বৃহস্পতিবার, মে ১৬

অন্তরালে

রাত প্রায় দুটো।অধরা বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো।পাশেই রাজু ঘুমোচ্ছে।সুযোগটা মিস দিতে চাইলো না অধরা।যত্ন করে রাখা ছুরিটা বালিশের নিচ থেকে বাহির করলো।
"ওহ্ফ"
তল পেটে ব্যথাটা অনুভব করতেই,রাজুর মুখ থেকে শব্দটা বাহির হয়ে আসলো।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে অধরা ওর উপরে বসে আছে।যে জায়গায় ব্যথা অনুভব করলো,সেই জায়গায় হাত দিলো।হাতটা কেমন যেন ভেজা ভেজা লাগলো।রাতের এই আদৌ আলোতে রাজু কিছুই বুঝতে পারলো না।
"অধরা,তুমি?"
কথাটা বলতেই,রাজু আবারও ব্যথার অনুভব করলো।তবে এবার ব্যথাটা অনুভব করলো বুকে।কিছু একটা ওর বুকে ডুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
"ওহ্ফ,অধরা,করছো কি তুমি?"
এই বলে অধরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
রাজু বুক থেকে ছুরিটা বাহির করতেই,অধরা রাজুর উপর আবারও ঝাঁপিয়ে পড়লো।কিছু সময় ধস্তাধস্তির পর,রাজু ও অধরা উভয়ই ক্লান্ত হয়ে পড়লো।
:-তোকে আমি ছাড়বো না।
ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে কথাটা বললো অধরা।রাজু কিছুই বুঝতে পারছে না।শুধু এটা অনুভব করলো আঘাত পাওয়া তলপেট আর বুকের স্থান দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরতেছে।গায়ের জামাটাও রক্তে ভেসে যাচ্ছে।শরীটটা ক্লান্ত হয়ে আসতেছে।নিজেকে সামলে নিয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।অপরদিকে অধরা খাটে গিয়ে বসলো।ছুরিটা কোন দিকে গিয়ে পড়েছে,অন্ধকার হওয়ায় সেটা বুঝা যাচ্ছে না।
:-কেন এমন করেছো?কি করেছি আমি?
মুখ দিয়ে কথা বাহির হতে চাচ্ছে না,তারপরেও অনেক কষ্টে কথাটা বললো রাজু।
:-"কি করেছি আমি,না?"তুই বল,তুই কি করিস নি?তুই আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছিস।
চিৎকার দিয়ে কথাটা বলে উঠলো অধরা।রাজু অধরার কথার কোন মানেই বুঝে উঠতে পারলো না।
:-তুমি প্লিজ,শান্ত হয়ে বসো।তারপর বলো,আমি কি করেছি?
অধরা রাজুর দিকে আক্রমনাত্মক দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই কথাটা বললো রাজু।
অধরা বসে থেকে ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলো।
:-অনেকদিন ধরে তোকে শেষ করার চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু পারিনি।আজ তোকে শেষ করবোই,করবো।(অধরা)
:-কিন্তু আমি কি করেছি,সেটা তো বলো।(রাজু)
:-তুই আমার বাবা,ভাই আর ভালোবাসার মানুষকে খুন করেছিস।ওদেরকে কেন খুন করেছিস,বল?
:-মানে কি?এসব তুমি কি বলতেছো?
অবাক হয়ে বললো রাজু।
:-ভান করতেছিস?ভুলে গেছিস,সেই রাতের কথা?
:-কোন রাত?
:-৩ মাস আগের ঘটনা টা তো তোর ভুলার কথা না।রাতের প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে তুই আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার বাবা,ভাই আর আমার ভালোবাসার মানুষটাকে তুই খুন করিস নি?কি করে ভুলে গেলি,বল?
কথাগুলো শুনে অবাক চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে থাকলো রাজু।অধরা অনুভব করলো তার পায়ের কাছে কিছু একটা আছে।পায়ের আঙ্গুল দিয়ে সেটা হাতে তুলে নিলো।দেখে এটা সেই ছুরিটা।অন্ধকার হওয়ায় রাজু বিষয়টা দেখতে পায়নি।
:-তুমি আসলে কে?(রাজু)
:-তুই যাদের খুন করেছিস,ওদের মাঝে বুড়ো লোকটা আমার বাবা,আর একজন আমার ভাই,অন্যজন আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো।বল,কেন তুই ওদের খুন করেছিস?
কথাগুলো বলেই অধরা গিয়ে রাজুর বুকের মাঝে থাকা আগের করা আঘাতটার মাঝে আবারও ছুরি ডুকিয়ে দিলো।ছুরি ডুকার সাথে সাথে রাজু ব্যথায় ককিয়ে উঠলো।গাল দিয়ে লালা ঝরতে লাগলো।প্রচন্ড ব্যথায় চোখে পানি চলে আসলো।নড়তে পারতেছে না,শরীরটা ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসছে।
:-তুই ওদেরকে খুন করে বাহির হয়ে আসার যে মেয়েটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছিলি।ওই মেয়েটা আমি ছিলাম।
ছুরিটা রাজুর বুকে গেঁথে দিয়ে রাজুর পাশে বসে কথাটা বললো অধরা।জবাবে রাজু কিছু না বলে সোজা হয়ে বসলো।
:-বাড়িতে ডুকেই যখন দেখি ওদেরকে খুন করা হয়েছে,আর সেটা তুই করেছিস।তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি,এর বদলা আমি নিবোই নিবো।তাই তোকে মিথ্যে বলে,তোর আমার প্রতি থাকা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভালোবাসার অভিনয় করে তোকে বিয়ে করেছি।আর এতদিন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।আর আজ সেটা কাজে লাগালাম।এবার বল,কেন খুন করেছিস?
এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো অধরা।আর চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
:-আমি ওদেরকে খুন করিনি।
নিরবতা ভেংগে অনেক কষ্টে কথাটা বললো রাজু।
:-তুই বললেই আমি বিস্বাস করে নিবো,ভাবলি কি করে?(অধরা)
:-আচ্ছা,তোমার কি দেখে মনে হলো,আমিই খুনগুলো করেছি?(রাজু)
:-তুই আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ার সময় তোর ছুরিটাও পড়ে যায়।যেটা এখন তোর বুকে গেঁথে আছে,ওটাই সেই ছুরি।
:-এতটুকুর উপর ভিত্তি করে আমায় তুমি খুন করতে চাইতেছো।আচ্ছা,তোমার বাবা,ভাই আর ভালোবাসার মানুষকে কি করে খুন করা হয়েছিলো?
রাজুর কথাটায় অধরা চুপ হয়ে গেলো।কারণ,ওদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
"অন্তরালে"
লেখক:- মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাজু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন