সোমবার, মার্চ ১৮

কে আপন কে পর (পর্ব দুই)

  


সেই রাতেই বড়ো গাড়িতে করেঅন্ধকার জমির পাশ দিয়ে চলে যায় মিহিরা শহরেযাওয়ার পথে গাড়ির আলোয় শুধু একঝলক চোখে পড়ে অর্ককে। 

সেই সাইকেলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার এক ধারে

সেই সাইকেল চড়ে মিহিরা কতোবার ওর সাথে গেছেগ্ৰামের বাইরের মেলায়যাত্রা দেখতে। 

কতো গল্প করেছে তারা সেই সাইকেল দাঁড় করিয়েভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে কতো আলোচনা!

 বড়ো গাড়িটা করে যেতে যেতে সেই স্বপ্নগুলো আবার উঁকি দিতে থাকেযে স্বপ্ন সমাধিস্ত হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে।

 

 

 

এই বাড়িটা অনেক বড়োঅনেক ঘর , মিহিরা কোনোদিন এতবড়ো বাড়ি দেখেনি। 

অবাক হয় মিহিরাএতবড়ো বাড়িতে মাত্র একটা মানুষ বাস করে

না একটা নয় তিনটে মানুষএকজন সারাক্ষণের রান্নারআর একজন কাজের মানুষও থাকে। 

সেই রাতে  বুড়ি পিসিমাও শোন ওর সাথেআর বকবক করতে থাকেন।

 কিন্তু মিহিরার কানে কোনো কথাই যাচ্ছিলনা। যাবেই বা কিকরে মিহিরা সারা রাত কাঁদে আর স্বপ্ন দেখে নিজেকে অর্কের হাতে সমর্পণ করার।

 

 

 

 

পরদিন সবাই যে যার বাড়ি চলে যায়। 

এই এতটা সময় একবারো লোকটাকে তাকিয়ে দেখেনি মিহিরা। 

ঘেন্না করে লোকটাকে ওর। এবার ভয় করে মিহিরার। 

এই এতো বড়ো বাড়িটাতে এই লোকটার সাথে একাসবাই চলে গেলে লোকটা আসে ওর ঘরে।

 

 

 

ফুল দিয়ে সাজানো খাটের এক কোনে জড়সড় হয়ে বসে থাকে মিহিরা। 

লোকটা যদি এখন ওর কাছে আসে

যদি ওর সাথে সেসব কিছু করতে চায়যার স্বপ্ন  অর্কের সাথে দেখে এসেছে

বিছানার চাদরটা চেপে ধরেদম বন্ধ করে বসে থাকে মিহিরা।

 

 

গলাটা একটু ঝেড়ে লোকটা একটা চেয়ার টেনে এনে ওর সামনে বসে। 

"মিহিরাভারি সুন্দর নাম তোমার। আমার প্রথম স্রীরও নাম ছিলো মিহিরা। 

আমি জানি তোমার খুব রাগ হচ্ছে আমার ওপর

কেন আমি তোমার মতো মিষ্টি আর কমবয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করলাম।

 আসলে তোমাদের গ্ৰামে একটা জমি কিনতে গিয়ে তোমার কথা জানতে পারি। 

তোমার মাবাবা একজনকে ধরেছিলেন তোমার বিয়ের জন্য। 

সে একজনের সন্ধান আনে যে এক লাখ টাকার বিনিময়ে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়।

 

 

 আমারা তোমাদের  জমিটা কিনবো বলে ঠিক করেছিলামআর আমার ্যানেজার কোথাও থেকে তোমার কথা জানতে পেরে আমার কাছে গল্প করে। ওর থেকেই তোমার নাম জানা। 

 

জানিনা কেনএতো টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও আমার মিহিরাকে মারন রোগের থেকে বাঁচাতে পারিনি বলেই হয়ত এই মিহিরাকে পাচারকারীদের হাত থেকে বাচাঁবার সিদ্ধান্ত নিই।

 ্যাঁআমারো কিছু স্বার্থ ছিল ঠিকই

ছেলেমেয়ে দুটো ছোট ছোটওদের মা মারা গেলেও দ্বিতীয়বার বিয়ে করার কথা ভাবিনি। 

প্রয়জনও হয়নি। একাই ওদের মানুষ করবো ঠিক করেছিলাম।

 কিন্ত তারপরই মনে হলো ছোটবেলায় বাচ্চাদের মাকেই বেশি দরকার হয়। 

আমি ্যাবসার কাজে ্যাস্ত থাকিকোথাও গিয়ে হয়ত ওরা একাকিত্ত অনুভব করে।

 

 

 

তাই হঠাৎ করেই স্বার্থপর হয়ে যাই। 

নিজের আর বাচ্চাদের কথা ভেবে এক লাখ টাকাতোমার দাদার চাকরি আর তোমাদের  

জমির বিনিময়ে তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিই। 

ওরাও এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।

 

 

 

দেখ মিহিরা এখন আইনতো তুমি আমার বউ। 

এই সংসারআমার দুই ছেলেমেয়ে এখন তোমার। 

আমি তোমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিলাম  

এই বাড়িটাকে নিজের পচ্ছন্দ মতো নিজের করে নিও। 

এমনকি আমাকেও। যেদিন নিজের ইচ্ছায় আমাকে মেনে নেবে সেইদিনি আমি তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে যাবো। এখন থেকে এটাই তোমার ঘর। 

এবার নিশ্চিতে ঘুমিয়ে পরো। কথাগুলো বলে বালিশচাদর আর টুকটাক কয়েকটি জিনিস

 নিয়ে লোকটা পাশের ঘরে চলে যায়।

 

 

 

অবাক হয়ে মিহিরা কিছুক্ষণ বসে ভাবে... "কে খারাপ

আমার পরিবার , এই লোকটানাকি অর্ককাকে ঘেন্না করবো?" 

এক প্রশান্তি ফুটে উঠেছে। 

মিহিরা এগিয়ে যায় লোকটার দিকেলোকটার ফরসা মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়িতার গোলাপি আভা যুক্ত পুরু ঠোঁট যেকোনো মেয়েকে কাছে টানতে যথেষ্ট। 

তার লোমস বুক যেকোনো মেয়েকে মোহবিষ্ট করতে সক্ষম।

 

 

 

মিহিরা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে নিজের ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।

 সকাল হতেই লোকটা মিহিরার ঘরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ে। 

মিহিরার শাড়িটা পায়ের পাতা থেকে অনেকটা উপরে উঠে গেছে অসাবধানতাবশত। 

তাতেই ওর আলতা পড়া সোনালী আভা বিশিষ্ট পায়ে চোখ আটকে যায় লোকটার।

 লোকটা ঘরে এসে দেখে মিহিরার চুল এলো হয়ে পড়ে রয়েছে। 

ওর লেপ্টে যাওয়ার সিদুর দেখে যেকেউ বলবে তাদের ফুলসজ্জার রাত বেশ সুখময় কেটেছে। 

লোকটা একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে মিহিরার আলতা পরা পায়ে একটা চুম্বন দিয়ে মনে মনে বলে... "মিহিরা আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে ঠিক একদিন মেনে নেবে ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন