সোমবার, মার্চ ১৮

কে আপন কে পর (পর্ব এক)

 




লাল রঙের বেনারসী পরে বসে আছে এক কনে মিহিরা। আজ ওর বিয়ে। 

কতো স্বপ্ন দেখে মেয়েরা এই দিনটা নিয়ে। 

কিন্তু মিহিরার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে এই লাল বেনারসীতে।

 

 "আমি তোকে ছাড়া বাচবো না রে মিহিরা। " কালোদোহারা চেহারার অর্কবলিষ্ঠ দুটো হাতে মিহিরার ফুলে ওঠা চোখের জল মুছতে মুছতে বলতে থাকে।

"তবে নিয়ে চল আমাকে এসবের থেকে অনেক দুরে।"

"কি করে নিয়ে যাব ? ঘর নেইটাকা নেইকি করে কোথায় গিয়ে উঠবো আমরা ?"

"কোনোরকম কিছু টাকার জোগাড় করতে পারবিনা অর্ক

একমাসের চলার মতোতারপর দুজনে মিলে কাজ করে সংসার চালাবো?"  মরিয়া মিহিরা বলতে থাকে চোখের জলে ভাসতে ভাসতে।

"তাহলে  এক লাখ টাকাটা ঘর থেকে নিয়ে চল মিহিরা!"

"না।  টাকাটা আমি নিতে পারবো না। 



আমিই যদি না থাকি তবে  টাকাটা যার , তাকেই ফেরত দেওয়া উচিত।"

"সেটা কি করে হয় ? 

তুই ওই টাকা নিজে ফেরত না দিলেতোর মাবাবাদাদা  টাকা ফেরত দেবে ভাবছিস ?"

"সে ওরা যা খুশি করুকতুই শুধু আমাকে নিয়ে পালাতে পারবি কিনা বল?"

"কেন বুঝছিস না টাকাটা ছাড়া আমরা কোথাও যেতে পারব না। "

"তবে থাকটাকা বা আমি কোনটাই তোর কপালে নেই রে অর্ক

ভেবেছিলাম তুই অন্তত আমাকে ভালোবাসিস,

 কিন্তু নাআমার পরিবারের মতো তুইও আমার পরিবর্তে  এক লাখ টাকাকেই বেশি ভালোবেসেছিস ! 

তবে ওটা আমার পরিবারেরই থাক। 

মেয়ে হিসেবে আমার বাবা মা আমার কাছ থেকে অন্তত আমার বিদায়ের পর কিছু সুখ পাক। 

 

বোনের পড়াদাদার চাকরির জন্য টাকাসব হয়ে যাবে  টাকা দিয়ে। 

তুই ভালো থাকিস অর্কআজ থেকে তোর আর আমার সব সম্পর্ক এখানেই শেষ।"

 

 

কথাগুলো বলতে বলতে মুখে কাপড় গুজে কাদতে কাদতে

পুকুর পাড় থেকে ছুট দেয় মিহিরা। 

পেছনে অর্ক আরো কিছু বলতে থাকে কিন্তু সেসব মিহিরার কান পযর্ন্ত পৌঁছায় না।

 

 

 

ঘরের মধ্যে গুটি কয়েক লোকএকদিকে বরতার ্যানেজার আর কয়েকজন বৌ মিলিয়ে গোটা 

দশেক বরযাত্রী। 

বাকি সব মিহিরার বাড়ির লোকজন। 

বরের দিকের একজন বুড়ি পিসিমা গোছের একজন মিহিরার পাশে বসে ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে

বরের জীবনী বলতে থাকে।

 তিনি অনেক্ষণ ধরে মিহিরাকে এটাই বুঝিয়ে যাচ্ছেন যে সে যেন এই অসম বিয়েতে অখুশি না থাকে। মানুষটা খুবই ভালো। ছোট ছোট দুই ছেলে মিহিরার। 

"মাএ দশ বছরের বড়োকিন্তু সুপুরুষদেখবি ভালো রাখবে তোকে।

গত এক মাস ধরে এই কথাই বুঝিয়ে চলছে তার বাবা মা।

 

ওর উলটো দিকেই বসে আছে লোকটাকাগজে সই করছেমিহিরার তাকাতেও ইচ্ছে করেনা লোকটার দিকে। 

মনে মনে ভাবে, "মরে গেলেই ভালো হতো

কিন্তু আমি মরলে তো বাবা মা  এক লাখ টাকাটা পাবে না। 

তার বিয়ে দেওয়ার তো অনেক চেষ্টা তারা করেছিলকিন্তু সবাই টাকা চায়।

ওরা অতো টাকা পাবে কোথায়

বাবা সামান্য দিনমজুরঅন্তত এই বিয়েটা করলে যে এক লাখ টাকাটা ওরা পাবে তা দিয়ে 

বোনের পড়াদাদার চাকরির খরচ সব হয়ে যাবে। 

আর তাছাড়া এক সাধারণ দিনমজুরের মেয়ের এতো স্বপ্ন যে দেখা নিষেধ। 

মিহিরা আর কিছু ভাবতেপারে না দু চোখ জলে ভোরে ওঠে আর সে কাগজে সই করে দেয়।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন