Breaking

শনিবার, অক্টোবর ১৪

স্নিগ্ধা

 



-হ্যালো হ্যালো..একটু দাঁড়ান না প্লিজ..

সবে তেমাথাটা হয়ে বাঁ দিকে গোলাপবাগানের রাস্তা নিয়েছি আচমকা বছর তেইশ চব্বিশেকের হবে মেয়েটা,সাদা স্কার্ফে চোখের মনিটুকু ছাড়া বাকিটা ঢাকা,আমাকে বাইকে চড়ে আসতে লক্ষ্য করে মিনতি মাখানো সুরে কথাগুলো বলতে বলতে হাতটা নাড়াতে লাগলো।অগত্যা,না থেমে আর যেন উপায়ও নেই।
-কিছু বলবেন...?
আমি বাইকটা থামিয়ে মেয়েটাকে প্রশ্নটা করতে মেয়েটা সামান্য কিন্তু বোধ করেই বললো-
-আপনি কী জয়পুর বা ওদিকে কোথাও যাচ্ছেন?
-না,কেন বলুন তো...?
-তাহলে কোথায় যাচ্ছেন বলবেন একটু..
-কেন বলবেন তো...
-আসলে খুব সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছি...এদিকে আজ বাস বন্ধ।মানে,যাব কীভাবে..
-আরে এত সংকোচ করার কিছু নেই..লিফটের প্রয়োজন তো?কিন্তু,আপনি যাবেন কোথায়?
-বাগনান..
-বাগনান?অতদূর তো যাব না।
-জয়পুর অবধিও যদি যান তাহলেও হবে।ওখানে আমার
বান্ধবীর বাড়ি আছে..আমি ওখান থেকে চলে যেতে পারব।
-জয়পুর!



আমি তো জানি আমি জয়পুর অবধিও যাব না।কিন্তু,আবার ভেবে দেখলাম,মেয়েটা বিপদে পড়েই তো হেল্প চাইছে,আর দু চার কিলোমিটার নয় একটু বেশিই যেতে হবে।যাক গে..
-ঠিক আছে,উঠে আসুন..



মেয়েটা আমার বাইকের পিছনে উঠে আমার থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব রাখা যায় তা রেখেই বসে পড়লো।আমি বাইক ছাড়লাম।কী নাম,কোথাকার মেয়ে,কেনই বা বাইকে বসলো এসব সন্দেহ মনের মধ্যে যে একেবারেই আসছিলো না তা নয়।আজকালকার দিনে যে কাউকে হুট করে বিশ্বাস করে নেওয়া সত্যিই দুস্কর!তার ওপর আবার একজন মেয়ে।যা থেকে আমি শত হস্ত দূরে থাকি।যে কারনে মাঝে মাঝে ওই লুকিং গ্লাসে খেয়ালও রাখছি মতিগতি বোঝবার জন্য।এই ভাবে দু একবার নজর রাখতে গিয়ে আচমকা লুকিং গ্লাসের মাধ্যমেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলে পর আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।মেয়েটা তা বুঝবেনা তা কী আর হয়।হঠাৎই
সে পিছন থেকে তখন মৃদু গলায় বলে উঠলো-,


-ধন্যবাদ।একটা অচেনা অজানা মেয়েকে এতখানি সাহায্য করলেন।
-আরে না না তা কেন..


হালকটা পাশে মুখ ফিরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে উত্তরটা দিতে গিয়ে বুকের ভেতরটায় যেন একবার বিদ্যুৎএর তরঙ্গ খেলে গেলো।মেয়েটাকে এক ঝলকে মুখের স্কার্ফ খোলা অবস্থায় দেখার ফল।কী অদ্ভুৎ!সে যে প্রকৃতির মতই সুন্দর। এত রূপ,এত রঙ কই আগে দেখিনি তো...মেয়েটার পরের প্রশ্নের উত্তরটা দিতে রীতিমতো আমি থতমত খেয়ে যাবারঅবস্থা।


-আপনার কি এদিকেই বাড়ি?না কি কাজে?
জীভের পেশিগুলো তখন এতটাই কাঁপছে যে কী জবাব যে দেবো তা-ই ভেবে উঠতে পারলাম না।
-সরি,প্রশ্নটা ব্যক্তিগত করে ফেললাম মনে হয়।আসলে না আমি চুপচাপ থাকতে পারিনা একদম।কিছু মনে করেন নি আশা করি।



-না না,এভাবে বলছেন কেন,আসলে সামনে ওই যে বাইকটা এসে পড়লো আর আমিও...
কী আর বলতাম,কিছু তো একটা গোঁজামেলে বলতে হত।
-আসলে আমি এদিকে একটা জিনিসের খোঁজে এসেছি..
-ও আচ্ছা আচ্ছা।আর আমি ফিরছি বিরাটি থেকে।ওখানে থেকে কাজ করি টাটা মোটরস এ জুনিয়ার একাউট্যান্ট..





আমি কিছুই জিজ্ঞেস করিনি অথচ মেয়েটা নিজে থেকেই সব গড়গড় করে বলে দিলো দেখে সত্যি বুঝলাম মেয়েটা অন্যদের তুলনায় আলাদা বেশ খানিক আর ইউনিকও..তা ওকে দেখবার পর থেকে মনের ভেতরটা কেমন যেন একটা করছিলো তো বটেই,তার ওপর কথাবার্তা শুনে টুনে আরও যেন মনের ভেতরের সেই কেমন হওয়ার মাত্রাটা বাড়ছিলো।




-আপনার বাড়ি তাহলে কোথায়?
-তারকেশ্বর।
-আমি তারকেশ্বর স্টেশন হয়েই তো আসি।আজও এলাম।

ওদিকে এখন শ্রাবণী মেলার জন্য প্রচন্ড ভীড় হচ্ছে তো ট্রেন গুলোয়,তাই তো আগের বাসটা ধরতে পারলাম না..
কথাটা শেষ করতে না করতেই মেয়েটা নিজের জীভ কাটল আর আমি তা লুকিং গ্লাসে লক্ষ্যও করলাম।কারনটা সেও বুঝেছে আর আমিও..



-আপনি যে বললেন বাস চলছে না...?
মেয়েটার মুখের অবস্থাটা তখন দেখবার মত।মিথ্যে বলার অপরাধে লজ্জায় যেন তার মাজালো ফর্সা মুখখানা ফিকে লাল হয়ে উঠলো।আর মিথ্যে যে সে বলেছে তার প্রমান দিতে ঠিক সেই সময় একটা বাস আমাদের ওভারটেক করে বেরিয়ে গেলো।




-কী ব্যাপার,সত্যি করে বলতে পারেন।আপনাকে কোনো ভাবেই দেখে শুনে মনে হয়না আপনার কোনো খারাপ কিছু মতলব আছে টাছে..সত্যিটা বলতে পারেন..আমি বাইকে থেকে নামিয়ে দেবোনা কথা দিচ্ছি,যতদূর ছেড়ে আসবার কথা দিয়েছি এটলিস্ট দিয়ে আসবো।




এবার মেয়েটা হালকা ব্রাউন লিপস্টিক করা তার ঠোঁটের ওষ্ঠ অধোর আলগা করে বললো-
-ট্রেনের অত ভীড়ে আমার হাতব্যাগ থেকে ওয়ালেটটা চুরি হয়ে গেছে।শুধু কপাল ভালো কী যে ভুল করে আমি ফোন টা এই কাঁধের ব্যাগে রেখে ছিলাম...নয়তো ওটাও যেত..
-বুঝতে পারেননি?





-আসলে আমি না একেবারে টাল একটা..এমন করে কত কী যে হারিয়েছি...এদিকের বাসি উঠে পড়েও জানিনি যে আমার ওয়ালেট আর আমার হাত ব্যাগটার মধ্যে নেই।বাস ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি হাতব্যাগের চেন হাঁ করে খোলা।তাই তো বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছিলো ওখানে।
মেয়েটার কথা বলার মধ্যে একটা নাটুকে নাটুকে ব্যাপার আছে,তাও সেটা বেশ উপভোগ্য।মানে টাকা হারিয়ে ফেলে ছে,বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে,..এমন ভাবে বলছে যেন অন্য কারো গল্প আমায় শোনাচ্ছে।নিজের একটুও কষ্ট হচ্ছে না।



-তার মানে মিথ্যে বলেছিলেন আমায় তো?
-পরিস্থিতির বিচারে এটাকে কী মিথ্যে বলা চলে আপনি বলুন?
-সে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন,মিথ্যে তো মিথ্যেই হয়..
-কিন্তু,এই ধরুন রোদ।গরমকালে আমরা একেবারে সহ্য করতে পারিনা।কিন্তু,শীতকালে আবার সেই রোদ্দুরই প্রিয় হয়ে যায় কতখানি।সবই তো পরিস্থিতির হিসেবে হয় তাইনা।




-তার মানে আপনার মিথ্যেটাকে আমায় মেনে করতে হবে?
-একজন অবলা মেয়ের উপকারে এলেন,এতে করে কতটা পুন্য লাভ করলেন তা কী আর আপনি জানেন!
কখন যে কথায় কথায় ওর সঙ্গে এতটা মিশে গেলাম জানি না।জয়পুর আসতে করতে মেয়েটা অনেকখানি বন্ধুর মত হয়ে উঠেছিলো আমার কাছে।এত অল্প সময়ে সত্যি এটা ঘটবে আশা করিনি।জয়পুরে পৌছে আমি বাইকটা রাস্তার এক প্রান্তে দাঁড় করলাম।মেয়েটা বাইক থেকে নেমে পাশেই দাঁড়ালো।




-ফোন করলেন বান্ধবীকে?
-ওটাই করবো কিন্তু আমার ফোন ডেড..তাড়াহুড়োতে আজ চার্জটাও..
আমি পরিস্থিতি বুঝে আমার ফোনটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিতে ও আবার গদগদ গলায় -
-থ্যাংক ইউ এগেন।



দু পাঁচ মিনিট সময় যতক্ষন ও ফোনে লাগালো আমি পাশে সরে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালালাম।সিগারেটটা টানছি আর ভাবছি,কিছু তো একটা জাদু আছে মেয়েটার মধ্যে যে কিনা আমাকে এত সহজে তার কথার সাথে জড়িয়ে ফেলল।আড় চোখে চোখে কয়েকবার দেখেও নিলাম।বাঁ চোখের নীচে একটা ছোট্ট তিলও আছে,যা আগে খেয়াল করিনি। আর একটা বিশেষ ব্যপার-যা সবার থাকেনা,একটা স্মেল। খানিকটা দূরে যেতে অনুভব করলাম যে কিছু একটা যেন মিসিং,যা মেয়েটা থাকাকালীন ছিলো।



-ফোন তো লাগছেইনা..
বিরক্তি ভরা কন্ঠে কথাটা কানে আসতেই অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া আমি সিগারেটটা অজান্তেই যেন ফেলে দিয়ে -
-কী বললেন,ফোন লাগছেনা...এবার তাহলে?
-আর কয়েকবার দেখি..আবার আপনাকেও তো ছাড়তে হবে..
মেয়েটা আরও কয়েকবার ট্রাই করেও তার বান্ধবীকে কলে পেলো না।ওর চোখ মুখ দেখে বুঝলাম এবার ওর ভেতরেও
একটা চিন্তা কাজ করছে।
-কী করবেন ভাবলেন কিছু?
-আচ্ছা,আমি কী অর্পিতার নম্বরটা ভুল ডায়াল করছি বারবার?
-সে তো আপনিই জানেন...
-আমিই জানি তাই না..
বলে একমাথা চিন্তা নিয়ে মাথার চুলে আঁকিবুকি কাটতে আরম্ভ করলো।চিন্তা যে প্রবল জমেছে তা শেষ কথাটা শুনে ই বুঝেছি।
-আচ্ছা,আমি বলি কী,বাস তো চলছে।এখান থেকে আরাম সে যেতে পারবেন।এই তো সবে সন্ধ্যা।
-তা পারবো,কিন্তু...
-বুঝেছি..
বলে আমি আমার মানিব্যাগ থেকে একটা দুশোর নোট বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে-
-আর থ্যাংক ইউ বলার প্রয়োজন নেই,দ্বিধা বোধ না করে এটা নিন,আর পরের বাসে উঠে বাড়ি চলে যান।




মেয়েটা একটু দ্বিধা বোধ করলো বটে তাও টাকাটা হাতে নিয়ে একগাল বড় মুখ করে মিষ্টি হেসে থ্যাংক ইউ টা বলেই ছাড়লো তৃতীয় বারের জন্য।মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটা বাস আসতে দেখা গেলো।মেয়েটা তা দেখে আমার দিকে চেয়ে বললো-
-ফোন নম্বরটা দিন।
-কেন?টাকা ফেরত দেবেন বলে?
-না,আপনি তো চিন্তা করবেন ঠিকঠাক বাড়ি ফিরলাম কি না।তাই গিয়ে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে আপনাকে জানাতে হবে না।
এবার আমি আর হাসি ধরে রাখতে পারলাম না।সত্যি কথা জানে বাপু মেয়েটা।
-৯৭৪৯...মনে রাখতে পারবেন তো,নইলে আমি কিন্তু চিন্তায় মরে যাব।
সুযোগে আমিও একটু মজা করে নিলাম আর কি।
মেয়েটা বাসে উঠতে উঠতে বললো-
-মগজ ভীষণ পরিস্কার।যা একবার মনে ঢুকে যায়,তার আর বেরোনোর জো নেই।




মেয়েটা উঠে জানালার ধারে সীটে বসলো।বাসটা তখনও ছাড়েনি।আমি সেই সুযোগে-
-আমার কিন্তু ফোন পে গুগল পে ওসব নেই।টাকা ফেরত দিতে হলে দেখা করেই দিতে হবে।
-তারকেশ্বর তো? শুনেছি ঠাকুর ওখানে ভীষন জাগ্রত..
এই শেষ কথাটা যে কেন সে আমায় বললো তা বুঝতে পারিনি। একটা ছোট্ট হাসি আর হাতনাড়া দিয়ে সে চোখের সামনে থেকে বিদায় নিলো।ওর বিদায়ের মুহুর্তে আমার বুকের মধ্যে তখন একটা সুপ্ত বাসনা মাথাচাড়া দিয়েছিলো এই যে,ও যদি আরও একটু সময় সাথে থাকত..
ক্লাস নাইনের টিউশন ব্যাচটার পরীক্ষা নিয়েছিলাম,ওদেরই খাতা দেখছি তখন।রাত কটা হবে,ওই নটা দশ পনেরো বা কিছু বেশ।আচমকা ফোনের ঘন্টিটা বেজে উঠলো।অচেনা নম্বর।ট্রু কলার দেখাচ্ছে স্নিগ্ধা।আরও দুবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলাম।



-হ্যালো..
ও প্রান্ত থেকে উত্তর এলো-
-ডাক্তারবাবু আমি না আগামী রবিবার অসুস্থ হবো,আপনি কী এমন কোনো মেডিসিন দিতে পারবেন যাতে না অসুস্থ হয়ে পড়ি।
এ কে,কী বলছে!কোন পাগল নাকি!
-প্রথমত আমি ডাক্তারবাবু না।আমি একজন টিচার।আর দ্বিতীয়ত আপনার সমস্যা যা তাতে সত্যি একজন মানসিক চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা আপনার উচিৎ।



-হুমম।তাই তো মনের ডাক্তারকে কল করেছি মাশটার মশাই।বলছি আপনি তো পড়ান।একটা নতুন ছাত্রী
কে ভর্তি নেবেন?
আচমকা গলা বদলে যখন মেয়েটি এই শেষে কথাগুলো বললো তখন বুঝলাম ওটা সেই মেয়েটা যার সাথে আমার সদ্য আলাপ হয়েছে রাস্তায়।আর তা বুঝতে পেরেই আমিও ওর মত করেই উত্তরটা দিলাম-
-এমন ছাত্রীকে ভর্তি নিলে আমার পাগল হওয়া নিশ্চিত..



মেয়েটা এবার হাসলো।
-জানেন তো,কথায় আছে,লার্কি হাসি তো ফাসি..
-আপনাকে দেখে যতটা বোকা ভাবছিলাম ততটা বোকা নয়
তাই না?
-সে কি আমি যে ছেলেমানুষ..
-বয়স কত হলো শুনি..
-বয়স তো মাস্টার ডিগ্রি কিন্তু মনটা আজও ক্লাস নাইন..
-বাবাগো,তা স্যার,ডিস্টার্ব করলাম নাকি?
-তা তো একটু করেইছেন..
-শাস্তি দিতে হলে দিন তাহলে...
-এক মিনিট চুপ থাকুন তাহলে..একটা খাতা দেখছি..জাস্ট
নম্বরটা কাউন্ট করে নিই...
-যথা আজ্ঞা মাস্টারজি..
ঠিক মিনিটখানেক পর আমিই ফের বললাম-
-চুপ থাকতেও জানেন তাহলে...
-মিষ্টি করে বললে সবই পারি..
-তা আপনার এত সুন্দর নাম তো আগে বলেননি?
-আপনি জানতে চাননি..তাই..
-আমি শুভঙ্কর।
-আমি কী জানতে চেয়েছি..??
-আমি আপনাকে বলিওনি..
-তবে?
-নিজেকে মনে করালাম।
-কেনো ভোলার স্বভাব আছে নাকি?
-আপনার মত অতটা না..
-কই,নম্বর টা তো ঠিক ঠাকই মনে রেখেছি...আচ্ছা,বাজে বকা একটু বন্ধ করুন।টাকাটা কীভাবে ফেরত দেবো বলুন?
-কীভাবে চাইছেন দিতে?
-যেভাবে আপনি চাইবেন...
-৩ ঘন্টার ইন্টারেস্ট সমেত দিতে হবে..
-ইন্টারেস্ট কত হয়েছে?
-এক গাল মিষ্টি করে হাসি...
-এমন সুদখোর ব্যাংকার তো দেখিনি আগে...
আমার মুখ দিয়ে একটা ফিক করে হাসি বেরিয়েই পড়লো।
-লর্কা হাসা তো ফাসা..
-কথার ফুলঝুরি..
-আপনিও কম যান না..
-দেখে শেখা..তা কবে যেন আপনি অসুস্থ হচ্ছেন যেন?
-আগামী রবিবার।আপনি আপনার যাবতীয় কাজ ফাঁকি দিয়ে তারকেশ্বর স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করবেন।ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ করতে আসবে।




-তাই নাকি?
-আজ্ঞে...এবার আপনি আপনার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা দেখুন নিশ্চিন্ত মনে।তারপর আপনার পরীক্ষা হবে।
দিন তো জানিয়েই দিলাম।
-সিলেবাস সম্পর্কে জানলামই না ভালো করে পরীক্ষায় উত্তর দেবো কী?
-এটা সিলেবাস জানারই পরীক্ষা...পাস করলে সিলেবাস পাবেন...তারপর স্টাডি করবেন।
-এই স্নিগ্ধা কী বলছেন?
-এই শুভঙ্কর..মেয়েরা এত সহজে ধরা দেয়না।কিন্তু,আপনি না একেবারে অন্য জিনিস।ম্যাজিক ফ্যাজিক জানেন না কী বলুন তো....কালাজাদু করে দিয়েছেন দেখছি এক বেলাতেই।
-সত্যি বলতে কী আপনিও..দেখাটা আমিও করতে চাইছি ভীষনভাবে।



রবিবার সময় মতন আমার আর স্নিগ্ধার দেখা হলো নির্দিষ্ট জায়গায়।যখন সামনে এলাম দুজন দুজনার।কেউ কাউকে দেখে যেন পলক ফেরাতে পারিনা।যেন কত জন্মের চেনা। যেন কত যুগের পর দেখা..পলকের নীরবতা ভেঙে প্রথম আমিই প্রশ্নটা করলাম-
-অসুস্থ লাগছে না তো?
-ডাক্তার তো সামনেই আছে ভয় কী?
-এত দ্রুত হিসেব মেটাতে আসবে ভাবিনি...
-কে বলেছে হিসেব মেটাতে এসেছি...আরও কিছু ধার চাই, আপনি দেবেন তো?
-ইন্টারেস্টটা একটু বেশি নেবো..
-তা কত বেশি নেবেন?
-ওই যেমনটা আগের বার ধার্য্য ছিলো,একগাল মিষ্টি হাসি সাথে একফালি বিশ্বাস...ব্যাস এতটুকুই..
-মঞ্জুর হ্যা..

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন