খুব সুখী ছিল অন্তরা। কিন্তু তার সুখেতে বোধহয় কারো নজর পড়ে গিয়েছিল। বিয়ের তিন মাস পেরোতে না পেরোতে অফিসের একটি বিশেষ কাজে পাঁচ মাসের জন্য কলকাতার
বাইরের শাখায় যেতে হয় আবিরকে এবং সেখানে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়াটা সম্ভব ছিল না।
অফিস থেকে অর্ডারটা যেদিন পেলো আবির,অন্তরার হাসি মুখটায় কে যেন কালি পোঁচ টেনে দিয়েছিল। তবে প্রতিমাসে দিন চারেকের জন্য বাড়ি ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবির তাকে আস্বস্ত করলো। এরপর শুরু হলো তাদের ভিন্ন রাত্রিযাপন। মোবাইলে কথা বলেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো কামাতুর দুই দেহমনকে। আর মাসের শেষে আবির ফিরলে অন্তরাকে আক্ষরিক অর্থে শুষে নিত সে।
কিন্তু এ সুখও অন্তরার কপালে দীর্ঘস্থায়ী হলো না। তাদের স্থানীক দূরত্ত্বের সুযোগ নিয়ে অন্তরার বিবাহিত ননদ রমোলা অন্তরার নামে কান ভাঙানি দিতে শুরু করলো আবিরকে। প্রথম দিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও নিয়মমাফিক কুমন্ত্রণায় কারই বা মাথার ঠিক থাকে!
অফিসের কাজের সময় নিত্য অশান্তি লাগিয়ে লাগিয়ে একসময় আবির অন্তরাকে দূরে ঠেলে দিয়ে তবে শান্তি হলো রমোলার।
নিজের বিবাহিত জীবনে অসুখী সে দাদা বৌদির এই আদরে গদগদ সম্পর্কটা আর নিতে পারছিল না। তাই বুদ্ধি কষে এমনটা করলো ও, সফলও হলো ও। এর ফলস্বরূপ আবির বাড়ি ফেরা বন্ধ করলো। তার আচরণের তফাৎ চোখে পড়লো। এরপর ফোনেই শুরু হলো খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে অন্তরার সঙ্গে মতান্তর, কথা কাটাকাটি, ঝগড়াঝাঁটি। অভিমানের পাহাড়ে বসে ছিল অন্তরা।
দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল।
আবিরের পাকা পাকি ভাবে বাড়ি ফেরার সময় হলো যে ফেরাকে কেন্দ্র করে ঠাকুরের
কাছে মাথা ঠুঁকেছে অন্তরা, আজ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে হলো আবিরের বোধহয় দূরে থাকলেই
ভালো হতো।বৌয়ের সাথে ভালো করে কথা বলা তো দূরে থাক, তার দিকে ফিরে চাইলোনা পর্যন্ত আবির। আহত হলো অন্তরা।
তার বিয়ের পরের এই শারীরিক দীপ্তি এই ক'মাসেই হাড়িয়ে ছিল সে। মনের স্ফূর্তিও তলানিতে এসে ঠেকেছিল। আজ বুঝলো সে তার ভালোবাসার মানুষটাকেও সম্পূর্ণ রুপে হাড়িয়ে ফেলেছে।
এদিকে আবিরের ফেরা সংবাদে নিজের সংসারে কাজ ফেলে এ বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে রমোলা। ইচ্ছে এখন বেশ কিছুদিন এখানে থাকার। আসল উদ্দেশ্য অবশ্য দাদা-বৌদীর মিল যাতে না হয় তা নিশ্চিত করা। রাতগুলো আর কাটতে চায় না অন্তরার। কী অসহ্য আবিরের এই নিরলিপ্তি!! একটা মানুষ এতটা বদলে যেতে পারে!! বিশ্বাস হতে চায় না তার। না পাওয়ায় চেয়ে পেয়ে হাড়াবার যন্ত্রণা যে ঢেড় গুণ বেশি। এর চেয়ে হয়ে যেতো সে.....
জানুয়ারি মাস চলছে। শীত এবারে বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। বাইরে কনকনে ঠান্ডা। পৌষের হিম পড়ছে যেন। একটা লেপের তলায় শুয়ে আছে শতযোজন দূরে থাকা দুটো মানুষ। এতো মোটা লেপও অন্তরার শীত কমাতে পারছে না। একটা মানুষ চাই তার। ভালোবাসার মানুষের গায়ের উত্তাপ চাই, শীতের সাথে লড়াই করার জন্য। একসময় এই লেপকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে রাখতো সে। দুটো শরীরের উষ্ণতার কাছে হাড় মানতো লেপের উত্তাপ। আর আজ.... কি বৈপরীত্য!! এ কেমন দামপত্য! এরম করে সত্যিই কি চলা যায়?
শীতে বিয়ে করা নিয়ে কতো ফ্যানটাসি ছিল আবিরের! স্মৃতিরা এসে মনের দুয়ারে হানা দেয় অন্তরার। এই আবিরই শীতকালে বিয়ের ইচ্ছাপোষন করে বলেছিল , "ঠাণ্ডায় প্রেমের মজাটাই আলাদা।"
অন্তরা টিপ্পনি কেটেছিল, "কিন্তু ঠান্ডায় যে প্রেম জমে যায় মশাই।"
জমে যাবে না গো, উষ্ণনতায় বরং গলে গলে পড়বে আর আমি জিভ দিয়ে...." আবিরের মুখ চেপে ধরেছিল অন্তরা। বলেছিলো," কিছুই কি আটকায় না তোমার মুখে? নির্লজ্জ কোথাকার!!"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন