বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৯

শ্রেয়সী পর্ব - ৫

  


দেখলাম ওর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। গোমরা আকাশের মেঘ কেটে হঠাৎ বুঝি সূর্যের আলো দেখা গেল। শ্রেয়সী  মুচকি হেসে বললো, "নিজে ভাল সাজার চেষ্টা করছ না তোআমার সাথে ঠাট্টা করছনা দয়া দেখাতে চাইছআমি কিন্তু দয়ার দান নেই না। যার জন্য নিজের বাড়ী আমি ছেড়ে দিয়েছি। অন্যত্র বাড়ী ভাড়া করে থাকি। তোমার বাড়ীর মালকিন বিউটি বেগমের দয়া উপেক্ষা করে নিজের পেট নিজে চালাতে এমন কাজ নিয়েছি তাতে আমি ভালই আছি। তোমার মালকিন সম্পর্কে আমার মা। কিন্তু তাকে আমি মা বলে ডাকি না। মা নামের মর্যাদা দেবার মত চরিত্র ওনার নয়। উনি দুশ্চরিত্রা। নষ্টা মেয়ে মানুষ। যাকগেআমি এখন চলি।"



আমি শ্রেয়সীর হাত ধরে ফেললাম। ওকে যেতে দিলাম না। শ্রেয়সীকে বললাম, "আমি কিন্তু ঠাট্টা করিনি তোমার সঙ্গে। তোমাকে দয়াও দেখাতে চাইনি। যা সত্যযা বাস্তবযা তোমার পক্ষে ভাল হবেসেই বিবেচনা করেই আমি তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি।"


শ্রেয়সীর চোখের দৃষ্টি নরম করে আমাকে বললো, "তুমি পাগলামী করছ। হাজার চোখের লোলুপ চাহনির সামনে নিজের শরীর দেখিয়ে যে মেয়ে টাকা রোজগার করেভদ্র সমাজের কাছে সে মেয়ে নোংরা। পাপী। জেনে শুনে তুমি সেই পাপের ভাগীদার হতে চাও কেন ? "

আমি গাঢ় স্বরে ওকে বললাম, "আমার ভালবাসার জোরে শ্রেয়সী। আমি তোমার রূপযৌবন দেখে আকৃষ্ট হইনি। তোমার মধ্যে অনেক গুন বর্তমান। তোমার মধ্যে আছে মনুষ্যত্ববোধ। তোমার এই জীবন থেকে আমি তোমাকে বাঁচাতে চাই। আমি ভেবে দেখলামএভাবে চললে তোমার জীবনের পরিণতি ভয়াভহ হতে পারে। সেই বিপদের মুখে আমি তোমাকে ঠেলে দিতে চাই না শ্রেয়সী। আমাকে তুমি যতই ছোট ভাবো। কিন্তু আমার ভালবাসাকে অগ্রাহ্য কোরো না তুমি প্লীজ।"



শ্রেয়সী এবার নিজেকে কঠিন করে আর গুটিয়ে রাখতে পারল না। আমার বলিষ্ঠ হাতের মধ্যে নিজের ফর্সা নরম হাত রেখে বললো, "তুমি সত্যিই ফেরেশতা। আমার জন্য দেবদূত  ইচ্ছে করে এই পরাণটাকে আবার তোমার হাতে তুলে দিতে " 

ট্যাক্সিতে এবার দুজনেই উঠলাম। 

শ্রেয়সী ড্রাইভারকে বললো, "এই মেরিন ড্রাইভে চলো। বারের প্রোগ্রাম ক্যানসেল।"

আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে শ্রেয়সী। বুঝতেই পারছেকোনটা ভাল আর কোনটা মন্দতার বিচার আমি সত্যিই এবার করতে পেরেছি। আমারা আজকেই বিয়ে করবো কাজী অফিসে গিয়ে। শ্রেয়সী একটু বাদে আমার কিছু বন্ধু আসবে। তোমার পক্ষেকে কেউ থাকলে ভালো হতো। শ্রেয়সী তাহলে আমার বান্ধবী সাহিনুরমমো কে আসতে বলছি। খুব উৎসাহ নিয়ে বলছে শ্রেয়সী তার চোখ মুখ বলে দিচ্ছে সে কতোটা খুশি। মেরিন ড্রাইভে এসে শ্রেয়সীকে একটা গিয়ে তৈরি হয়ে এসো।


 আমাদের বিয়েটা হুট করে হচ্ছে তাতে কি আমার বউকে সাজলে কেমন লাগে দেখতে তো নেই বারণ। আমি সবার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি তুমি তৈরি হয়ে এসো। সবাই চলে এসেছে শ্রেয়সী নিজেকে বধু সাজে সাজিয়ে এসে পড়েছে। মেরিন ড্রাইভের একটু সামনে ট্রাস্ট ব্যাংক তার দ্বিতীয় তলায় কাজী অফিস।সবার উপস্থিতিতে শ্রেয়সীর সহমতে  বিয়েটা হয়ে গেলো আমারও শ্রেয়সীর বন্ধুবান্ধবীদের মেরিন ড্রাইভের অষ্টম তলায় 

একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করালাম।


 ডিনার শেষে আমার বন্ধু  শ্রেয়সীর বান্ধবীরা চলে গিয়েছে আমাদের সাথে একমাত্র সাহিনুর এখনও আমাদের সাথেই রয়ে গেলো। বিলমিটিয়ে বেড়িয়ে এলাম আমরা তিন জনহঠাৎ শাহিনুর প্রস্তাব দিল ভাইয়া আজ তো আপনাদের ফুলশয্যা এই রাতে নববধূকে নিয়ে আমার ছোট্ট কুটিরে কিছু দিন থেকলে বেশ ভালো লাগতো রাত ১১:৪৫ এর গাড়িতে আমি একটু নোয়াখালী যাব অফিসের 

কাজে। যদি আপনারা আমার বাসায় যান চাবি দিয়ে যাব। শ্রেয়সী একটু মুচকি হেসে বললো বিউটি বেগমের বাড়িতেতো নতুন বউ নিয়ে যেতে পারবে না। সাহিনুর তুই তোর দুলাভাই কে বরং চাবিটা দিয়ে যা।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন