Breaking

বুধবার, জুন ২৮

পরকীয়া পর্ব- বিংশ

 


আজ দশ দিন হলো মা আর আরমান বলে ডাকে  না। ধীর গতিতে আরমান তার মায়ের ঘরটার দিকে এগিয়ে যায় মায়ের বিছানায় বসে। ঘরটা থেকে মা মা একটা গন্ধ আসছে। যেন জান্নাতি কোন ফুলের সুভাষ। বিছানার পাশে টেবিলে রাখা মায়ের ব্যবহৃত চশমা,ডায়েরি, হাদিসের কিছু বই আরমান সব গুলোতে আলতো হাত দিয়ে স্পর্শ করে আর চোখ থেকে পানি ঝড়ে। শেফালি বেগমের প্রিয় একটা বই "বেহেশত জিওর "এই বইটা আরমানের দাদি দিয়েছিলো। শেফালি বেগম খুব যত্নকরে বইটা পড়তো। আরমান বইটা হাতে নিয়ে একটা চুমু খায় জেন মায়ের কপালে খাওয়া চুমু। বইটির প্রথম পৃষ্ঠাটি বের করতেই একটা খাম দেখতে পায় আরমান। খামটির ওপরে আরমান লেখা। খামটি হাতে নিয়ে খুলে দেখতে একটি চিঠি পায়। চিঠিটা খুলতেই আরমান বুঝতে পারলো এটা তার মায়ের  লেখা চিঠি। বাবা আরমান              কিছু দিন যাবত আমার শরীরটা ভালো লাগছে না মনে হয় আমিও খুব তাড়াতাড়ি তোর বাবার কাছে চলে যাব। তোর বাবা আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলো। আমি তোর বাবার দ্বিতীয় বউ ছিলাম,তোর বাবার প্রথম স্ত্রীর অনেক বয়স ছিলো। তাই প্রায় সময় সে অসুস্থ থাকতো তাই তোর বাবা আমাকে বিয়ে করে। আমাদের বিয়ের কয়েক মাস পরেই সে মারা যায় তার নাম ছিল শিল্পী। আমি তাকে শিল্পী আপা বলে ডাকতাম। মানুষটা খুব অমায়িক ছিলো। প্রচন্ড ভালোবাসতো আমায়। তোর যে বড় বোন আছিয়া তার মেয়ে। মৃত্যর সময় আপা আমার কোলে দিয়ে বলেছিলো তোমার মেয়েকে দেখো। আমি চললাম আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। সে চলে গেলো। তোর বাবা আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও ভালোবাসাটা আমার তেমন একটা কাজ করতো না।আমাদের সাথে বেশির ভাগ সময় ঝগড়া হতো।কারন আমি ছবির মতো জীবনের স্বপ্ন  বেশী দেখতাম। আমি সব কিছুর মাঝে আনন্দ খুজে বেরাতাম। তোর বাবার মাঝে কোন রোমান্টিকতা খুজে পেতাম না। আর তখন আমার স্কুলের বান্ধবীদের দেখতাম তার স্বামীদের সাথে হাসি খুশি তখন আরও বেশি রাগ হতো। আমার খুব করে ইচ্ছে হতো তোর বাবা কোন এক বসন্তের রাতে কাজ শেষে আমার জন্য বেলী ফুলের মালা নিয়ে এসে বলবে শেফালি কই গো এই দিকে এসে আমার পাশে একটু বসো। আমার চুলের খোপায় বেলী ফুলের মালাটা লাগিয়ে দিয়ে বলবেচলনা হাতে হাত রেখে একটু চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে তুমি আমি ভিজে আসি। জানিস বাবা প্রতিটা মেয়ের তার স্বামিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে সে গুলো পূরণ না তাদের বুক ফাটে তবে মুখ ফাটে না সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব চলে আসে। তখন সম্পর্কের মাঝে অন্য মানুষ ডুকে পরে। অবশ্য দেরী করে হলেও তোর বাবা এই কথা গুলো বুঝতে পেরেছিলো তাই মৃত্যর আগ পর্যন্ত আমার ছায়া হয়ে পাশে ছিলো কখনও কোন অভিযোগ করতে দেয়নি। তাইতো তার মৃত্যর পরেও আমি তার সেই রেখে যাওয়া ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দিলাম বাকি জীবনটা। এখন আমার যাওয়ার পালা।বাবা সম্পর্ক মধুর করে রাখতে বেশী টাকার প্রয়োজন হয় না একটু সময় ইচ্ছা থাকতে হয়। আমি অযথা কোন  কারনে কথা গুলো তোকে বলছি না। মালিহা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছে আমি তোদের দুজনের মাঝে দূরত্ব দেখেছি। আমি যখন চলে যাবো তখন তোকে আগলে রাখার মতো কেউ থাকবে না মালিহাকে ছাড়া। তাই আমার আদেশ তুই পৃথিবীর সমস্ত কিছু পেয়ে। আমিও এক একজন মেয়ে মানুষ আমি নিজেকে দিয়ে বুঝেছি।বাবা তুই ওকে ভালো রাখিস  তাহলে সারাজীবন তোর পাশেই থাকে তোকে  ভালো রাখবে। আর আছিয়াকে দেখে রাখবি ওর খোজ খবর নিবি। ভালো থাকবি  বাবা আমি যেখানেই থাকি তোর জন্য দোয়া করব। তোরা ভালো থাকলে আমি মৃত্যর পরেও শান্তি পাবো।বড় সাধ ছিলো নাতিনাতনির মুখ দেখার। সেই সাধ বোধহয় আমার পূরণ হবে না।  আমি চলে যাওয়ার পরে এই বই গুলো মালিহাকে দিবি। বিশেষকরে এখন তোর হাতের বইটি। বলবি আমি পড়তে বলেছি।                      ইতি                    তোর মা আরমান চিঠিটা পড়া শেষ করে অঝোরে কান্না করছে। তার মায়ের মনে লুকানো কতো কথা কতো ব্যথা সে বুঝতেই পারলো না। মা তার আর মালিহার মাঝের দূরত্ব খেয়াল করেছে। তবে কি সে দিন রাতে মা এই কথা গুলো বলতে ডেকে ছিলো। আমি আসতে পারিনি বলে মায়ের বলা হলো না। আরমানকে অনেক সময় ধরে দেখতে না পেয়ে মালিহা পুরো বাড়িতে খুজছে।আরমান যেহেতু মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে তাহলে মায়ের ঘরটা একটু দেখে আসি বলে মায়ের ঘরের দিকে যাচ্ছে। আরমান ঘরে বসে মালিহার আসার টের পেলো সাথে সাথে চিঠিটা লুকিয়ে বইটা রেখে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। …………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… চলবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন