Breaking

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৫

ভালোবাসার কাছে








বাবার পছন্দ মত নামকরা বনেদী বাড়িতে অঙ্কিতার পরিণয় হলো।ফুলশয্যার রাতে স্বামীর জন্য দীর্ঘ রাত্রিজাগার পরেও তার স্বামী তার ঘরে এলোনা। বিয়ের আগে মা বলেছিলো,স্বামীদের মন পেতে সময় লাগে।তাই,সে দিনের পর দিন,মাসের পর মাস স্বামীর মন পেতে অপেক্ষা করেছিলো।কিন্তু,তার স্বামী রাতে এক বিছানায় শুলে কী হবে,তার সঙ্গে কথা ভাগ করে নেওয়ার পরিবর্তে,সে ফোনে অন্য একজন মেয়ের সঙ্গে সময় ভাগ করে নিত।


অঙ্কিতা সরল মেয়ে,প্রথম প্রথম মনে করত স্বামী অফিসের কাজ নিয়ে ফোনে ব্যস্ত থাকে।কিন্তু,ধীরে ধীরে আসল সত্যিটা জানবার পর তার মন ভেঙে গেলো। তার স্বামী দ্বিতীয় কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত ছিলো-সে কথা বিয়ের আগে সে অঙ্কিতার কাছে গোপন করেছিলো।


কোন মেয়ে পারে,অমন একজন স্বামীর সঙ্গে ঘর করতে?
বাবা মা এর অমত থাকার সত্ত্বেও সে জোর করে তার পরকীয়া প্রিয় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে এলো।কিন্তু,মেয়ের অমন অবস্থা দেখে তার বাবা,মা তাকে সাহস দেওয়া তো দূর,উল্টে তাকে উঠতে বসতে মানষিক টরচার করতে শুরু করলো।

তার ইচ্ছে ছিলো জীবনের সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে আবার পড়াশোনাটা আরাম্ভ করবে, কিন্তু,তার বাবা তাকে তাদের বুটিক দোকানে বসিয়ে দিলো।আর দোকানে যে মেয়েটা কাজ করতো,তাকে ছাড়িয়ে দিলো।অর্থাৎ,বিনিপয়সার কাজের লোক বানিয়ে ছাড়লো তাদের নিজেদের মেয়েকে।

সে প্রতিবাদ করেনি এই ভেবে যে,তবু তো দোকানে থাকলে,পাঁচ জন অন্য মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে হয়ত তার মনটা ভালো থাকবে।ওদিকে বাবা মা তাদের সব স্নেহ ঢেলে দিলো ছোটো ভাইয়ের ওপর।অনেকেই তাদের দোকানে আসে,জামা কাপড়ের বিক্রির সাথে সাথে,তাদের সঙ্গে আলাপও হয়।

এমনই একজনের সঙ্গে আলাপ হলো তার,যে মাঝে মধ্যেই তার দোকানে আসা যাওয়া করে।ছেলেটা প্রায় তারই বয়সি।দেখতেও সুশ্রী কথাবার্তাও বেশ ভালো।বারবার আসা যাওয়া আর আলাপ পরিচয় বাড়ার সাথে সাথে ছেলেটার প্রতি তার একটা টান তৈরি হলো।অমন টান তার অন্যকোনো ছেলের সঙ্গে সেই ভাবে বিয়ের আগে তেমন জন্মায় নি।

সে একদিন ইচ্ছে বশতই ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো-'তোমার বাড়ি কোথায়?'

ছেলেটা জানালো সে এখানকার ছেলে নয়,কাজের সূত্রে তাকে এখানে থাকতে হয়।আর মালিকের স্ত্রীর জন্য সালোয়ার কাপড় ইত্যাদি নিয়ে যায়।

এভাবেই তাদের মধ্যে কথা বলা চলতে চলতে কথায় কথায় মেয়েটা তার খারাপ অতীতটা একদিন ছেলেটা কে জানিয়ে ফেললো।মেয়েরা কারোর খুব ঘনিষ্ঠ হলেই তবে তাকে নিজের সব কথা বলতে পারে।

ছেলেটা একদিন মেয়েটাকে সাহস করে বলল -'কাল তো রবিবার,চলো কোথাও বেড়াতে যাবে?'

অঙ্কিতা,সেই কবে বিয়ের আগে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিল,তারপর আবার যেন কত যুগ পর কেউ তাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে যায়।সে রাজি হয়ে গেল। রবিবার তারা পার্কে গেলো,সেখানে তারা কতশত প্রেমিক যুগলদের দেখলো,তাদের মুখে চোখে কত হাসি,কতই না ভালো আছে তারা।

অঙ্কিতা আগে কোনোদিন কারো প্রেমে করেনি,প্রেমের পরম সুখ থেকে সে আজও বঞ্চিত।রাতে তারা বাইরে ডিনার করে বাড়ি ফিরলো।আর সেই জন্য বাড়িতে মা বাবাকে কৈফেৎও দিতে হলো প্রচুর।

পরের রবিবার তাদের ফের প্লান হলো।পার্কে গেলো। অঙ্কিতা সেই অন্যদের প্রেমই বিভোর চোখে দেখছিল
তার আবেগপূর্ণ মুখের চাহিদা লক্ষ করে ছেলেটা তার কাছে জানতে না চেয়েই তার নরম হাতটা হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো।অঙ্কিতা ছেলেটার হাত টা খেয়ালেই হোক বা বেখেয়ালেই হোক দু'হাত দিয়ে এমনভাবে ধরল যেন আর কখনো তা ছাড়বার ইচ্ছে নেই তার।

ছেলেটা তার একদম কানের নীচে,গালের মোলায়েম জায়গাটায় তার মুখটা নিয়ে গেলো,তার উষ্ণ নিঃশ্বাসের স্রোত অঙ্কিতা অনুভব করতে মুখ ফেরাতেই মুহূর্তের জন্ম নিলো।দু'টো ঠোঁটের মধ্যে কার ইঞ্চি তিনেকের দূরত্ব ক্রমে ছোটো হয়ে নৌকা ঠিক যেন তীর স্পর্শ করে ধীরে ধীরে সেই ঘাটে তার নোঙর নামালো।

ঘনিষ্ঠতা বাড়লো দুজনের।যোগাযোগ,যাতায়াত বাড়তে থাকলো কারন ছাড়াই।অঙ্কিতা বাড়ির লোকের সন্দেহভাজন হয়ে উঠলো।তার ভাই সেই সুযোগটা নিয়ে মা বাবার কানভাঙানি দিতে আরাম্ভ করলো সবসময়।বাড়িতে সারাক্ষন খালি ঝগড়া, অশান্তি।একদিনতো অঙ্কিতার মা রান্নার গরম খুন্তি দিয়ে অমন বড় মেয়েটার পিঠে বসিয়ে দিলো।বুটিকে আগে তার জন্য সময় মত জলখাবারটাও পাঠানো হত,ক্রমে সেটাও বন্ধ হয়ে গেলো।মেয়ের সঙ্গে যে কোনো বাবা মা এমন দুঃব্যবহার করে তা তাদের না দেখলে বোঝা যাবে না।


অঙ্কিতা সে সব কথা জানাতে চাইতো না ছেলেটাকে,কিন্তু ছেলেটা অঙ্কিতার চোখ মুখের অবস্থা দেখে সব বুঝে গিয়েছিলো।একটা রবিবার অঙ্কিতা কাজের নাম করে ছেলেটার সঙ্গে দেখা করলো।সেদিন তারা পার্কে বসলো না।গোপনে তারা একটা পোড়ো বাড়িতে নিরিবিলি ভাবে দুজনে গিয়ে বসল।

অঙ্কিতা খুব কাঁদলো সেদিন।কথায় কথায় অঙ্কিতা তার পিঠের দিকের জামাটা একটু নামিয়ে পিঠের পোড়া দগদগে দাগটা ছেলেটাকে দেখাতে ছেলেটা তখন নিজের দুচোখ সামলাতে না পেরে অঙ্কিতার ক্ষত জায়গায় তার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে অঙ্কিতাকে যেন কিছুটা হলেও যন্ত্রনা মুক্ত করলো।অঙ্কিতা কান্না চোখে ছেলেটার গালের দুপ্রান্ত টিপে ধরে নাকে নাক ঠেকিয়ে বলল-
-'আমার একটা কথা রাখবে?'

-'তোমার সব কথা রাখবো আমি।'

-'আমি আর সহ্য করতে পারছিনা ওই ঘরটা। তুমি প্লিজ আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাও কোথাও।'

-'আর কয়েকটা দিন শুধু অপেক্ষা করো।'

পালিয়ে যাওয়ার ঠিক আগের দিন রাতে আচমকা অঙ্কিতার বাবা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট  এ আক্রান্ত হলো।
অঙ্কিতার পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো।
বাবাকে দেখতে গেলে হাসপাতালের বেডে শয্যাগত অবস্থায় তার বাবা তাকে বলল-'তুই কথা দে,অমিতকে ভুলে যাবি।'

অঙ্কিতার মাথায় আচমকা যেন বাজ পড়লো। শয্যাগত বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তার বড় মায়া হলো।

কিন্তু,অমিতকে সে ভুলবে কীকরে? হয়না,হতে পারেনা। 

অঙ্কিতার বাবা অঙ্কিতার হাতটা ধরে নিজের মাথায় রেখে আবার বলল- 'বল,কথা দে আমায়..।' 

অঙ্কিতা বলল-'তোমরা তোমাদের মেয়েকে ভুলে যাও।'

অঙ্কিতার সাহস দেখে তার বাবা এবং মা দুজনেই রাগান্বিত চোখে তার দিকে তাকালো।

অঙ্কিতা তাদের করাল দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের ভালোবাসার কাছে ফিরে যেতে হাসপাতালের চত্বর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন