'-এক্সকিউজ মি।'
-'আমি?..হ্যাঁ,বলুন।'
-'আপনার dslr টা একবার পেতে পারি কী?'
সদ্য কয়েকসেকেন্ডের পরিচিত মেয়েটাকে আমার dslr টা ভরসা করে দেওয়ার খুব যে ইচ্ছে ছিলো তা নয়,তবু সে যেহেতু কয়েকটা মাত্র ছবি তুলবে বলে কিছুক্ষনের জন্য dslr টার দাবি করছিলো তাই আর না করিনি।
মেয়েটা তার বান্ধবীর হাতে dslr টা দিয়ে সৌধের সামনের দিকের সিঁড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে তাকে ছবি নিতে বলল।কয়েকটা ছবি নেওয়ার পর,মেয়েটার বান্ধবী তাকে বলল-'একবার এসে দেখে যা দিয়া ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা?'মেয়েটা অর্থাৎ দিয়া,বান্ধবীর কাছে এসে dslr এ একচোখ রেখে তার বান্ধবীকে বিরক্তির ভঙ্গিতে বলল-'একটা ছবিও ভালো হয়নি,সব ক'টাতেই সৌধের চূড়ো বাদ দিয়ে দিয়েছিস।'
কথায় আছে,ছবি তোলা একপ্রকার আর্ট।সবার দ্বারা সে সেব হয়না।আমি ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে dslr টা দিয়ার হাত থেকে নিয়ে বললাম-'যাও,তুমি দাঁড়াও গিয়ে,আমি তুলে দিচ্ছি।'
দিয়া ফিরে গিয়ে দাঁড়ালো।আমি ক্যমেরায় চোখ রেখে তার মুখটায় ফোকাস করতেই তার মুখ থেকে আর চোখ সরাতে পারলাম না।অজান্তেই সেই মুহূর্তে একের পর এক ছবি ক্লিক করলাম।
ফিরে এসে দিয়া ছবিগুলোকে দেখে বেশ উৎসাহিত হয়ে আমায় বলে ওঠে-'সত্যি অসাধারন হয়েছে ছবিগুলো।পারফেক্ট বললেও কম বলা হবে।
'আমি মেয়েটাকে বললাম-' থ্যাংকস।ইটস্ মাই প্লেজার।'
আলাপ পরিচয় এর পর্বটা, ভালো ছবি তোলার দৌলতেই একটু তাড়াতাড়িই মিটে ছিলো।দিয়া আমায় জিজ্ঞেস করলো-'ছবিগুলো কীভাবে পাবো?'আমি বললাম -'হোয়াটসঅ্যাপ।'
দিয়া তার নাম্বারটা আমায় দিয়ে বলল-'আজ কী এখানে কোথাও স্টে করবে?'আমি বললাম-'হ্যাঁ।তুমি?'মেয়েটা বলল -'বিকালের পর কোথাও বেরোবে?'আমি বললাম -'ইচ্ছা তো আছে।'মেয়েটা বলল-'ওকে।বেরোলে আমাকেও একটা ফোন করো।আমিও আছি আজ এখানে..'
দুপুরে,হোটেলে লাঞ্চ সেরে,রুমে গিয়ে,ল্যাপটপেতে dslr এর মেমোরি কার্ডটা লাগিয়ে,দিয়াকে ছবিগুলো হোয়াটসঅ্যাপ এ সেন্ড করতে আগে ওরগুলোকেই কপি করতে আরাম্ভ করলাম।
নীল রঙের কামিজে, কাঁধের ডান দিকে এলানো চুলে দিয়াকে সত্যিকারের অসম্ভবা লাগছিলো।তাই আর একবার ওর সঙ্গে দেখা করবার ইচ্ছাকে আমি দমন করতে পারলাম না।আর তাই ছবি গুলো হোয়াটসঅ্যাপ এ পাঠালাম না।কপি করলাম পেনড্রাইভ এ।
বিকেল তখন প্রায় শেষ।আমাদের দেখা হলো।হলদে কামরাঙার মত রঙের জামায় দিয়াকে ঠিক তখনের আকাশটার মতই অন্য রকম মনে হচ্ছিলো।চুল খুলে এসেছে ও,কপালের টিপ যেন ওর মুখের লজ্জাকে প্রস্ফুটিত করছে।আসলে মেয়েদের লাজুক ভাবটাই পুরুষদের অন্তর স্পর্শ করে বড় বেশি।
আমরা পুরনো রাজবাড়ির প্রধান ফটোক অতিক্রম করে বাইরের দিকে হেঁটে চললাম আশপাশটা দেখতে দেখতে। dslr টা সঙ্গেই ছিলো।তাই ভালো কিছু চোখে পড়লে,ছবিও নিচ্ছিলাম।
দিয়া বলল -'আপনার কী ছবি তোলা hobby?'
আমি বললাম -'ঠিক hobby না।তবে,ভালোবাসি।'
দিয়া বলল- 'আচ্ছা।'কিছুটা থেমে আবার বলল-'কী করেন আপনি?
'আমি বললাম-'বুক ফুলিয়ে বলতে পারার মত কিছু করিনা।'
দিয়া তখন হাসলো।তারপর বলল-'এখানকার জিনিস কিছু কিনলেন?'
আমি উত্তর না দিয়ে- 'আপনি কিছু কিনেছেন কী?'
মেয়েটা বলল-'প্রচুর কিছু।আই লাভ টু ডেকোরেট..। '
আমি রসিকতার সুরে বললাম-'মেয়েরাতো শুনেছি নিজে সাজতে বেশি পছন্দ করে।'
দিয়া বলল-'সারাদিন কি আমায় দেখে মনে হয়েছে,আমি সাজতে খুব লাইক করি?'
আমি তখন ফিসফিস করে নিজের মনে বলে উঠলাম-'তোমার আর সাজবার প্রয়োজন কী..'
-'কী বললে?'
-'কই না তো...কিছু বলিনি আমি।'
সন্ধ্যে নামলো।দিয়া বলল-'এবার তো ফিরতে হয়।' আমি তখন আমার পকেট থেকে আমার পেনড্রাইভটা বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম-'হোয়াটসঅ্যাপ এ দিলে ছবির রেজুলেশন কমে যেত,তাই এটায় নিয়ে এসেছি।কাল যাওয়ার আগে কপি করে আমায় ফিরিয়ে দিও।'
দিয়া অত্যন্ত খুশি হয়ে আমায় বলল -'এত উপকার করলেন,যদি ফেরার পথে কোনো রেস্টুরেন্টে কিছু খাওয়াতে চাই,খাবেন কী?'
আমি বললাম-'খেতে পারি একটা শর্তে।যদি আপনি আমায় আপনার হোটেলের ডোর অবধি ছেড়ে আসবার পারমিশন দেন।'মেয়েটা বলল-'তাহলে আমারও একটা শর্ত আছে।'
-'কী শর্ত বলুন?'
-'এখন থেকে 'তুমি' বলতে হবে,আপনিটা বাদ।'
রেস্টুরেন্ট এ ফিস ফ্রাই খেয়ে দিয়াকে ছাড়তে ওর হোটেলের রাস্তা নিলাম।নতুন রকমের কয়েকটা বাড়ি চোখে পড়লো।দিয়া বলল- 'সত্যি,জায়গাটা অদ্ভুত সুন্দর এবং সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী।'আমি বললাম-'ইতিহাসের ছাত্রী নাকি?'
মেয়েটা বলল-'ছোটোবেলায় ভালো লাগতো। তবে,এই প্রথমবার কোনো ঐতিহাসিক জায়গায় এসে আমি মুগ্ধ।' আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম -'আমি তোমাতে মুগ্ধ।'
দিয়া শুনলো কী না জানিনা!আমার দিকে একবার তাকালো। তার কিছুক্ষন পর বলল-'তোমার নামটা কী জানা হয়নি।'
আমি বললাম -'যে নামে ডাকলে তোমার সুবিধা হয়..। '
মেয়েটা বলল -'তা আবার হয় নাকি?'
আমি বললাম- 'পরমব্রত।'দিয়া তখন বলল- 'হোটেল এসে গেছি।রুমে চলো।পেনড্রাইভটা কপি করে তোমায় এখনই ফেরত দিয়ে দেবো।' আমি ওর সঙ্গে হোটেলে ওর রুমে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম হোটেল স্টাফেরা আমার দিকে কেমন একটা দৃষ্টিতে যেন তাকিয়ে আছে।
রুমে গিয়ে দিয়া আমায় বসতে বলে ওর মোবাইলে ওটিজি কেবল এর সাহায্যে পেনড্রাইভটা লাগিয়ে ছবিগুলো কপি পেস্ট করে নিলো।
তারপর আমায় বলল-'এই নাও,হয়ে গেছে।'আমি উঠে পড়লাম।-'এইবার তাহলে আসি?' দিয়ে বলল-'আই লাইক ইওর কোম্পানি।খুব মেমোরেবেল সময় কাটালাম।' আমিও প্রসন্ন হাসি মুখ করে ওকে বোঝাতে চাইলাম আমারও ওর সঙ্গ বেশ লেগেছে।
দিয়া আমার হাসি বুঝলো।আমায় জিজ্ঞেস করলো-'আর কখনো কী দেখা হবে আমাদের?'
আমি বললাম-'দুজনে চাইলেই দেখা হবে।'দিয়া বলল-'ভালো মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলে আমি তাকে আমার জন্য একটা উইস করতে বলি।তুমি কী করবে?'
আমি বললাম-'ঠিক আছে।তোমার জীবনের সব ইচ্ছে পূরণ হোক।'
দিয়ে বলল -'থ্যাঙ্ক ইউ।'আমি বললাম-'এবার আমার জন্য তুমি কিছু উইস করো।দিয়া বলল-'তুমি একদিন বড় ফোটোগ্রাফার হবে।
'আমি বললাম-'এটা সম্ভব কিনা জানিনা,তবু যদি কোনোদিন এটা সত্যিও বা হয়,তবে তোমার কথাই প্রথম মনে পড়বে।'
যাওয়ার সময় দরজার মুখে দিয়া আমায় ছাড়তে এলো।আমি তাকে বললাম-'কাল কখন ফিরছো?'
দিয়া বলল-'ফিরবো না তো।এখান থেকে সোজা ব্যাক টু ওয়ার্ক।'
আমি জিজ্ঞেস করলাম-'কী করো তুমি?'
দিয়া বলল-'সেটা বললে,তুমি আমার সঙ্গে আর কথাই বলবেনা।'
আমি বললাম-'তা আবার হয় নাকি?আচ্ছা,তোমার বান্ধবীকে দেখতে পাচ্ছিনা..?
'দিয়া বলল-'আমি একজন বাজে মেয়ে।আর বান্ধবী চলে গেছে ওবেলা,রাতে ওর অন্য জায়গায়..।'
আমি বললাম-'বাজে মেয়ে মানে?'দিয়া বলল-'বাজে মেয়ে মানে বাজে মেয়ে।আমি শরীর বিক্রি করে জীবন চালাই।'
আমি দিয়ার উত্তর শুনে তখন মুহুর্তের মধ্যে যেন অসার হয়ে পড়লাম।ঘোর ফিরতেই একসেকেন্ড ওখানে আর দাঁড়ালাম না।
আমি হোটেলে ফিরলাম।সোজা স্নানের ঘরে।স্পিডে সাওয়ার চালালাম।ছটফটানি হচ্ছে খুব।কী করেছি আমি?সারাদিন এ আমি কার সঙ্গে ঘুরেছি?মাথা যেন কাজ করছে না।
সিক্ত অবস্থায় বিছানায় এসে সিগারেট জ্বালালাম।মোবাইল এ হোয়াটসঅ্যাপ অন করে দিয়াকে ব্লক করে দিলাম।কিছুক্ষন পর একটু শান্ত হতে ফের দিয়ার মুখটাই চোখে ভেসে উঠলো।সারাদিনের কথাগুলো মনে পড়লো।কী পাপ করেছে মেয়েটা?সে যদি না আমায় জানাতো,আমি তো প্রায় তার প্রেমেই পড়েগিয়েছিলাম।
তার সাথে সময় কাটানোর পর আমি ভালোবাসাকে উপলব্ধি করেছি, তাহলে? না,না,ঠিক করছিনা আমি।নিঃশ্চই ওর কোনো বড় সমস্যা ছিলো জীবনে,নইলে কী আর...।
দিয়াকে আবার আনব্লক করলাম।ক্ষমা চাইতে হবে ওর কাছে,ওর সম্বন্ধে আমিও খারাপ ভেবেছি এতক্ষন।হাত থরথর করছিলো,তবু লিখলাম-'আই এম সরি..' দিয়া অন ছিলো।
আমায় রিপ্লাই দিলো-'আর কী কখনো দেখা করবে আমার সঙ্গে?'
আমি বললাম-'খুব শিগ্রি।'
তারপর আবার বললাম-'একটা কথা রাখবে?'
দিয়া বলল- -'কী বলো?-
'আমি তোমার জন্য একটা কবিতা লিখে ফেলেছি আজ দুপুরে।শুনবে?'
-'তুমি কবিতাও লেখো?'
আমি বললাম-'তোমায় দেখবার পর আজ প্রথম লিখেছি...।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন