ইন্দ্রাণী বলে---"কি হল? ওভাবে তাকিয়ে আছ যে?"
-----"ভাবছি ।"
-----"মানে, কি ভাবছ?"
-----"তুমি এভাবে আর কতো চেষ্টা করবে? কি লাভ হবে কে জানে?
শেষ অবধি না কোনো খারাপ কিছু ঘটে যায়।"
-----"কেন ভয় পাচ্ছ? নতুন করে আর কি খারাপ হবে?
বরং আমার তো মনে হয় ভালোই হবে।"
-----"ভাল হলেই ভাল।"
অর্ক আলতো করে ইন্দ্রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে---"ঘুমিয়ে পড়।"
------"তুমি এখনো ভাবছ? আরে বাবা কিছু খারাপ হবে না।
অত ভেব নাতো।"
ইন্দ্রাণী দুহাতে অর্কর গলা জড়িয়ে ধরে বলে
---"অর্ক।"
------"বল।"
------"তুমি কি রাগ করেছ?"
------"কেন?"
------"একটুও আদর করছ না।"
------"অনেক রাত হল। তোমাকে তো আবার সকালে উঠতে হবে।"
------"তাতে তোমার কি? উঠব তো আমি।"
------"আমার কি মানে? আমার বৌয়ের কষ্ট বুঝি আমার কাছে কিছু না?"
------"কিন্তু এখন তোমার আদর না খেলে আমার যে আরও বেশি কষ্ট হবে।"
-------"তবে রে দুষ্টু।"
অর্ক একগাল হেসে ইন্দ্রাণীকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।
ইন্দ্রাণী এটাই চাইছিল। অর্ক কষ্ট পেলে তার বুকটাও মোচড় দিয়ে ওঠে। ইন্দ্রাণী অর্কর বুকে মাথা গুঁজে জিভ দিয়ে সুড়সুড়ি দেয়।
-----"আঃ এই---।"
---অর্ক শরীর মোচড়ায়।
-----"কি হল?"
------"কিছু না।"
----বলে অর্ক তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
হাত স্লাইড করে শরীরের খাঁজে খাঁজে। ইন্দ্রাণীর গলায় সুখের শীৎকার ওঠে।
------"তুমি সত্যিই খুব ভালো অর্ক।"
------"তুমিও তো খুব ভাল ইন্দ্রা। বলে না 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস।"
দুজনেই হেসে ওঠে।
অর্ক বলে ওঠে---"বৌদি কেন যে তোমার সাথে এরকম করছে বুঝি না।"
------"আবার সেই প্রসঙ্গ! অত বুঝে কি দরকার? আমি ওই বুড়ো কবির তত্ত্বে বিশ্বাস করি। ওই যে লিখেছেন 'ভালমন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে'।"
------"তা তো বুঝলাম।
কিন্তু বিশ্বকবিকে হঠাৎ বুড়ো কবি আখ্যা কেন?"
"বুকে হাত দিয়ে বলতো লোকটার নাম শুনলেই একমুখ দাঁড়ি জোব্বা পড়া ঐ বুড়ো চেহারা ছাড়া আর কোনো ছবি চোখে ভাসে তোমার?"
------"তা ঠিক।"
------"জানো লোকটার সাথে না শিবঠাকুরের মিল আছে।"
------"সে আবার কি রকম?"
------"ঈশ্বর পাটনীকে অন্নপূর্ণার দেওয়া শিবের বর্ণনা ভাব।
ঐযে 'শুন সভাজন, জামাতার গুন/ বয়সে বাপেরও বড়-----'। শিবঠাকুরের তো বয়সের কোনো গাছপাথর নেই।
তল খুঁজে পায় কার সাধ্যি? তেমনি দেখ এ বুড়োটার সৃষ্টির তল খুঁজে পাবে না। জীবনের কোনো স্থান ফাঁকা নেই । সব জায়গাতে ঐ বুড়োটা।"
------"বাপরে বাপ। ভাবতেও পার তুমি। বিষয় তো তোমার বাংলা ছিল না। তাতেই এতো!"
------"হবে না? লোকটার কত প্রেমিক মন ছিল বলতো।"
------"তাতে তোমার কি? হাবুডুবু খাচ্ছ যেন।"
------"নাহলে কি তোমাকে কব্জা করতে পারি?"
------"যা বাব্বা এ আবার কেমন কথা?"
-------"আরে বুড়োটাই তো আমার প্রেমের শিক্ষাগুরু। ' পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি/ আমরা দু'জন চলতি হাওয়ার পন্থী'।
------"ঐ জন্যই প্রথমদিনই আমাকে পথে টেনে নিয়ে গিয়েছিলে।"
------"নইলে আর কোথায় নিতাম। শুধু লোকটার বৌদির জন্য খারাপ লাগে। গলায় দড়ি না দিলেই পারত বেচারি।"
------"হুম বুঝলাম।"
------"দেখো তুমি আবার যেন---।"
------"কি?"
------"ঐ আর কি বৌদিটৌদি ব্যাপারে জড়িও না।"
------"হঠাৎ অবিশ্বাসের কারণ?"
------"তোমাকে অবিশ্বাস?
নাগো, আসলে দিদির মতিগতি তো বুঝতে পারছি না, তাই আরকি। তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমার উপর এতো রাগ কেন কে জানে?" –
-----"সে তোমার দিদিই জানে। আমি ওসব নিয়ে ভাবতে চাই না। আমি আমার ইন্দ্রাকে ছাড়া কিছু ভাবতেও চাই না।"
------"জানি তো?"
ইন্দ্রাণী তাড়াতাড়ি অর্কর বুকে মাথা গুঁজে দেয়। অর্ক তার মুখ দুহাতে তুলে ধরে সারা মুখ চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। গলা লেহন করে। আস্তে আস্তে নীচে নামে।
ইন্দ্রাণীর গলায় সুখের আবেশ--"উমম্।"
অর্কর মুখ এখন তার নাভিকুন্ডে ব্যস্ত।
------"উঃ অর্ক।"
------"বলো।" ------"আর পারছি না সোনা।"
অর্কর শরীরের ভার তার শরীরে। শুরু হয় ভীষণ ভূমিকম্প।
প্রবল কম্পনের তালে তালে তার গলায় আওয়াজ ওঠে---"আঃ আঃ উফ্ উমমম্ ওহ্ ।"
পড়ে যাবার ভয়ে যেন দুহাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে বিছানার চাদর। একসময় কম্পন থামে।
দুটো শরীর পড়ে থাকে জড়াজড়ি করে। তলিয়ে যায় ঘুমের অতলে।
########################################################
উঠতে বেশ বেলা হয়ে গেল।
জানলা দিয়ে সোনালি একফালি রোদ এসে পড়ছে ঘরের মেঝেতে।
ইন্দ্রাণী রান্নাঘরের দিকে যেতেই অবাক হয়।
রান্নাঘরের থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে।
ঘরের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।
অবাক হবার আরও বাকি ছিল।
তাকে দেখেই দিদি বলে ওঠে--- "কিরে দাঁড়িয়ে গেলি কেন? জলখাবার রেডি। তুই একটু দিয়ে দে।আমি চায়ের জল বসিয়েছি।"
মুহূর্তের মধ্যে বাড়ির পরিবেশটাই পাল্টে গেল যেন।
ইন্দ্রাণী দিদির হাতে হাতে কাজ করতে করতে ভাবে দিদি কি সত্যিই পাল্টে গেল নাকি ?এও আবার কোনো চাল?
বাড়িতে সবাই খুব খুশি। সবাই ভাবল এতদিনে মেঘ কাটল বোধহয়।দাদা তো সব কৃতিত্ব ইন্দ্রাণীকেই দিল।শুধু একটা খটকা ইন্দ্রাণীর মনে রয়েই গেল চুপিসারে যা সে অর্ককেও বলল না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন