শনিবার, মার্চ ৩০

বৌদির বোন পর্ব 2

 




সকাল হতে না হতেই সবাই উঠে পড়ল। বাড়ি আবার গমগম করতে লাগল। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। 

অর্কর নিজেকে কেমন ছোট মনে হতে লাগল। নিজেকে কেন যে সামলাতে পারল না।কি ভেবেছে তাকে ইন্দ্রাণী কে জানে?  তবে কাউকে কিছু বলবে না সেটা নিশ্চিত। 

 

এর মধ্যে কয়েকবার ইন্দ্রাণীর সামনাসামনি হয়েছে। 

মুখ তুলে তাকাতে পারেনি লজ্জায়।

অথচ ইন্দ্রাণীর যেন কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।

সাবলীল তার চালচলনে কিছু ঘটেছে মনেই হয় না।

দিব্বি সবার সাথে কাজকর্ম সামলাচ্ছে। 

অর্ক খবরের কাগজ নিয়ে সোফায় বসে। 

 

চোখ কাগজে ঠিকই কিন্তু চোখে অক্ষর নয়ভাসে অন্যকিছু।বৌদির সুন্দরী তন্বী যুবতী বোনটা তার সত্তাকে গ্রাস করছে যেন আস্তে আস্তে।রাতের সব কথা মনে হতেই শরীরে বিদ্যুতের তরঙ্গ বয়ে যায়।বারবার মনে হয় ইন্দ্রাণীকে জীবনের সঙ্গী করতে পারলে সে ধন্য হয়ে যায়। 


ইন্দ্রাণী বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। 

গ্রিল দুহাতে ধরে তাকিয়ে রইল বাইরের দিকে। 

সকালের বাইরের দৃশ্য দেখছে যেন।সামনে ধরা খবরের কাগজের পাতার আড়ালে অর্ক আড়চোখে দেখে তাকে। 

ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে বলে---

"তোমাকে চাইভীষণভাবে চাই। তোমাকে ছাড়া  জীবন যে অসম্পূর্ণ।

সাহস হয় না। 

একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে শুধু।  


আচমকা মুখ ঘুরিয়ে পিছনে তাকায় ইন্দ্রাণী। 

সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় অর্ক। 

মুচকি হেসে ইন্দ্রাণী বলে ওঠে---"কি দেখছিলে অমন করে?" ---"কই কিছু না তো?"  

ইন্দ্রাণী গম্ভীর হয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলে---

"ঠিক আছে বলতে হবে না। আমি কে যে সব বলবে আমাকে?"  

ইন্দ্রাণী ঘরে চলে গেল। 

অর্ক মনে মনে ভাবে---"কি করে যে বলি তুমি কে আমার?  আমার সত্তা যে তোমাতে বিলীন হতে চাইছে গো।

 

বিকেলে সবাই চলে গেল। জীবন স্বাভাবিক ছন্দে চলতে লাগল।শুধু অর্কর সব কেমন ওলোটপালট হয়ে গেল। সারাক্ষণ ইন্দ্রাণী তার ধ্যানজ্ঞান। রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুম আসে না। কল্পনার ভেলা ভাসিয়ে ভেসে চলে অজানার পথে।


ভাবে একেই কি বলে ভালবাসা

দাদাবৌদি মধুচন্দ্রিমা করতে যাবে ঠিক হল নৈনিতাল। 

বৌদির তাতে আপত্তি।  

সবাই বোঝালো। কিন্তু বৌদির এক কথা। 

এতদিন যা হয়েছে সে ঠিক আছে। 

কিন্তু বৃদ্ধ শ্বশুরকে রেখে সে কিছুতেই যেতে পারবে না। 

 

 

দুবাড়ির মধ্যস্থতায় ঠিক হল ইন্দ্রাণী কদিন  বাড়িতে থেকে সব  সামলে দেবে। ইন্দ্রাণীও তাতে আপত্তি করে না।  

ফলে সমস্যার মোটামুটি একটা সমাধান হয়। ঠিক সময়ে চন্দ্রানীরা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। 

দাদা বেরোনোর সময় অর্ককে বলে---

"নতুন বাড়িতে ইন্দ্রাণীর সব জানা নেই।  তুই ওকে একটু হেল্প করিস। আর বাবার ওষুধগুলো সময় মতো মনে করিয়ে দিস।

ইন্দ্রাণীকে দিদি ফোনে সব বুঝিয়ে দিয়েছে আগের দিন। 

তাদের ঘরেই তার থাকার ব্যবস্থা।তারা বেরিয়ে যাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাবার সাথে ইন্দ্রাণী এসে হাজির হল। 

 

 

তাকে পৌঁছে দিয়ে দুচারটে কথা বলে ইন্দ্রাণীর বাবা বিদায় নিল।ইন্দ্রাণী নিজের জিনিসপত্র দিদির ঘরে রেখে পোশাক বদলে নিল।

সাদার উপর প্রিন্টেড নাইটি পড়া ইন্দ্রাণীকে যেন আরও সুন্দরী মনে  হল অর্কর। যেন ফ্লাওয়ারভাসে সাজানো রঙিন গোলাপ নয়।  

বাগানে ফুটে থাকা সুগন্ধি বেলফুল। 

 ছিঁড়তে মন চায় নাকিন্তু ছুঁতে ইচ্ছে করে। ইন্দ্রাণী খুব সহজেই যেন সংসারের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল। 

 

 

 

সারাদিন সবকিছু নিখুঁতভাবে সামলাতে লাগল। 

অর্ক তার সাথে সাহায্য করতে লাগল। 

আর সেইসাথে চলল খুনসুটি।  

রান্না করতে গিয়ে মশলার কৌটো খোঁজা এক ঝকমারি। 

সে ব্যাপারে অর্ক খুব সাহায্য করল। 

অর্ক আসলে রান্নাটাও ভালোই করতে পারে।

মা গত হবার পর করতে হয়েছে অনেক সময়ই।যদিও রান্নার লোক ছিল তবু কোনোদিন তার সমস্যা হলে অর্ককেই  সামাল দিতে হত।

 একসাথে কাজ করতে গিয়ে একটু আধটু ছোঁয়াছুঁয়ি হচ্ছিল মাঝে মাঝে। অর্কর মনে হচ্ছিল সেটাও যেন বড় প্রাপ্তি।সে অন্য কাজে এদিকওদিক হলে নানা ছুঁতোয় ইন্দ্রাণী ডাকছিল তাকে। 

 

 

 

বাবাও বকল দুএকবার। সত্যিই তো মেয়েটা একা একা কি করে পারবে

কোথায় কি তাইতো জানে না। 

অর্ক তাড়াতাড়ি গিয়ে বলে---

"কি হল?" 

----"আরে হলুদ খুঁজে পাচ্ছি না তো।" ----

"চোখ বন্ধ করে খুঁজলে কি করে পাবে?" ----"তাই বুঝি?"  

অর্ক হলুদের বোতল হাতে তুলে দেয়। 

বলে---"রং দেখতে পাচ্ছ তো?  মানে চিনতে পারছ তো হলুদ?"  

ইন্দ্রাণী এক কিল বসিয়ে দেয় তার পিঠে। দিন শেষ হয়।সন্ধ্যেবেলা বাবার ঘরে বসে গল্প করে তিনজনে। 

 

 

 

রাতের খাওয়াদাওয়া  বাড়িতে রোজই দশটার মধ্যে হয়ে যায়। 

আজও তার ব্যতিক্রম হল না। 

অর্ক বাবাকে রাতের ওষুধগুলো সব খাইয়ে দিল। 

ওষুধের মধ্যে একটা আবার ঘুমের ওষুধ।এখন না ঘুমিয়ে পড়লে সারারাত আর ঘুমই আসবে  না। তাই তাড়াতাড়ি লাইট অফ করে বেরিয়ে এল। 

ইন্দ্রাণী অদ্ভুত কান্ড করল। 

বাবাকে বলল--"আপনি ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই 

বাবা আপত্তি করলকিন্তু ইন্দ্রাণী শোনার পাত্রী না। 

অর্ক কিন্তু তার আচরণে খুশি হল। 

স্ত্রীর কাছে এমনটা অনেকেই আশা করে। 

তারপর হাসি পেল তার। কিসব ভাবছে সে। 

 

 

 

নিজের মনেই বলল "গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল"বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে গেল না সে। 

ইন্দ্রাণী এখনো বাবার ঘরে।  

তাই বারান্দায় সোফায় গিয়ে বসল। 

রাতের আকাশটা বড় মিষ্টি।শান্তস্নিগ্ধ নীল আকাশ জুড়ে রাশিরাশি তারা মিটমিট করে জ্বলছে নিভছে।যেন মজা করছে অর্কর অবস্থা দেখে। 

 

 

 

বলছে প্রেম যদি জাগল মনে লুকিয়ে রেখে কি লাভ?  

রাতের আকাশ এভাবে দেখেনি সে আগে কোনোদিন।  

হারিয়ে গিয়েছিল প্রকৃতির রূপে। 

সম্বিত ফিরল ইন্দ্রাণী এসে পাশে বসতে। 

বলল---"বাবাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলে তাহলে। চলআমরাও শুয়ে পড়ি।"  ----

"তোমার ঘুম পেলে যাও। আমি একটু বসব।

অর্ক যায় না। এমন মিষ্টি সময়ে ইন্দ্রাণীর পাশে বসে থাকতেই  তার তো মন চায়। নেহাত বলতে হয় বলেই কথাটা বলেছে। 

তাকে বসে থাকতে দেখে ইন্দ্রাণী বলে---

"কি হল যাও। সময় মতো না ঘুমালে আবার তোমার শেষে ঘুম আসবে না।" ----

"তা ঠিক। আর আমাকে তো কেউ ঘুম পাড়িয়ে দেবে না।" ----

"খুব সখ তাইনা

সিগন্যাল তো ক্লিয়ার। ঘুম পাড়ানোর লোকের ব্যবস্থা করে ফেল। বলব নাকি মেশোমশাইকে?" 

----"অত উপকার করতে হবে না।" ----

"বেশ করব না। তবে আজ তোমার বাসনা পূর্ণ করি তো। চলঘরে চলশোবে।" ----"নাএকদিন বাসনা পূর্ণ করে অভ্যেস খারাপ করে পরে কষ্ট হবে।" ----"ওরে জ্ঞানপাপী তাহলে সেদিন ওভাবে অভ্যেস নষ্ট করেছিলে যে।

----"কোনদিন?" ----

"ভুলে গেছথাক তাহলে আর মনে করতে হবে  না।

----"প্লিজ বলো। নাহলে সত্যিই আমার ঘুম হবে না।" ----"ফুলশয্যার রাতে কি করেছ মনে নেই?" ----"কি আসলেসুযোগ পেয়েই তো হামলে পড়েছিলে।" ----

 

 

 

"তুমি খুব খারাপ ভেবেছ তাইনা?" 

----"ভালো ভাবার কথা ছিল বুঝি?" ----

"আমি---আমি---আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।

----"অত সহজে ক্ষমা হয়না মশাই।" ----

"তাহলে কি করলে হয়?" 

----"আমার প্রশ্নের সত্যি উত্তর দিলে ভাবতে পারি।" ---

"বেশতো বলো কি প্রশ্ন?" 

----"আকাশটা কি সুন্দর লাগছে তাই না?" ----

"তা লাগছে। কিন্তু তোমার আসল প্রশ্ন?" 

----"কিভাবে বলি তাই ভাবছিভাববে শেষে আমি একটা যাতা।" ----

"একদম না। তুমি বলো।"

 ----"সত্যি বলতো সেদিন তোমার ভালো লাগেনি?" ----

"লেগেছে তো। কিন্তু তোমার খারাপ লেগেছে যে।

----"বলেছি বুঝি?" ----

"একটু  আগেই তো বললে।

----" তা হবে। দাঁড়াও আসছি।"-- 

বলে ইন্দ্রাণী ভিতরে গেল। 

আর অর্ক বসে রইল তার ফেরার অপেক্ষায়।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন