দরজা খোলার শব্দ হল। দুজনেই চুপ করে গেল।
অর্ক ফিসফিস করে ইন্দ্রাণীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল---"দাদা উঠেছে বুঝি।" ----
"উঠেছে, নাকি উঠেই আছে?"
----"মানে?"
----"ঘুমায় নি বোধহয়। বেচারা!" ----
"বাথরুম যাবে হয়তো। এতে বেচারার কি হল?"
-----"ছেলে পেতে গিয়ে বৌ পাশে নেই।" -----
"তো?"
-----"জানি না যাও।" -----
"আরে বলো না শুনি।"
-----"বোঝো না বুঝি?" -----
"বুঝলে কি শুনতে চাইতাম?"
ইন্দ্রাণী তার টানটান শরীর চেপে ধরে বলে
---" এটার জ্বালা গো মশাই।" -----
"আস্তে।"
-----"লাগল বুঝি?" -----
"আরে না, আস্তে কথা বলো। শুনতে পাবে।"
-----"বয়ে গেল। শুনলে শুনুক।"
-----"খুব সাহস দেখছি।" -----
"তা একটু আছে। দাঁড়াও দেখে আসি।"
ইন্দ্রাণী আর কিছু না বলে নিঃশব্দে দরজা খুলে বাইরে যায়।
ইন্দ্রাণী ভাল করে সব দেখে ফিরে এসে অর্কর পাশে বসতেই সে বলে ওঠে----" দেখলে?"
-----"হুম।"
-----"কতটা জ্বালা উঠেছে দেখলে?"
-----"অসভ্য একটা।"
-----"আমি একা?"
ইন্দ্রাণী হেসে ওঠে---"না-না, দুজনেই। বাইরে কেউ নেই গো। দাদার দরজা বন্ধ।"
-----"যদি বাইরে থাকত?"
-----"কি হত?" -----
"কি আর হবে উলঙ্গিনী শালিকে দেখত। কাপড়টা জড়িয়ে বেরনো যেত না।"
-----"খেয়াল ছিল না। আর একটু না হয় দেখত। গায়ে ফোঁসকা পড়ত নাকি? এত হিংসে কেন তোমার?" -----"আমার বৌকে অন্য কেউ দেখবে হিংসে হবে না?"
অর্ক ইন্দ্রাণীকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে আদর করতে শুরু করে।
ইন্দ্রাণী তার মাথা বুকে চেপে ধরে। অর্ক অমৃতসুধা পানের আকুল চেষ্টা ব্রতী হয়। ইন্দ্রাণীর শরীরে রোমাঞ্চ জাগে।
দারুণ সুখের আবেশে মাদকতা জাগে।
শরীর ধনুকের ছিলার মত বেঁকে যায়। মাথা পিছনে ঝুঁকিয়ে বলে
---- "খাও, খাও, প্রাণভরে খাও।"
তারপর মাথায় শয়তানি খেলে---" খেয়ে নাও ইচ্ছেমত, এরপর তো অন্য কেউ খাবে।"
কথাটা বোঝার অবস্থা ছিল না অর্কর। মধুর একটা ঘোরের মধ্যে সাঁতার কাটছিল সে।
মুখ তুলে বলল ----"ইয়ার্কি মারছ?"
----"যা বাব্বা, কি এমন বললাম?"
----"ভুলেও তৃতীয় কারো কথা ভেব না।
আর কেউ তোমাকে এঁটো করেছে জানলে চিরকালের মত চলে যাব।" কথাটা ইন্দ্রাণীর বুকে শেলের মতো বিঁধল।
একি বলল অর্ক? সত্যি যা তাইতো মুখ দিয়ে বেরিয়েছে।
ইন্দ্রাণী আস্তে করে অর্ককে সরিয়ে উঠে পড়ে। তাকে পোশাক পড়তে দেখে অর্ক বলে---" কি হল, বাইরে যাবে?"
-----"ঘরে যাব। ঘুম পাচ্ছে।"
-----"এখানেই ঘুমাও তাহলে। আমি ডিস্টার্ব করব না।"
-----"না ঘরেই যাই।"
-----"তুমি সত্যি বলছ না। হঠাৎ কি হল বলবে?"
ইন্দ্রাণী উত্তর না দিয়ে যেতে উদ্যত হয়।
অর্ক তাকে টেনে পাশে বসিয়ে বলে---"সত্যিটা আগে বলো।"
-----"সত্যি?
সত্যি হল তুমি আমাকে ভালবাস না। আমার শরীরটাই শুধু ভালোবাস।" কথাটা অর্ককে খুব আঘাত করে।
কান্না জড়ানো গলায় বলে---"তুমি এটা বলতে পারলে ইন্দ্রা!"
ইন্দ্রাণী কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।
আর অর্ক বিছানায় উপুর হয়ে চোখের জলে বালিশ ভেজাতে লাগল। সকাল হল। স্বাভাবিক ভাবেই সব চলতে লাগল।
শুধু অর্ক একবারের জন্যও ইন্দ্রাণীর সাথে কথা বলার সুযোগ পেল না।
বলা ভাল ইন্দ্রাণী সুযোগ দিল না।
অর্ক অনেক ভাবল। কি এমন হল যে ইন্দ্রাণীর এত খারাপ লাগল সেটা উদ্ধার করতে পারল না। তাহলে?
এভাবে সব শেষ হয়ে যাবে?
আগে হলে এক কথা ছিল। আজ ইন্দ্রাণী আর কুমারী নেই।
তার সব অর্ককে উজাড় করে দিয়েছে। ভাল না বাসলে কোনো মেয়ে এটা করবে না। আর দাদাকেও সব বলত না। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়। কি করবে মেয়েটা?
আর কাউকে বিয়ে করবে শেষ পর্যন্ত?
করলে সুখী হবে তো?
যদি সব জানাজানি হয় বর কি মেনে নেবে ?
ইন্দ্রাণীর জীবন শেষ হয়ে যাবে। আর ভাবতে পারে না অর্ক।
মাথাটা ঝিমঝিম করে। বমিবমি লাগে।
নিজের মনেই বলে---" এত তাড়াতাড়ি এতোটা এগোনো ঠিক হয়নি। কিন্তু সবটা কি আমার একার জন্য ঘটেছে? তাও তো নয়।"
দেখতে দেখতে রাত নামে। একসময় খাওয়াদাওয়া সেরে যে যার ঘরে যায়।
ইন্দ্রাণী অন্যদিনের মতো মেসোমশাইকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়।
অর্ক স্থির বিশ্বাসে উপনীত হয় ইন্দ্রাণী তার ঘরে আর যাবে না।
#######################################################
ইন্দ্রাণী নিজের ঘরে যায়। যাবার সময় একপলক তাকিয়ে দেখে অর্কর ঘরের দরজার দিকে। দরজা বন্ধ।
ভাবে আজো ভেজানোই আছে হয়তো ।
অর্ক দরজা ভিতর থেকে বন্ধই করেনি। না করুক। কষ্ট হয়।
গলার কাছে কিছু যেন দলা পাকিয়ে ওঠে। তবু মনকে বুঝিয়ে নিজের ঘরে যায়। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে দেয়।
তারপর বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে।
অর্কর বুকের ভিতরটা মুচড়ে ওঠে।
দেয়াল আর খাটের মাঝখানে একচিলতে জায়গায় অনেক কষ্টে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল নিঃশব্দে।
ইন্দ্রাণীর কান্নার সংক্রমণ ঘটল।
সারাদিন নিজের বুকে চেপে রাখা কান্নাটা আর বাধা মানল না।
ঘরের মধ্যে কিছু একটা শব্দ ইন্দ্রাণীর কানে গেল।
সচেতন হয়ে বোঝার চেষ্টা করল।
শব্দ একটা হচ্ছে এখনো। তবে কিসের সেটা পরিষ্কার নয়।
সে উঠে আলো জ্বেলে দিল। তারপর ভালো করে দেখতে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক।
"তুমি এখানে?" অর্ক তখনো দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে ।
ইন্দ্রাণীর খুব কষ্ট হয়। হাত ধরে অর্ককে তুলে বিছানায় বসায়।
বলেই নিজের নাইটি দিয়ে সব পরিস্কার করে।
অর্ক তখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
ইন্দ্রাণী পরিস্থিতি বদলাতে বলে ----"কাঁদছ কেন ওভাবে? ছেলেরা কাঁদলে ভীষণ ন্যাকা ন্যাকা লাগে।"
অর্ক এবার ডুকরে কেঁদে ওঠে।
ইন্দ্রাণী তার পাশে বসে মুখটা নিজের দিকে তুলে বলে----"তাকাও, তাকাও আমার দিকে।"
অর্ক চোখ তোলে। চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে ইন্দ্রাণী বলে---"কি হয়েছে, কাঁদছ কেন?"
অর্ক দুহাতে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে বলে----"মরে যাব, আমি মরে যাব ইন্দ্রা।"
ইন্দ্রাণীও আর সামলাতে পারে না।
তার ভালোবাসার মানুষটার কষ্ট তাকে ব্যকুল করে। সে ফুঁপিয়ে ওঠে।
দুজন দুজনকে আঁকড়ে চোখের জলে সব কষ্ট ধুয়ে ফেলতে চায় যেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন