শনিবার, মার্চ ২

পরকীয়া পর্ব- পঞ্চম

  


রাহুলের সাথে মালিহার দিন ভালোই কাটছিলো।একদিন সকালে মালিহা আরমানের জন্য রান্না করছিলো। হঠাৎ  মালিহার ফোনে একটা কল আসলো অজানা নাম্বার থেকে। প্রথমে কলটা বেজে বেজে কেটে গেলো। মালিহা ধরতে পারেনি। কিছুখন পরে সেই নাম্বার থেকে আবার ফোন এলো। এবার মালিহা ফোনটা ধরলো। ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই। অন্য পাশ থেকে রাহুল বলতে শুরু করলো। মালিহা আমি রাহুল। এটা আমার এক পরিচিতর নাম্বার। আজকের পর থেকে আমাদের আর কথা হবে না। মালিহা : কি বলছো এসব রাহুল। তুমি ঠিক আছো?আমাদের কথা কেন হবে না। রাহুল : মালিহা আমি মালয়েশিয়া চলে যাচ্ছি আর আর কিছুখন পরে আমার ফ্লাইট।আমি অলরেডি এয়ারপোর্টে ডুকে পড়েছি। মালিহাকি বলছো এসব। তুমি মালয়েশিয়া যাবে আমাকে আগে বলনিতো। রাহুলএখন বলছি তো। তবে তোমার সঙ্গ খুব মিস করবো। মালিহা : রাহুল তুমি আমাকে এভাবে ধোকা দিলে। আর আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছি। রাহুলদেখো মালিহা তোমার সাথে এতো কথা বলার সময়  ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই। শুধু জানানো প্রয়োজন মনে হলো তাই জানিয়েছি।ভালো থাকো। এই বলে ফোনটা কেটে দিয়ে অফ করে দিলো রাহুল। মালিহা কি করবে বা বলবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না।  নাম্বারে  সে ফোন দিলো কিন্তু বন্ধ বলছে। মালিহার বুঝতে বাকি নেই রাহুল তার সাথে মিথ্যা কথা বলেছে। মালিহার বুক ফেটে কান্না আসছে। মনে হচ্ছে তার বুকটা চিরে কেউ কলিজাখানা বের করে নিয়েছে। যাকে বিশ্বাস করলো ভালোবাসলো সেই ধোকা দিলো। আরমান দুপুরে  খেতে বাড়ি এসেছে। বাড়িতে এসে দেখে মালিহা শুড়ে আছে।  সময়ে তো মালিহা কখনও শুয়ে থাকে না।আরমান একটু চিন্তায় পড়ে গেলো কিছু হয়েছে কি মালিহারআরমান :কাপা কাপা কন্ঠে বলছে কি হয়েছে মালিহা।তোমার কি শরীর খারাপ। ডাক্তার ডেকে আনব। মালিহা কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শুধু বললো আমাকে একটু একা থাকতে দিবে। আরমান কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে চলে যায়। কিছু সময়ে পরে আরমান আবারও রুমে এসে মালিহাকে ডাকে। মালিহার কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। আরমান কাছে গিয়ে দেখে মালিহা ঘুমিয়ে আছে। আরমান মালিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কপালে হাত দিতেই চমকে উঠলো।প্রচন্ড জ্বরে গা  পুড়ে যাচ্ছে। আরমান মালিহাকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে।  মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। শরীর প্রচন্ড গরম তাই বার বার শরীর মুছিয়ে দিচ্ছে আরমান। কয়েক ঘন্টা পড়ে জ্বর কমলো মালিহার। এখন সে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। আরমান যেন স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে এবার। আরমান:মালিহা কেমন লাগছে এখন তোমারমালিহা মাথা নাড়ি বললো ঠিক আছি। আরমান:কিছু খেয়েছিলে দুপুরে?? মালিহা : না। আরমানআচ্ছা আমার  কিছু খাওয়া হয় নি। আমি খাবার নিয়ে আসছি। এক সাথে খাব। বলে আরমান রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। কিছুখন পড় একটা প্লেটে খাবার নিয়ে এসে।মালিহার মাথার কাছে বসে মালিহার মুখে খাবারের লোকমা তুলে দিলো। মালিহা চুপচাপ খেয়ে নিলো। দুজনার খাওয়া শেষ করে। মালিহা তুমি একটু ঘুমাও ভালো লাগবে আমি সামনে আছি। আরমান  বারান্দায় একটা চেয়ার পেতে বসে ভাবছে। যদি সে শারীরিক সম্পর্কে অক্ষম না হতো তবে আজ তাদের মধ্যে এরকম দূরত্ব দূরত্ব বিষয়টা থাকতো না। আরমান ভাবছে শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখাবে। হয়তো চিকিৎসা নিলে সব ঠিক হতে পারে। আজ দু'দিন মালিহা এখন অনেকটাই সুস্থ। আরমান গতো দু'দিন ছুটি নিয়েছিলো স্কুল থেকে।আজ মালিহা যেহেতু সুস্থ আছে তাই আরমান স্কুলের জন্য বেড়িয়ে পড়ল।আরমান ক্লাস শেষ করে টিচার্স রুমে বসে আছে।এমন সময় আরমানের ফোন বেজে উঠলো। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে। ফোনের দিকে তাকাতেই  দেখলো তার শাশুড়ি (হালিমা বেগমফোন দিয়েছে। আরমান ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। হালিমা বেগমবাবা আরমান আমার ছোট মেয়ে মুমুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামি মাসের ৭ তারিখ বিয়ে। এখনতো খুব একটা সময় নেই হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। যদি তোমরা চলে আসতে আমার খুব ভালো লাগতো। আরমান : আম্মা আমার তো স্কুল আছে আমি বিয়ের আগের দিন আসলে হয়না। মালিহাকে না হয় কাল পাঠিয়ে দিলাম।  কিছু দিন আপনাদের সাথে থাকলে ওর  ভালো লাগবে। হালিমা বেগম : ঠিক আছে বাবা তুমি যা ভালো মনে কর তাই করো। তবে বিয়েতে তোমার থাকা চাই। আরমানঠিক আছে আম্মা। এখন তাহলে রাখি। আমার আবার ক্লাস আছে। হালিমা বেগম : ঠিক আছে বাবা ভালো থেকো বলে ফোনটা কেটে দিলো। আরমান ফোনটা রেখে ভাবলো যদি কিছু দিন মালিহা বাড়ি থেকে ঘুরে আসে হয়তো ওর ভালো লাগবে। দু'দিন ধরে চোখ মুখ শুকিয়ে আছে। মন মরা হয়ে আছে।  একটা কথা  বলছে না। কথামতো আরমান মালিহাকে তার বাবার বাড়ি দিয়ে আসে। মালিহা বাড়িতে এসেছে এখানে অনেক মানুষ তাই। নিজেকে একটু সামলে নিলো। মুমু মালিহাকে পেয়ে অনেক খুশী। হালিমা বেগম তো একটু পরে পর মালিহাকে এটা ওটা খেতে দিচ্ছে। সারাদিন কেটে গেলো অনেক মানুষের ভীড়ে। এখন রাত ১১টা বাজে আজ অনেক গুলো দিন পরে মালিহা তার নিজের রুমে শুয়ে আছে। আরমান ফোন দিয়েছে মালিহাকে। মালিহা ফোন তুলেই। আরমানখেয়েছো মালিহা,তোমার শরীর এখন কেমনমালিহাহুম খেয়েছি। শরীরও ভালো। আপনি খেয়েছেনআরমান : হ্যাঁ খেয়েছি। মা চলে এসেছে বিকালবেলা। মালিহা : মা কেমন আছেআরমান : ভালো আছে। আচ্ছা তুমি এখনও অনেকটা ক্লান্ত তাই বেশী রাত জেগোনা ঘুমিয়ে পড়ো। মালিহা : জি। আপনি  ঘুমান। খোদাহাফেজ। ফোনটা রেখে মালিহা বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। মালিহার ঘুম  আসছে না রাহুলের প্রতিটি স্পর্শ মালিহার মনকে উতলা করে তুলছে। পরক্ষনেই  রাহুল কি ভাবে ধোকা দিলো তাও মনে পড়ছে। মালিহা নিজেকে শান্ত করে নিলো। আর ভাববে না রাহুলের কথা।  একটা প্রতারক। ভাবতে ভাবতে মালিহা কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো।। সকাল হতে না হতেই মানুষের আনাগোনা লেগে গিয়েছে। মালিহার সকল কাজিন রা চলে এসেছ। বাড়িটা এখন বিয়ের গন্ধে মো মো করছে। মালিহা তার রুমে বসে আছে। মালিহা বাড়িতে আসছে শুনে তার চাচাতো ভাই মাহমুদ  তাকে দেখতে এসেছে। মাহমুদ একসময়ে মালিহাকে প্রচন্ড পছন্দ করতো কিন্তু মুখ ফুটে কখনও বলা হয় নি। হয়তো আজও মালিহাকে পছন্দ করে তাই দেখতে চলে এসেছে। মাহমুদের বাড়ি খুব বেশী দূরে না ঘন্টাখানিক লাগে যেতে মালিহাদের বাড়ি থেকে। মালিহার ছোট বোন মুমুর বিয়ে বলে সব আত্মীয়-স্বজন বিয়েতে উপস্থিত থাকবে। তার বাবার ইচ্ছে। মাহমুদ এসে মালিহার রুমে গেলো।মালিহা মাহমুদ কে দেখেতো হা। আরে মাহমুদ ভাইয়া তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। তুমি দেখতে হিরোদের মতো লাগছ। তোকেও তো হিরোইনদের মতো লাগছে। আগের দুই বেনুনি ওয়ালা মালিহা আছ না কি। যাই হোক কেমন আছিস। মালিহা :মালিহা মুখটা একটু মলিন করে বললো এই তো ভালো আছি। আচ্ছা মালিহা এখন বিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ তুমি তো জানো।চাচার হাতে হাতে কাজ করে এগিয়ে রাখতে হবে। তোমার বোন মুমু তাকেতো জানো বলে দিয়েছে। আমার ভাইয়েরা থাকতে যদি কোন সমস্যা হয় আমি বিয়ে করব না। মালিহা : মুমু তো ওরকমি। তুমি তো জানো মাহমুদ ভাই। মাহমুদ :আচ্ছা তুমি যাও বিশ্রাম করো আমি রাতে তোমার সাথে দেখা করব। অনেক কথা আছে। আরমানের বাল্য  বন্ধু (আরিফ)  বাজারে ওষুধের ফার্মেসি দিয়েছে আজ রাত ৮ টায় তার  উদ্বোধন অনুষ্ঠান ।ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করবে। আরমানকে থাকতে হবে বার বার ফোন করে বলেছে।  আরমান  না আসলে রাগ করবে তাই ইচ্ছে না থাকা সত্যেও আরমান চলে এসেছে। অনুষ্ঠান শেষে আরমান  আরিফ বসে গল্প করছে। কথায় কথায়  আরিফ আরমানকে বললো। তারপর বন্ধু কেমন চলছে ভাবির সাথে তোমার দাম্পত্য জীবন। ভাবিতো মনে হয় তোমাকে পেয়ে অনেক সুখেই আছে। আরিফের  কথা শুনে আরমানের মুখ খানা এক নিমিষে অন্ধকার হয়ে গেলো। আরিফকি হয়েছে হঠাৎ করে তোর মন খারাপ হয়ে গেলো। কোন সমস্যা। ভাবি কি তোকে ভালোবাসে না। আরমান : তুই আমার সবথেকে কাছের বন্ধু। কি বলবো বল তোকে। তোর ভাবিতো আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমার থেকে তার যা প্রাপ্য আমি তো তাকে তা দিতে পারিনা। আরিফভাবির চাওয়া পাওয়া অনেক বেশি খরচ বেশী করায়। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত  তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করিনি। আরিফতোর সমস্যাআরমান :হুম বন্ধু এই লজ্জার কথা কি করে বলি কাউকে বল। আরিফ : চিন্তা করিস না। শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখা। এখন চিকিৎসা নিলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।আমি একটা ঠিকানা দিচ্ছি এখানে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আয়। আর শোন আরিফ কিছু ওষুধ আরমানে হাতে দিয়ে বললো আপাতত কয়েকদিন এটা দিয়ে কাজ চালা। যেদিন ভাবির কাছে যেতে মন করবে একটা খেয়ে নিবি। ওকে আজ তাহলে আশি বন্ধু। আর আমার এই কথাটা কাউকে বলিস না বুঝতেই পারছ বিষয়টা কতোটা সেনসিটিভ। আরিফতুই কি আমাকে আজও চিনলি না। বাড়ি যা এটা এখন আমার সমস্যা।  নিয়ে ভাবতে হবে না বন্ধু।আরমান বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে আর মালিহাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন সাজাচ্ছে।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন