রুমা সায়ন্তনের ঘুমন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে দুবার ডাকলো-
-'কইগো..শুনছো..কইগো..শুনছো..।'
-'ওঠো গো..উঠে পরো..সময় হয়ে আসছে যাওয়ার।'
সায়ন্তনের ঘুমটা এবার আচম্বিতে ভেঙে যেতে সে আধবোজা চোখে জিজ্ঞেস করলো-
-'কটা বাজে?ভোর হয়ে গেছে?'
রুমা বলল-
-'হুম...উঠে জলদি স্নান সেরে নাও।আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।'
সায়ন্তন ঢুলু ঢুলু চোখে উঠে বাথরুমে যাওয়ার সময় রুমা তার ব্রাশে মাজন লাগিয়ে তার হাতে দিয়ে বলল
-'এ নাও ব্রাশটা করে নিও আগে।আর এই টাওয়েল রইলো।তাড়াতাড়ি স্নান সেরে পোশাক পরে ডাইনিং এ এসো।'
সায়ন্তন মিনিট দশেকের মধ্যে ব্রাশ,স্নান ইত্যাদি সব সেরে তারপর শার্ট প্যান্ট পরে ডাইনিং এসে বসতেই রুমা চা আর টোস্ট সাজিয়ে দিলো সামনে।সে দ্রুত সেসব খেয়ে নিয়ে রুমাকে জিজ্ঞেস করলো-
-'আর একবার কী দেখে নেবো না কী বলোতো সব কিছু ঠিকঠাক নিলাম কিনা?'
রুমা বলল-
-'আমি আজ একবার ফের সব দেখে নিয়েছি।আর তোমাকে দেখতে হবেনা।আর ব্যাগে জলখাবারও দিয়ে দিয়েছি।সময়ে খেয়ে নেবে।'
সায়ন্তন জিজ্ঞেস করলো-
-'কখন এতসব করলে বলোতো?রাতে কী ঘুমোওনি নাকি?'
রুমা বলল-
-'ও আমি রাত থাকতে উঠে করে ফেলেছি।'
তার প্রতি রুমার এতটা কেয়ারিং দেখে সায়ন্তনের ভেতরটা ভোরের নির্মলতার মতই একরাশ নির্মল সুগন্ধিতে যেন পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।সে বেরোনোর আগে রুমার কপালে আদর মেশানো মধুর চুম্বন করে বলল-
-'কী আনবো তোমার জন্য বলো?'
রুমা তাকে একবার বুকে জড়িয়ে বলল-
-'তোমাকেই আমার জীবনের সবচাইতে বড় উপহার ভগবান আমাকে দিয়েছেন।আমার আর কী চাই?'
ট্রেনে যাওয়ার সময় সায়ন্তনের অবচেতনায় বারবার রুমার মুখটাই ভেসে উঠছিলো।সে ভাবছিলো-সত্যিই রুমার মত জীবনসঙ্গিনী হয়না।কত খেয়াল রাখে সে তার।
প্রতিদিনই রুমার সাথে ভিডিও কলে সায়ন্তনের কথা হত।
রুমা তাকে সবসময় জিজ্ঞেস করতো-সময়ে সময়ে ঠিকমত খাচ্ছি কিনা,ওখানে তার কোনোরকম অসুবিধে হচ্ছে কিনা..।
দিন চারেক পর রুমা একদিন ফোনে সায়ন্তনকে জিজ্ঞেস করলো-
-'মায়ের শরীরটা খারাপ শুনলাম।
আমি কী কদিনের জন্য বাপের বাড়ি গিয়ে থাকবো?
মা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছি,বলেছে যেতে।তুমি কী বলো?'
সায়ন্তন বলল-
-'অবশ্যই যাও। আমি বরং বরুনকে ফোনে একটা গাড়ির কথা বলে দিচ্ছি।অতটা রাস্তা।এবারে আর একা একা ট্রেনে যেতে হবেনা।'
সায়ন্তন ফিরে আসার টিকিটটা রুমার জন্মদিনের একদিন আগেই করে রেখেছিলো।
কারন-বিয়ের পর প্রথমবার রুমার জন্মদিনটা সায়ন্তন ভালো ভাবেই সেলিব্রেট করতে চায়।তাই যেদিন সে ট্রেন থেকে সোজা হাওড়ায় নামলো সেদিন সোজা রহনা দিলো শ্বশুরবাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।সেখানে পৌছোতেই রুমা অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো-
-'তুমি এখানে..? একদম না বলে কয়ে?'
সায়ন্তন তৎক্ষনাৎ একটা গোলাপ তার হাতে দিতে রুমা গভীর আনন্দের সুরেই তাকে জিজ্ঞেস করলো-
-'এটা কেন?'
সায়ন্তন দরজায় দাঁড়িয়েই বলল-
-'হ্যাপি বার্থডে..'
রুমা বলল-
-'তোমার মনে আছে?'
সায়ন্তন বলল-
-'আমি কী ভুলতে পারি?'
রুমা হাসিমুখে জানতে চাইলো-
-'কিন্তু গোলাপ কেন?'
সায়ন্তন বলল-
-'তোমার জন্মদিনটাই তো আমার কাছে ভ্যালেন্টিন।আই লাভ ইউ সো সো মাচ।'
রুমা সায়ন্তনের ভালোবাসায় বিভোর হয়ে তার দিকে একপলকে চেয়ে রইলো।সায়ন্তন হাতের চুটকিতে তার ঘোর ভাঙিয়ে বলল-
-'মা বাবাও গাড়িতে আসছে।এলেই কেকটা কাটা হবে।'
কথাটা বলে মুম্বাই থেকে আনা স্পেশাল গিফটটা রুমাকে দিয়ে বলল-
-'পছন্দ কিনা খুলে দেখোতো।'
রুমা তখন এদিক ওদিক না ভেবে সায়ন্তনের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল-
-'বলেছি না।তুমিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন