ঠিক তার পরের দিনই মেয়েটির সাথে ওই একই জায়গায় একই সময়ে আবার দেখা। এবার ও নিজেই হেসে বললো, "আপনি বুঝি আমিনুদ্দিন ?সফল বা বিজয়ী নির্দিষ্ট করে.? নামটা তো বেশ ভাল। কে রেখেছেন? বাবা না মা?"মেয়েটির চোখে মুখে দেখলাম কি ভীষন উজ্জ্বলতা।
হেসে বললাম, "বাবা রেখেছিলেন। আর আপনার নামটা?"
মেয়েটি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো, "আমার নাম শ্রেয়সী ।"
আমি উৎফুল্ল হয়ে বললাম, "শ্রেয়সী ? এতো দারুন সুন্দর নাম। আপনার সুন্দর রূপ, সুন্দর চোখ, সুন্দর শরীরের সাথে মানানসই এই নামটাই সার্থক। নামের সাথে একেবারে মিলে গেছে আপনার রূপটাও।"
মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে বললো, "আমার কাছে এই নামটা কিন্তু অসহ্য। আমার ভাল লাগে না। কেন? আপনি হয়তো প্রশ্ন করে বসবেন। আমার সন্মন্ধে আপনার তো কিছু জানা নেই। যখন জানতে পারবেন, তখন বুঝবেন, কতবড় ভুল আপনি করেছেন। আফশোসের শেষ থাকবে না। লোকে তো না জেনে শুনেই অনেক ভুল করে বসে।"
আমি আবারও হতভম্ব।
শ্রেয়সী এরপরেই একটা ট্যাক্সিতে উঠে পড়ল।
আমাকে বললো, "সেকথা আজ নয় আর একদিন না হয় বলব কেমন?"
চোখের সামনে দিয়ে ট্যাক্সিটা হুস করে বেরিয়ে গেল, আমার মনের মধ্যে তখনও ধোঁয়াশাটা থেকে গেল। রহস্যটা এখনও পরিষ্কার হল না। ঘরে ফিরে আমি শ্রেয়সীকে নিয়ে সবময়ই ভাবি, চিন্তা করি। একদিন অন্তর অন্তর আমাদের ওই রাস্তাতেই দেখা হয়। অন্য অনেক কথাই হয়। কিন্তু ওকে আসল কথাটা নিয়ে প্রশ্ন করলেই, শ্রেয়সী হেসে জবাব দেয়, "বলবো, একদিন নিশ্চই বলব আপনাকে। সবই যদি বলে দিই, তাহলে তো ফুরিয়ে যাবে কৌতূহল।
তার চেয়ে না বলে যতদিন আমি থাকতে পারি, ফুলের সৌন্দর্য, ফুলের সুবাস ততদিনই আপনি উপভোগ করতে পারবেন। এত তাড়াতাড়ি আমি ফুরিয়ে যাই, সেটাই কি আপনি চান?"
আমার কৌতূহলটা আরও বেড়ে যায়। এ কি বলে মেয়েটা? কি এমন আছে ওর জীবনে? যা আমাকে সহজে বলতে চায় না?
এরপরে একদিন শনিবার সন্ধেবেলায়। তার আগের দিন শ্রেয়সী আমাকে বললো, "আপনি কি আমার সঙ্গে যাবেন একজায়গায়? রাজি আছেন?"
আমি বললাম, "কোথায়?"
শ্রেয়সী মিষ্টি হেসে বললো, "সে কৌতূহলটা থাক না।"
আমি গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম। বললাম, "আবার কৌতূহল। এই এক টেনশন নিয়ে আমি থাকি কি করে? সত্যি তুমি কিন্তু এক রহস্যময়ী মেয়ে।"
শ্রেয়সী উচ্ছ্বল হাসল। আমাকে বললো, "এর মধ্যেই আপনি থেকে তুমি হয়ে গেলাম?
এত তাড়াতাড়ি কিন্তু ঠিক হল না। কালকের পরে না হয় বিবেচনা করতেন।"
আমি শ্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে চেয়ে কেমন যেন ফিউজ হয়ে গেলাম।পরের দিন অর্থাৎ শনিবার। ঠিক সন্ধ্যায় আমি রাস্তায় ওর জন্য অপেক্ষারত। শ্রেয়সী কিন্তু সময় পার করে এলো। লাফাতে লাফাতে বললো, "অনেকক্ষণ এসেছেন, তাই না?"
আমি শ্রেয়সীর পোষাক দেখে চমকে উঠলাম। জিন্স আর টপ পরেছে সে। একেবারে মর্ডান গার্ল। টপ অনেকটা শরীরকে চেপে রেখেছে, শ্রেয়সীর শরীরটা যেন অন্য এক রুপের ছোয়া পেলো। জিন্সের প্যান্ট এতো টাইট শ্রেয়সীর হিপ দেখে আমি ভিমরি খেলাম।রোজকার বাঁধা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। দুজনে এগিয়ে গেলাম। দরজা খুলে দুজনে একটা ট্যাক্সিতে উঠলাম। শ্রেয়সীর চুলটা চুড়ো করে বাঁধা। লালচে গাল, চিকন নাক একেবারে চকচক করছে। চোখের কোলে নীলাভ আভা। ঠোঁটে ঘন লিপস্টিক রক্তিম। মাঝে মাঝে শ্রেয়সীর ঠোঁটের কোণে অদ্ভূত হাসি। তবুও মধুর মোহিনী ঘেরা মুখশ্রী যেন আরও আকর্ষণীয়া।
ট্যাক্সিতে যেতে যেতেই ভাবলাম, ওর ঠোঁটে কি একটা চুমু খাব? লিপস্টিকের লাল রঙটা আমার ঠোঁটের সাথে লেপ্টে যাবে। তারপর হাতটা মেলে ওকে জড়িয়ে নেবো বুকের পাজরে, আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলবো ভিষন ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় তুমি কি আমার হবে??
আসতে আসতে মৃদু সুরে বলতে বলতে একটু গন্ধ নেয়া যানে শরীরের । গাড়ী চলতে চলতেই আমার ইচ্ছাপূরণ হবে। শ্রেয়সী হয়তো হেসে বলবে, "যাঃ কি অসভ্য আপনি। আপনি না ভাল লোক, শান্ত শিষ্ট। এই কি তার পরিচয়?"
হঠাৎ দেখলাম শ্রেয়সী একদৃষ্টিতে দেখছে আমাকে। আমিও খেয়াল করিনি, কখন অজান্তেই আমার ঠোঁট দুটো কেমন ফাঁক হয়ে গেছে। যেন কিছু কামড়ে ধরব, বা চুমু খেতে শুরু করব, তারই প্রতীক্ষায়। শ্রেয়সী হয়তো ভাবছে, ইস কি হ্যাংলা লোকটা।একটু পরেই ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল, শহরের থ্রী স্টার লাক্সারী হোটেল লাস্ট এনার্জ্জীতে। হোটেলের ভেতরে বিরাট হলঘর। শ্রেয়সী হাই হিলে শব্দের ঝংকার তুলে পা ফেলে ফেলে চলছে। আমি ওর পিছু পিছু ঢুকে চারিদিক তাকাচ্ছি। যুবক যুবতী জুটিরা সব ছোট্ট টেবিলে আলোর তলায় বসে খানাপিনা আর মজলিসি আড্ডা করছে। ওরা কেউ গায়ে গা ঠেকিয়ে বসে।
কোন যুবতী তার প্রেমিকের পাশে বসে হুমড়ি খেয়ে প্রেমিকের গলা জড়ানো অবস্থায়, আবার কেউ ঠোঁটে ঠোঁট রেখে আলাপরত। একটা টেবিল ফাঁকা ছিল।
শ্রেয়সী বেল টিপতেই বয় এসে দাঁড়াল। - "সেলাম ম্যাডাম।"
শ্রেয়সী সেই বয়কে বললো, "আমি ফ্লোর থেকে আসছি। উনি যা যা খেতে চাইবেন, তুমি তাই দেবে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, পেমেন্ট আমি করব। আমার গেস্ট আপনি। আপনি বসুন। আমি এখুনি আসছি।"লাস্ট এনার্জ্জি বার কাম হোটেলের বিরাট হল ঘরের ডায়ার্সে তখন ডিসকো নাচ চলছে। ঘোষণা চলছে, "আজকের অ্যাট্রাকশন, পপ সিংগার মিস এঞ্জেল গান আর মিউজিক।"
মিনিট কুড়ি ডিসকো ড্যান্স হবার পরে মাইকে অ্যানাউন্স হলো, "আইডল সিংগার মিস এঞ্জেল নাও কামিং অন দ্য স্টেজ। প্লীজ অ্যাটেনশন। স্টেজে তখন জোরালো নিয়ন আলোর ঝিকমিকি। মাঝে মাঝে রং বাহারি আলোর কেরামতি হচ্ছে। স্টেজে এসে দাঁড়াল, মাউথ স্পিকার হাতে মিস এঞ্জেল। "পরণে ঝলমলে ছোট টপ । স্তনযুগলের পাহাড়ি ঢলে আলোর জেল্লা পড়ছে। সিংগার এঞ্জেলের কোমরে নানা রঙ বিকিরণের ঝালর দেওয়া ঘাঘরা। আমি চমকে উঠলাম। স্টেজে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে মিস এঞ্জেল এতো অন্য কেউ নয়। এ যে শ্রেয়সী !
মাউথ স্পিকার হাতে নিয়ে সারা স্টেজ ঘুরে গান হয়েই চলেছে, সারা স্টেজময় রং বেরং আলো বৃত্তাকারে ঘুরছে,
আর মিস এঞ্জেল তার রূপসী দেহ কাঁপিয়ে দেহের নানা ভঙ্গিমা তুলে নাচছে। উপছানো বুকের ঢেউ তুলে ছন্দে কেমন সুন্দর করে তুলছে, চোখ দুটিতে ক্ষিপ্র চাহনির দ্যুতি। ঠোঁটে বিদ্যুতছটা হাসির ঝর্ণাধরা। প্যায়ার করনে ওয়ালে পঙ্কতিটা গাইবার সময় বুকে ঢেউ তুলে তুলে ছন্দের সাথে সাথে তাল মিলাতে ছিলো দর্শকের দৃষ্টিকে লোলুপ করে তুলছে, সেই সাথে ঘোরাচ্ছে। হলের মধ্যে বসে থাকা জুটিরা সেই সুরের মাদকতায় নিজেরা নিজেদের জুটিকে ধরে আলিঙ্গনে আরও বেশি করে দুলে উঠছে। গানের ছন্দময়ী দর্শকদের মনপ্রাণ আনন্দ লহরীতে মাতিয়ে তুলছে।জলদ সুরের উন্মাদনায় মিস এঞ্জেল একসময় কোমরের ঝালর লাগানো ঘাঘরাটা ছুঁড়ে দিল একেবারে স্টেজের বাইরে। তার ঝালরের নিচে সর্ট স্কার্টে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে আর তার সাথে নিতম্বের ঢেউ উজ্জ্বল আলোর তলায় সে কি তোলপাড়ের রং মিছিল। দর্শকরা আপ্লুত হয়ে গানের তালে তালে কোরাস কন্ঠ মিলিয়ে হাততালি দিতে শুরু করেছে। মদমত্ত তরুনী যুবতীরা তাদের প্রেমিকের হাত ধরে ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে আর দাপিয়ে এসে প্রেমিকের গলা জড়িয়ে চুমু খাচ্ছে। সারা হল ঘরময় চুমুর শব্দের মূর্ছনা।
প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে সুরের উচ্ছ্বলতা অপার আনন্দে সবাইকে উদ্দাম শ্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। প্রোগ্রাম শেষ হবার পরে ড্রেস চেঞ্জ করে শ্রেয়সী এসে দাঁড়াল আমার টেবিলের সামনে। শান্ত স্বরে বললো, "চলো এবার ফেরা যাক আমি এতোকিছুর পরে কি বলব ঠিক বুঝে উুঠতে পারলাম না।.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন