ হয়ে শান্তনুর পিছু পিছু গেলো।তারপর শান্তনুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।দুজনে একটা করে চা খেলো।খেতে খেতে শান্তনু কাকে যেন একটা ফোন করল। পিউ শুধু শুনতে পেলো শান্তনু ফোনের ওপ্রান্তের মানুষটি কে বলছে-

-ভাই একটু চলে আয় প্লিজ।আমি স্ট্যান্ডের পাশেই আছি।

যাকে ফোন করে আসার কথা বললো শান্তনু সে আসবার আগে সে পিউকে বললো-

-বাইকে যেতে আপত্তি নেই তো?

পিউ ঘাড় নেড়ে না শুধু সম্মতি দিলো।শান্তনুর বাইকে উঠে পিউ তার থেকে খানিক দূরত্ব নিয়ে বসলো।শান্তনু বাইক ছাড়লো।বেশ কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর পিউ বাইকের পিছন থেকে শান্তনুকে বললো-

-আপনি আমায় এতটা হেল্প করছেন কেন জানতে পারি?

-কী জানেন তো,আমি মনের কথা বড্ড শুনি।আর আমার মন আপনাকে একা ছাড়তে না করছে তাই..

শান্তনুর কথা শুনে পিউর মনের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো।আসলে সেও যে নিজের মনের কথা শুনে প্রতিটা মুহুর্তে চলে।নইলে কী আর বিয়ের আসর ছেড়ে চলে আসবার সাহসটা দেখাতে পারত।বেশ খানিক্ষন আবার চুপ থাকার পর হঠাৎ কেন জানিনা পিউ নিজের মনের কথা শান্তনুকে বলতে শুরু করলো-

-বাবা যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো,পলাশ,ছেলে হিসেবে ও খারাপ না।ভালো চাকরি করে।ওয়েল সেটেলড। কিন্তু ওর ফ্যামিলি খুব কঞ্জারভেটিভ।বিয়ের পর আমাকে কাজ করতে দেবেনা।কিন্তু আমি চাকরি করতে চাই।নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।নিজের স্বপ্নগুলো নিজে পূরন করতে চাই।অনেকবার বাবাকে আমার অমতের কথা জানিয়েছি কিন্তু বাবা শোনেনি।তাই শেষমেষ বাধ্য হয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হলাম।বলুন না একটা মেয়ের কী নিজের স্বপ্ন থাকতে পারেনা?

-আমার মন বলছে আপনার এতে কোনো ভুল নেই।কিন্তু যে ছেলেটাকে আপনি এভাবে ছেড়ে এলেন,তার কী হবে?সে তো ভুল কিছু করেনি।

-জানি।আর সেই কারনে আমার মনের ভেতরের একটা গিল্ট আছে।কিন্তু কিছু দিন যাক।আমি পলাশকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।আশা করি ও আমায় ভুল বুঝবে না।

-বেশ।এবার আমি একটা প্রশ্ন করতে পারি আপনাকে?

-হুম..

-পলাশের বাড়ি কী কামারকুন্ডু?

-হ্যাঁ..আপনি,মানে আপনি কীকরে জানলে?

-আমি পলাশের বন্ধু।শান্তনু।ওর বিয়েতেই তো যাচ্ছিলাম। রাস্তায় শুনলাম যে পাত্রী পালিয়েছে।তাই ফিরে আসতে হলো।

এটা জানা মাত্র পিউর বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো। তার মাথায় যেন আকাশটা ভেঙে পড়লো।কী বলছে কী ছেলেটা,এ পলাশের বন্ধু। তবে যদি..পিউর ভাবনার মাঝে শান্তনু বলে উঠলো-

-চিন্তা করতে হবেনা।আমিই কিছুই জানাবোনা আমার বন্ধু কে।আমার মন বলছে হয়তো আপনি কিছু ভুলও করেননি।

কথাটা শুনে নিশ্চিন্ত হলেও পিউর মনে তবু একটা উদবেগ আর ভয় রয়েই গেলো।শান্তনু ফের বললো-

-তা এত কথাই যখন বলে ফেললেন বিশ্বাস করে আমাকে তো আর একটা কথা জানতে চাইবো,আশা করি অসুবিধা হবেনা জানাতে।বান্ধবীর বাড়ি তো চলেই যাচ্ছেন।এরপর কী করবেন কিছু ভেবেছেন কি?

পিউর বলতে একটু সংকোচ বোধ হলেও সে বললো-

-এখনও জানিনা।আপাতত ওকে বলেছিযে ও যে কোম্পানি তে করে সেখানে আমার একটা ছোটোখাটো পোস্টে ব্যবস্থা করে দিতে।আমি কাজটা করতে করতে এম এস সি টা শেষ করতে চাই।

-বেশ।

শান্তনু আর কিছু বললোনা।কিন্তু কিছুটা পথ যাওয়ার পর তারা দুজনেই পড়লো চেকপোস্টে পুলিশের সামনে।বিপদ ঘনিয়ে যে এসেছে তা তারা দুজনেই বুঝতে পেরেছিলো।

একজন পুলিশ অফিসার তাদের বাইকটা দাঁড় করিয়ে পিউ কে একবার ভালো করে দেখে তারপর শান্তনুকে বেশ কড়া মেজাজে জিজ্ঞেস করলো-

-কী ব্যাপার,মেয়ে ভাগিয়ে পালাচ্ছিস নাকি?

শান্তনু বুঝলো পিউর সাজসজ্জার জন্যই পুলিশ এমনটা সন্দেহ করেছে।কিন্তু শান্তনু কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই পিউ উত্তরটা দিয়ে দিলো।

-হ্যাঁ,আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো বলে যাচ্ছি।আমার বাবা আমার জোর করে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো আর আমি শান্তনুকে ভালোবাসি।

-বয়স কত আপনাদের?

শান্তনু জানালো উনত্রিশ।পিউ জানালো তেইশ।মানে দুজন ই প্রাপ্ত বয়স্ক।কী আর বলার থাকতে পারে।কিন্তু ড্রাইভারি লাইসেন্স আর গাড়ির কাগজ চেক করার সময় শান্তনুকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হলো।তার পার্সএ ড্রাইভারি লাইসেন্স থাকে সবসময়।কিন্তু গাড়ির কাগজ।সেসব তো জানেনা।গাড়ি তো আর ওর না।বন্ধুকে ফোন করলো।সে জানালো গাড়ির কাগজপত্র বাড়িতে রয়ে গেছে তাড়াহুড়োতে।

অগত্যা পুলিশ অফিসারটি গাড়িটি নিজেদের কাছে রেখে দিয়ে বললো-

-আগে কাগজ আনতে বলো।তারপর গাড়ি ছাড়া হবে।

বন্ধুকে পুলিশ স্টেশনে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না শান্তনুর কাছে।শান্তনু কী করবে কিছু বুঝে উঠতে পারলোনা।ওদিকে পিউ তার বান্ধবীকে ফোনে সব জানাতে সে বললো-

-ওখানেই থাক।আমার বাড়ি থেকে জায়গাটা খুব দূরেও না। আমি আমার দাদাকে পাঠাচ্ছি তোকে নিয়ে আসবে।আর বলছি যে ওই তোর সাথে যে ছেলেটা আছে..মানে ও..

-না রে...ওনাকে সন্দেহ করার কোনো জায়গা নেই।

ফোনটা রাখার পর পিউ শান্তনুর সামনে এসে তাকে বলল-

-আমার বান্ধবীর দাদা আসছে।ও বললো এখান থেকে ওর বাড়ি খুব দূরে না।

কথাটা শুনে কেমন জানি শান্তনুর চোখে সামান্য একটা মুহুর্তর জন্য উদাসীনতা খেলে গেলো।কেন জানিনা এতটা সময় পিউর সাথে কাটিয়ে শান্তনুর তার ওপর কীসের এক অজানা টান জন্মে গেছে তার মনের অজান্তেই।তাই সে চেয়েছিলো যে...থাক গে...নিজের মনকে আর বেশি ভাবিয়ে লাভ নেই।

শান্তনুর বন্ধু আসার আগেই পিউর বান্ধবীর দাদা ওখানে চলে এলো।আর সে আসা মাত্র পিউর কেমন যেন করে উঠলো হঠাৎ করে।শান্তনুকে ছেড়ে যেতে তার ইচ্ছে হলো না।আসলে কোথাও গিয়ে যেটুকু যা চিনেছে জেনেছে শান্তনুকে সে তাতে করে অনেকটা তার মনের মত তাকে মনে হয়েছে।তাই হয়তো..

পিউর বান্ধবীর দাদা পিউকে বললো-

-এবার তাহলে যাওয়া যাক নাকি..

পিউ বললো-

-একটু দাঁড়িয়ে অসুবিধা হবে? আসলে উনি চলে যাক..তার পর না হয়..

শান্তনু তখন পাশ থেকে বলে উঠলো-

-না না।আবার দেরী করবেন কেন।তাছাড়া সারারাত জার্নি করছেন।বিশ্রামেরও প্রয়োজন আছে।

-সেটা তো আপনারও আছে।আসুক না আপনার বন্ধু।তখন না হয় চলে যাবো।

বেশ কিছুক্ষন পর শান্তনুর বন্ধু এসে বাইকের কাগজপত্র দেখিয়ে গাড়িটা নিলে পর গাড়িতে ওঠার আগে শান্তনুর ফোনে পলাশের ফোন এলো।কথাবার্তা শুনে পাশ থেকে পিউ বুঝলো যে পলাশের ফোন।ভয়ও পেলো সে একবার। কিন্তু শান্তনু পলাশকে জানালোনা যে পিউ সেই মুহুর্তে তার সাথে আছে।কথা শেষে শান্তনু ফোনটা রেখে পিউকে হাসি মুখেই বলল-

-বেশ।আসুন তাহলে।আর আপনার ভবিষ্যত জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।

পিউ কী বলবে বুঝতে পারছিলোনা।শান্তনুকে ছেড়ে যাবার মুহুর্তে তার বুকের ভেতরটা যেন ফাঁকা হয়ে উঠেলো তখন।
খুব কাছের কেউ একজন দূরে চলে গেলে যেমনটা হয়।তাও সে শান্তনুর মত মুখে হাসি এনেও বিদায় জানাতে গিয়ে মুখের হাসিটা মন কেমনের আবেশে ভরে গেলো।সে বলল-

-আপনিও ভালো থাকবেন।

দুজনেই উঠে বসতে যাবে কী আলাদা আলাদা বাইকে ফের তারা ফিরে এলো একে অপরের কাছে।দুজনেরই দুজনকে যেন কিছু বলার আছে।প্রথম শান্তনু জিজ্ঞেস করলো-

-কিছু বলবেন?

-না।আপনি?

-না..

-তাহলে আসি..

ফের মুখ ফিরিয়ে নিলো তারা দুজন দুজনের থেকে।কিন্তু আবার পিছু ফিরলো।আর পিছু ফিরেই একসাথে প্রশ্নটা করে উঠলো-

-আমাদের আর কী দেখা হবে কোনোদিন?

একই প্রশ্ন দুজনেই করে ফেলে দুজনেই এক মুহুর্তের জন্য থামকে গেলো।তারপর শান্তনু বললো-

-মন বলছে আমাদের আবার দেখা হবে।

-আমারও মনও তাই বলছে যে আমাদের দেখা হবে আবার।

যাওয়ার আগে তারা একে অপরের দিকে ফের তাকালো।

মন বলছে তাদের ওই দুই চোখের ভাষা একদিন সম্পর্কের ভাষা পাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন