অন্তরালে"
:-মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাজু
২য় পর্ব
"খুনগুলো তুই না করলে,তোর কাছে ছুরি ছিলো কেন?আর কেনই বা আমাদের বাড়ি থেকে দৌড়ে বাহির হয়ে আসলি?"
:-হুম,আমি খুন করার জন্যই তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।কে বা কারা আমি যাওয়ার আগেই ওদের খুন করে দিয়েছিলো।তাই ওখান থেকে আমি তাড়াহুড়ো করে বাহির হয়ে আসলাম।
অধরার কথার জবাবে,কথাগুলো বললো রাজু।
:-মিথ্যা কথা।তুই আমাকে মিথ্যা বলতেছোস।তুই ই খুন করেছিস।(অধরা)
:-এই অবস্থায় আমি আর যাই বলি না কেন মিথ্যে বলবো না।আর সেটা তুমিই বুঝতে পেরে গেছো।
অনেক কষ্টে কথাগুলো বলে রাজু ওর বুকে বিধে থাকা ছুরিটা বের করে নিলো।ছুরিটা অধরার দিকে এগিয়ে দিলো।কিন্তু অধরা ছুরিটা নিলো না।ফ্লোরেই পড়ে থাকলো ছুরিটা।
:-কেন আর কাকে খুন করতে গিয়েছিলি আমাদের বাড়িতে?(অধরা)
:-তোমার ভাইকে খুন করে শোধ নিতে গিয়েছিলাম।(রাজু)
:-কিসের শোধ নেওয়ার জন্য আমার ভাইকে খুন করতে চাইছিলি?
:-তোমাকে বলেছিলাম না আমার একটা বোন ছিলো?
:-হুম,তো?
:-তোমার ভাইয়ের কারণে আমার বোনটা নিজেকে শেষ করেছিলো।তাই সেই শোধ নিতে ওকে খুন করতে চাইলাম।
:-আমার ভাই কি করেছিলো?
জবাবে রাজু কিছুসময় চুপ থাকলো।শরীরটা ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে আসতেছে ওর।
:-এক গ্লাস পানি হবে?গলাটা শুকিয়ে গেছে খুব।
কিছুটা সময় নিয়ে কথাটা বললো রাজু।
:-আগে তুই বল আমার ভাই কি করেছিলো?(অধরা)
:-তোমার ভাই অনেকগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিলো।তার মাঝে একটা মেয়ে অদ্রীতা,সে ছিলো আমার বোন রিয়ার খুব কাছের বান্ধবি।অদ্রীতাকে তোমার ভাই প্রেমের জালে ফাসিয়ে ওকে জোর করে ড্রাগস নিতে বাধ্য করে।আর ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে,আর সেটা ভিডিও করে ওকে সবসময় ব্ল্যাকমেইল করতো ওর যখন শারীরিক চাহিদার প্রয়োজন হতো অদ্রীতাকে বাসায় আসতে বাধ্য করতো।
এই বলে রাজু একটু থামলো।
:-আমার ভাই এইরকম না।এসব আমি বিস্বাস করি না।(অধরা)
:-তুমি বিস্বাস না করলে আমি জোর করে বিস্বাস করাতে পারবো না।
অধরা কিছু বলতে পারলো না।অবাক চোখে রাজুর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
:-আচ্ছা,তোমাদের তো দিন দিন অর্থ-সম্পদ বেড়েই চলছিলো,তাই না?কখনো কি তোমার বাবার কাছ থেকে জানতে চাইছো,কি করে আর কোথায় থেকে এত টাকা-পয়সা আসে?
রাজুর কথাটায় অধরা চুপ করে থাকলো।কারণ ওদের বাড়িতে প্রায় সময়ই পুলিশ আসতো।আর ছোট বেলায় ওর আম্মু,ওর বাবার সাথে ঝগড়া করেছিলো,শুধুমাত্র ওর বাবার ব্যবসাটা কি সেটা জানার জন্য।কিন্তু ওর বাবা জবাবে কিছু বলতে পারেনি।একসময় ওর মা,ওর বাবাকে ছেড়ে চলে যায়।কেন ওর মা,ওর বাবাকে ছেড়ে যায়,সেই বিষয়টা অধরা তার বাবার থেকে কখনো জেনে নিতে পারেনি।অধরা ওর মাকে খুবই ঘৃনা করতো ওদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়ায়।আর অধরা ওর বাবার কাছে যা চাইতো,সবই পেতো।আর ওর বাবাও ওকে খুব বেশী ভালোবাসতো।তাই অধরার ও কখনো ওর বাবার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হয়নি।আর অধরা ও জানার কোন প্রয়োজনবোধ করেনি।
:-আচ্ছা,তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো?
তুই থেকে তুমিতে এসে বললো অধরা।
:-হুম,তোমার বাবাও অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলো এতদিন যাবৎ।আর সেটা আমি আমার বোন অপহরন হওয়ায় খোঁজ লাগাতে গিয়ে জানতে পারি।
:-তারমানে আমার ভাই তোমার বোনকে অপহরণ করেছে?(অধরা)
:-হুম।
:-কিন্তু কেন?
জবাবে রাজু কিছু বলতে যাবে,তার আগেই ওর রক্ত বমি শুরু হয়ে গেলো।বমি করার এক পর্যায়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।
:-এই,তোমার কিছু হবে না।আমি তোমার কিছু হতে দিবো না।তুমি বসো।
অধরা দিশেহারা হয়ে রাজুকে সোজা করে বসিয়ে দেয়।কি করবে,বুঝতেই পারতেছে না।দৌড়ে পানি আনতে চলে গেলো।
একটু আগে যে মেয়েটা রাজুকে খুন করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে,এখন সেই মেয়েটাই রাজুকে বাঁচানোর জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আর এটা ভাবতেই,রাজুর মনের অজান্তে ওর মুখ দিয়ে এক চিমটে পরিমাণ হাসি বেরিয়ে এলো।
আবারও ফ্লোরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে রাজু নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে বসে থাকার চেষ্টা করতে লাগলো।প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে আঘাত পাওয়া স্থান গুলো থেকে।শরীরটা ও ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসতে লাগলো।
:-এই নাও পানি,,
তড়িগড়ি করে এসে রাজুর দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে কথাটা বললো অধরা।
রাজুও পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে পানিটা খেয়ে নিলো।
:-উঠো,তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
এই বলে রাজুকে ফ্লোর থেকে উঠাতে চাইলো অধরা,কিন্তু পারলো না।
:-তুমি এইরকম টা না করে,আমার পাশে বসো।(রাজু)
:-নাহ্,তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
:-আমার অবস্থা খুব খারাপ হতে চলেছে।আমি আর বেশীসময় বাঁচবো বলেও মনে হচ্ছে না।তোমায় বাকি কথাগুলো আমায় বলতেই হবে।
অধরার হাত শক্ত করে ধরে বললো রাজু।
:-প্লিজ,এইরকমটা করো না।চলো তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
কান্না করতে করতে বললো অধরা।
:-তুমি বাকি কথাগুলো শুনবে না?(রাজু)
অধরা কিছু না বলে চুপ থাকলো।
:-জানো,তোমার ভাই,আমার বোনের সাথে কি করেছে?(রাজু)
এবারও অধরা কিছু না বলে চুপ করে রাজুর পাশে বসে পড়লো।কারণ ও বুঝতে পেরে গেছে,এখন যতই চেষ্টা করুক না কেন,রাজুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবে না।
:-কেন আমার ভাই,তোমার বোনকে অপহরণ করেছিলো?(অধরা)
:-অদ্রীতা আমার বোনকে সবকিছু খুলে বলে।পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যাওয়ার জন্য আমার বোন ওকে জোর করে।কিন্তু অদ্রীতা যায়নি।বলে,তোমার ভাইকে পুলিশে ধরিয়েও কোন লাভ হবে না।ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে ও আবার বাহিরে চলে আসবে।কারণ তোমার বাবা আর ভাইয়ের পুলিশের সাথে সম্পর্ক ভালো ছিলো।
কথাগুলো বলেই রাজু দেয়ালের সাথে মাথাটাকে ঠেকিয়ে নিলো।
:-তারপর?(অধরা)
রাজু কিছু না বলে অধরার দিকে তাকালো।মেয়েটার চোখে পানি ছলছল করতেছে।আর ওর চোখে রাজু কি যেন দেখতে পাচ্ছে।
:-আমার না খুব ঘুম ঘুম পাচ্ছে।(রাজু)
:-নাহ্,তোমার কিছু হবেনা।
এই বলে অধরা রাজুর গায়ে থাকা জামাটা খুলে নিলো।পুরো জামাটা রক্তে ভিজে গেছে।ছুরি দিয়ে আঘাত করা স্থানগুলো ওর ওড়না দিয়ে চেপে ধরে রাখলো।
:-জানো,আমি কখনো কল্পনাও করিনি,তুমি আমার সাথে এমনটা করবে।কত আশা ছিলো,কালকে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে বাহির হবো।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।
কথাগুলো বলতে গিয়ে রাজু চোখের কোণে পানির অস্তিত্ব টের পেলো।অধরা চুপ করে থেকে কান্না করেই যেতে লাগলো।
--------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন