বৃহস্পতিবার, মে ১৬

ভ্রমণ

 #রম্যগল্প

#ভ্রমণ

#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
বিয়ের আগে যতবার স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি থেকে ট্যুরে যেতে চেয়েছি ততবারই বাবা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতেন,
"আমাকে তো পাগলে পেয়েছে? এতদূরে আমি তোমায় একা যেতে দেবো? ওখানে কি খাওয়ায়? বিরিয়ানি, রোস্ট, ডিম আর সেভেন আপ। এইতো? আমি বাসায় এনে দেবো রান্নাবান্না করে বাড়িতেই পিকনিক করো। বাহিরে কোথাও নয়।"
ব্যস বাবার ভাষণ দেওয়া শেষ। তিনি চলে যান। আমায় আর কিছু বলার সুযোগটুকুও দেন না। আমি অসহায়ের মতো তাকাতাম মায়ের দিকে। মা এক গাল হেসে বলতেন,
"থাক, মন খারাপ করিস না। তোর আব্বুর মুখের ওপর কথা তো বলা যাবে না। বিয়ের পর জামাইর সাথে যাইস।"
হ্যাঁ, লাইফের এতগুলো বছর বাবা-মায়ের এই এক কথাই শুনেছি। একসময় মেনেই নিলাম, হু বিয়ের পর বরের সাথে সারা দেশ ঘুরে বেড়াব। তখন আর বাঁধা দেওয়ার কেউ থাকবে না। কিন্তু বিধিবাম! আমি এখানেও ভুল। আমার বর একদম আমার উল্টো। তার ঘুরাঘুরি পছন্দ নয়। যতবারই বলি,
"চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি।"
ততবারই তার উত্তর,
"সামনের মাসে লম্বা ছুটি আছে। তখন ঘুরতে যাব।"
তার সামনের মাস আর আসে না। প্রতি মাসে এই এক-ই কথা। বিরক্ত হয়ে একদিন মাকে ফোন দিয়ে রেগে রেগে বললাম,
"তোমাদের এক বাণী শুনে আমার জীবন তেজপাতা বানাই ফেলছ।"
"কেন কী হইছে?"
"বিয়ের আগে কোথাও ঘুরতে যেতে দাও নাই। শুধু বলছ বিয়ের পর জামাইর সাথে যাইস। এখন তোমাদের জামাইরে বললে বলে, 'সামনের মাসে লম্বা ছুটি পেলে যাব।' কোনো বছরেই তার সামনের মাস আসে না।"
মা এবারও এক গাল হেসে বলল,
"আহা! থাক, মন খারাপ করিস না। জামাই ছুটি না পেলে কী করবি বল? জামাই ছুটি পেলে যাইস।"
আমি ভেবেছিলাম, এবার অন্তত মা কোনো পরামর্শ দেবে। আর তা না হলে অনুতপ্ত তো হবেই। কিন্তু না! আমার মা আমার ধারণারও দুই লেভেল ওপরে। বিয়ের আগে বলা বাণী এখনো একটু ঘুরিয়ে পিছিয়ে বলল। মেজাজ খারাপ করে ফোন কেটে দিলাম। আজ বাসায় আসুক তকিব। আজ তো একটা হেস্তনেস্ত করবই। রাতে যথাসময়ে অফিস থেকে ফিরল সে। স্বভাবমতো এক গাল হেসে বলল,
"মন খারাপ বউ?"
আমি কিছু বললাম না। ও ফ্রেশ হয়ে আসার পর খাবার টেবিলে ঘুরতে যাওয়ার কথাটা তুললাম। তকিব খেতে খেতে বলে,
"আজকের মাংস রান্নাটা অনেক মজা হইছে।"
আমি সরাসরি বললাম,
"এই মাসে ছুটি কবে পাইবা?"
"কীসের ছুটি?"
"ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল।"
"ওহ্! এই মাসে ছুটি দেবে না গো। সামনের মাসে লম্বা ছুটি পেয়ে ভ্রমণে যাব। ঠিকাছে?"
রাগে পুরো শরীর জ্বলছে আমার। তকিব আয়েশ করে খাওয়া শেষ করে। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে। চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে,
"চলো বউ ঘুমাই।" এমনভাবে বলল যেন কিছুই হয়নি। আমার রাগও ওর চোখে পড়ছে না। রাগে জ্ঞানশূন্য হয়ে ওর টি-শার্টের কলার চেপে ধরে বললাম,
"শালা তোর এক ডায়লগ আর কতদিন? বিয়ের আগে বাবা-মায়ের এক বাণী শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে। এখন তুই আবার নতুন বাণী শুরু করছিস?"
তকিব জিহ্বা বের করে বলে,
"ছিঃ, ছিঃ স্বামীর কলার ধরে কেউ এমন তুই-তোকারী করে? আল্লাহ্ পাপ দেবে।"
হায়রে আমার কপাল! কার ওপর আমি রাগ করি? মেজাজ খারাপ করে রুমে চলে গেলাম। পিছু পিছু তকিবও আসলো। আমার সামনে এসে বলল,
"তোমার কি রাগ হচ্ছে বউ?"
বিষয়টা এমন হলো যে, কেউ এক বাটি কাঁচামরিচ খাইয়ে জিজ্ঞেস করছে, 'তোমার কি ঝাল লেগেছে?' আমি জাস্ট আর সহ্য করতে পারছিলাম না। দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলাম। তকিব আবার বলল,
"আমার ওপর রাগ হচ্ছে তাই না? মারতে ইচ্ছে করছে?" এই বলে তকিব বাইরে কোথায় যেন গেল। ফিরে আসলো হাতে একটা লাঠি নিয়ে। আমি একটু ভড়কে গেলাম। রাগারাগি করেছি বলে মারবে নাকি? তকিব লাঠিটা আমার হাতে দিয়ে বলে,
"নাও মারো আমায়। মেরে হাত-পা গুড়িয়ে দাও। প্রয়োজনে হাসপাতালে থাকার মতো অবস্থা করে দাও। যাতে ভ্রমণ করতে যেতে না হয়।"
আমার মুখটা এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। ভ্রমণ প্রেমী হয়েও কখনো ভ্রমণ করতে পারলাম না। এরচেয়ে কষ্টের আর কী হয়? আমার অবস্থা দেখে তকিব কাছে টেনে নিয়ে বলে,
"এই, এই তুমি কেঁদো না প্লিজ। সামনের মাসে লম্বা ছুটি পেয়েই তোমায় নিয়ে ভ্রমণে যাব। ঠিকাছে?"
আমার এবার হাঁসফাঁস লাগতে শুরু করল। দম আটকে আসছে যেন! ও ভাই এবার আমি মরেই যাব। এক ডায়লগ আর কত?এই কচুর বাণী শোনার চেয়ে আমি আর ভ্রমণে যেতে চাইব না, এই ভালো!🥺

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন