Breaking

বৃহস্পতিবার, মে ১৬

আমি ,তুমি এবং এক পশলা বৃষ্টি

 আমি ,তুমি এবং এক পশলা বৃষ্টি

২য় এবং শেষ পর্ব
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ইফতি হাতে চা নিয়ে আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ! আমি তাড়াহুড়ো করে জলদি বিছানা থেকে উঠে নিজের কাপড় ঠিক করলাম ! ঠিক বুঝতে পারছি না ক' টা বাজে ,বড্ড দেরি হয়ে গেল ভেবে নিজেকে খানিকটা বকে নিলাম !
- আসসালামু আলাইকুম ,ঘুম কেমন হলো?
- ওয়া আলাইকুমুস সালাম , জ্বি ভাল !
- জলদি উঠে নামায পড়ে নিন ,না হলে দেরি হয়ে যাবে !
আমি জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নামাযটা সেরে নিলাম ! ইফতি আমার কাছে এসে এক কাপ চা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
- নতুন বাড়িতে কোন সমস্যা হয় নি তো?
- জ্বি না !
- আচ্ছা ,চা খেয়ে নিচে আসুন মা ডাকছে !
বলে ইফতি নিচে চলে গেল !
মানুষটাকে এখন আমি ভাল করে দেখলাম ! মুখে চাপা দাঁড়ি ,সাদা সুন্দর নয় তবুও মুখে যেন মায়া খেলা করে ,চোখ দুটো কথা বলে ! যদিও উনি একবারও আমার দিকে চোখ তুলে কথা বলেন নি তবুও আমার কেন জানি ওনার উপর খুব মায়া হলো ! এই মানুষটাকে আমি ঠকিয়েছি ! হয়তো আমার আল্লাহ আমাকে মাফ করবেন না ! বুঝতে পারছি না ইফতি ঠিক কি করতে চলেছে? রাতের বিষয়টা নিয়ে কোন কথাই বলল না ! হয়তো আপাততো কোন ঝামেলা চান না উনি তাই ! আমি জলদি রেডি হয়ে নিচে গেলাম !
এই প্রথম আমি আমার শ্বশুড় বাড়িটা ভাল করে দেখছি ! অবশ্য কাল রাতে এসেছিলাম তাই চোখে পড়েনি কিছুই ! ২ তলা বাড়ির নিচ তলায় আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি থাকেন ! সেখানেই পাশে রান্না ঘর ! আমাদের থেকে ইফতিদের আর্থিক অবস্থা ভালই !
আমার শ্বাশুড়ি আমায় ডেকে বললেন,
- মা ,এসো আমার কাছে ! এখন থেকে এটা তোমার সংসার ! ইফতি আমার একমাত্র সন্তান ,ওকে কষ্ট দিও না !
আমি উত্তরে কি বলব বুঝতে পারছি না ! চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম !
পরের দিন ইফতি আমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এলো ! আমি ভেবেছি ইফতি হয়তো এবার আমায় রেখে দিয়ে চলে যাবে আর আসবে না ! কিন্তু অবাক হলাম ইফতি যখন আমার সাথে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে বলল ," আমরা কিন্তু একদিনের বেশি থাকব না ! " সেদিন ইফতি আমার সাথে তেমন কোন কথাই বলেন নি ! রাতে রুমে এলে আমি জিঙ্গেস করলাম ,
- কাল আপনি কখন যাচ্ছেন?
- আগে সকাল হোক!
- কি ভাবলেন আমার বিষয়টা নিয়ে ?
- ভাবার কি আছে ! ঘুমিয়ে পড়ুন
এই বলে ইফতি নিচে শুতে যাওয়ার জন্য বালিশটা নিল ! আমি ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
- আপনি এ বাড়ির জামাই ! আপনি নিচে ঘুমালে আমাদের পাপ হবে ! আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন আমি বোনের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়ছি ! ইফতি কিছু বলতে গিয়েও বলল না !
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল !
- কি রে তুই তোর বোনের কাছে কেন?
- আসলে মা ,আবার কবে আসি তাই বোনের কাছে শুয়ে পড়লাম
- উঠে পড় ,ইফতি তোকে ডাকছে !
আমি জলদি গিয়ে দেখি ইফতি নামাযে দাঁড়িয়ে গেছেন ,আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে পড়লাম ! নামায শেষে ইফতি বলল ,
- আমরা কিন্তু সকালের নাশতা সেরেই রওনা দেব কোন বায়না শুনব না !
আমি কোন উত্তর না দিয়ে নাশতা রেডি করতে চলে গেলাম !
বেলা ৯ টায় আমরা বাসা ছেড়ে রওনা দিলাম ইফতির নিজস্ব গাড়িতে ! আধ ঘণ্টা পর হঠাৎ ইফতি গাড়িটা থামিয়ে বলল ,
- নামুন
আমি অনেকটা হতভম্ব হয়ে গেলাম ! মাঝ রাস্তায় ইফতি কেন গাড়িটা থামাল আর আমায় এই বা কেন নামতে বলছে ! তবে হয়তো ইফতি আমাকে এখানেই ফেলে রেখে যাবে ! আমি কোন কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম! দেখলাম ইফতিও গাড়ি থেকে নেমে দাড়াল ! আমাকে বলল ,
- সালমা আপনার মনে অনেক প্রশ্ন তাই না? আমি কেন আপনাকে বিয়ে করলাম ? আপনাকে না জেনে না বুঝে? আমি আপনার সত্যটা জানার পরও কেন আপনাকে তাড়াচ্ছি না? আমি আপনার সাথে ঠিক কি করতে চাচ্ছি তাই তো?
- হ্যাঁ ,কিন্তু এসব এই মাঝরাস্তায় কেন বলছেন ?
- সালমা ,আমি আপনাকে ভালবাসি !
- মানে ?
- আপনাকে সেদিন আমি প্রথম দেখি আজ থেকে ২ বছর আগে ! ঠিক এই রাস্তায় ,সেদিন আকাশ মেঘলা ছিল তবে বৃষ্টি হবার কোন সম্ভাবনা ছিল না ! হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলো পুরোটা রাস্তা জুড়ে লোকজনের ছুটোছুটি তখন আমার চোখ পড়ে একটা মেয়ের উপর যে বোরখা পড়া ছিল তবে মুখটা খোলা ! আমি দেখলাম মেয়েটা তার ছাতাটা একটা বৃদ্ধ মানুষকে দিয়ে নিজে বৃষ্টিতে ভিজছে ! বৃষ্টতে ভেজায় যে এতোটা আনন্দ তা আমি এর আগে জানতাম না ! সেই এক পশলা বৃষ্টিতে দেখা মেয়েটিকে আমি ভালবেসে ফেলি,ঠিক করে নেই আমি তাকেই বিয়ে করব ! কিন্তু তখন আমার কোন চাকরী ছিল না ,যদিও আমার বাবার যথেষ্ট টাকা পয়সা আছে তবুও আমি চেয়েছি নিজে কিছু করতে ! তাই আমি অপেক্ষা করেছি তার আর খোঁজ নিয়েছি সেই মেয়েটির ব্যাপারে ! আপনি জানেন সে কে?
- কে?
- আপনি ! আপনাকে সেদিনই আমি ভালবেসে ফেলি আর নিজের জীবন সঙ্গী করার পণ করি !
আমি হা করে ইফতির কথাগুলো শুনছিলাম ! একটা লোক আমার খোঁজ নিয়েছে আমায় ভালবেসেছে এসব আমি জানতেও পারি নি !
- আপনি তখন কেন বলেন নি?
- আমি হারাম সম্পর্ক চাই নি ! তাই আপনার সামনে না তো এসেছি না তো নিজের মনের কথা বলেছি! আমি আপনাকে নিজের জীবনসঙ্গী করে পেতে চেয়েছি তাই নিজেকে আপনার যোগ্য করে তুলেছি !
- কিন্তু আমি তো আপনার যোগ্য নই ! আমি তো পাপ করেছি ,অন্যের সন্তান আমার গর্ভে !
- আজ থেকে বাচ্চাটার বাবা আমি ,যদি আপনার আপত্তি না থাকে তো !
- কিন্তু
- আমি আপনার সম্পর্ক,বিয়ে আর বাকি সব ব্যাপারটা জানতাম ,তবুও আপনার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছি ! দেখুন ভুল তো মানুষ করেই তাই বলে কি তার মাফ হয় না ! আমি আমার খোদার কাছে প্রার্থনা করব যেন তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দিন !
আমি ভাবিও নি একটা মানুষ এতোটা ভাল হতে পারে ! ইফতিকে দেখার আগে বিশ্বাস এই করতাম না যে পুরুষের মধ্যেও পার্থক্য থাকে !
- সালমা,আমি কি আপনার জীবনসঙ্গী হতে পারি?দেবেন কি আপনার সন্তানের বাবা হওয়ার অধিকার ?আমি কি আপনাকে তুমি ডাকার অনুমতি পেতে পারি?
আমার কোন কথা বলার মতো শক্তি নেই ! দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে শুধু ! দৌড়ে ইফতিকে জড়িয়ে ধরলাম ,ঠিক তখনি বৃষ্টি শুরু হলো ! ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
- দেখেছো ,এক পশলা বৃষ্টিতে তোমায় দেখলাম,আবার আরেক পশলা বৃষ্টিতে তোমায় আপন করে পেলাম ! এখানে এখন আমি ,তুমি আর এক পশলা বৃষ্টি !
আমার আর ইফতির বিয়ে হয়েছে আজ ৩ বছর পূরণ হলো ! আমি ২য় বার মা হতে চলেছি ! আমার আর ইফতির সন্তান ! আমাদের প্রথম সন্তানের এই ২ বছর ৬ মাস বয়স ! সে ইফতিকেই আলতো করে বাবা ডাকে ! ইফতির কলিজার টুকরা আমার ছেলেটা ! ইফতি তার নাম রেখেছে ইরফান আরাবী ! বাইরে প্রচুর মেঘ করেছে মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে ! আমাদের ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়েছে ! আমি আর ইফতি বাইরের নিয়োনের আলোয়,জানলার পাশে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছি এক পশলা বৃষ্টি !
Poly Talukder

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন