গ্রামীন সাধারণ জীবনের মধ্যে একটা মেয়ের চারপায়া অদ্ভুত এক জন্তুকে জন্ম দেয়া, মেয়েটার জন্তু সহ জঙ্গলে উধাও হয়ে যাওয়া, এর এক বছর পর সেই জঙ্গল থেকে একটা ভয়ানক মাংসাশী জন্তুর আগমন, গ্রামে বেশ আতঙ্কের আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছে। প্রত্যেকেই দিন-রাত থাকে এখন আতঙ্কের মাঝে। এরমধ্যেই হঠাৎ করে একদিন পরী নামের এক বৃদ্ধাও নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া গেল না আর। বৃদ্ধার নিরুদ্দেশের পেছনে যে সেই সাদা জন্তুটার সম্পর্ক থাকতে পারে তা কেউ ধারণা করতে পারে নি। তাহলে তাদের আতংক সীমা ছাড়িয়ে যেত এবং এটারই প্রয়োজন ছিল।
এরমধ্যেই গ্রামে একরাতে ঘটে গেল ব্যতিক্রম এক ঘটনা। গ্রামের মাতবর লিয়াকত ব্যাপারীর এক নাতি শহরে থাকে। সে গ্রামে বেড়াতে
আসার
সময়
তার
দাদার
জন্য
একটা
বিদেশি
বড়
আকারের
কুকুর
উপহার
নিয়ে
এসেছে।
জঙ্গলের
পাশে
হওয়ায়
শুধু
এই
গ্রামে
নয়
আশেপাশের
দশ
গ্রামের
ভেতর
কোনো
কুকুর-বিড়াল ছিল না। লিয়াকত
আলী
খুব
আগ্রহ
নিয়েই
কুকুরটাকে
পোষ
মানাতে
ব্যস্ত
হয়ে
পড়লেন।
অদ্ভুত এক জন্তুর এই জঙ্গলে আগমন, গ্রামের পোষা প্রাণী শিকারের কথা লিয়াকত ব্যাপারীর কাছে তার নাতি শুনেছিল। কিন্তু যে কয়দিন সে গ্রামে ছিল ওটার কোনো আওয়াজ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জঙ্গলের পাশের অঞ্চলে বন্য প্রাণীর আক্রমণের ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি তার কাছে। ছুটি শেষ হলে সে আবার শহরে চলে যায়।
এরপর একদিন মধ্যরাতে গ্রামের অর্ধেক মানুষ জঙ্গল থেকে ভেসে আসা সেই সাদা জন্তুটির হুঙ্কারের আওয়াজ পেল। সবাই আতংক নিয়ে যার যার ঘরে অপেক্ষা করতে লাগলো। না জানি আজ কার বাড়ির গোয়ালে হামলা চালাবে!
লিয়াকত
ব্যাপারীর
বাড়ি
গ্রামের
মাঝামাঝি
হওয়ায়
এখন
পর্যন্ত
জন্তুটার
হামলার
শিকার
হয়নি
তার
গোয়ালের
পশুগুলো।
লিয়াকত
নিশ্চিন্তে
ঘুমাচ্ছিল,
তার
পাশে
তার
স্ত্রী।
তাদের
বাড়ির
অদূরেই
আরেকটা
বাড়ি
আছে
যেটায়
তার
মেয়ে,
মেয়ের
জামাই
আর
দুই
নাতি-নাতনি থাকে।
হঠাৎই খুব কাছে বিকট এক হুঙ্কারের
আওয়াজে
ধড়ফড়
করে
ঘুম
থেকে
জেগে
উঠে
বাড়ির
সকলে।
পরমুহূর্তেই শুনতে পায় গোয়ালের গরুগুলোর ভয়ানক আর্তনাদের শব্দ। কারো বুঝতে বাকি থাকে না , কী ঘটছে। জন্তুটা আজ এখানে হামলা চালাচ্ছে। লিয়াকত ব্যাপারীর মেয়ের জামাই বকুল ভয়ে ভয়ে জানলার খিলি সরিয়ে বাইরে তাকাল। সোলার লাইটে আলোকিত উঠানের একপাশে গোয়াল ঘরটা জানলা বরাবর হওয়াতে ওটার দিকেই চোখ আটকে গেল তার। শরীর শিরশির করে উঠলো হঠাৎ। ঐতো একটা বড় গাভীর ধর কামড়ে টেনে-হিঁচড়ে গোয়াল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ানক সেই জন্তুটা। মুখ দিয়ে বের হচ্ছে গোঙানি। চুইয়ে ঝরছে রক্ত। গাভিটাও এখনো মরেনি, ওটার গলা দিয়েও গড়গড় শব্দ বের হচ্ছে।
জন্তুটা গাভীর তিনগুন হবে। গাভিটাকে ভালোমতো কামড়ে ধরে উঁচু করার চেষ্টা করছে। এমন সময় ঘেউ ঘেউ করতে করতে ছুটে এলো লিয়াকত ব্যাপারীর পোষা কুকুর টমি। ভয়ানক জন্তুটাকে দেখে একটুও ভয় পাচ্ছে না ওটা। উল্টো আশ্চর্য্যের ঘটনা জন্তুটাই ভয় পেয়ে চমকে উঠে মুখ থেকে শিকারটা ফেলে দিল। টমি আরো জোরে ঘেউ ঘেউ করতে করতে ওটার দিকে এগিয়ে গেল। এবার জন্তুটাও রাগে ফুঁসছে। আকাশ ফাটিয়ে বিকট এক হুঙ্কার ছাড়লো। চোখ দিয়ে খুনের রক্ত ঝরছে যেন ওটার। লাফিয়ে পরে টমির ধর থেকে মাথা ছিন্ন করার প্রতিজ্ঞা করছে যেন। তবে তার আগে বেশ কয়েকবার হুংকার দিয়ে টমিকে ভয় দেখাতে চাইলো। বোঝাচ্ছে ঝামেলা চায় না সে।
টমি ভয় পেল না। একেবারে
ঘেউ
ঘেউ
করতে
করতে
গাভীর
আর
জন্তুটার
একদম
কাছে
চলে
এলো।
জন্তুটা
এবার
লাফ
দিয়ে
ঝাঁপিয়ে
পড়লো
টমির
উপরে।
টমির
তুলনায়
আকারে
ওটা
বিকট।
তবে
ক্ষিপ্র
গতিতে
ছোট
জন্তুটাই
সেরা।
টমি
মুহূর্তেই
সরে
গেল
একদিকে
লাফিয়ে।
মুহূর্তেই
ভোঁ
করে
ঘুরে
লাফিয়ে
উঠে
পড়লো
জন্তুটার
পিঠে
ঠিক
যেমন
বন্য
চিতা
শিকার
করে
তার
চেয়ে
চারগুণ
বড়
মহিষকে।
কামড় বসিয়ে দিতে চাইলো জন্তুটার পিঠে, আঁচড়াতে লাগলো সমানে। কিন্তু এক ঝাড়া দিয়েই টমিকে শরীর থেকে ফেলে দিলো ওটা। লাফিয়ে পড়লো আবার টমির উপর, কামড়ে ধরলো ওর গলা, টমি ছটফট করে পায়ের নখ দিয়ে সমানে আঁচড়াতে লাগলো ওটার শরীর। গুঙিয়ে উঠলো জন্তুটা। টমির কন্ঠদেশ থেকেও বেরিয়ে এলো গড়গড় শব্দ। ছুড়ে ফেলল টমিকে জন্তুটা উঠানের এক পাশে।
কয়েক মুহূর্ত নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে রইলো টমি। জন্তুটা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। হুস ফিরতেই আবার উঠে পড়লো টমি, ঘেউ ঘেউ করতে করতে এগিয়ে গেল জন্তুটার দিকে। টমির শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। জন্তুটার তাই এবার টমিকে ধড় কামড়ে মারতে বেগ পেতে হবে না। হুংকার ছাড়লো ওটা। লাফিয়ে পড়বে টমির উপর। এমন সময় চেঁচাতে চেঁচাতে বড় একটা লাঠি হাতে ছুটে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো লিয়াকত ব্যাপারী। তাকে এমন ভাবে ছুটে আসতে দেখে দা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো তার মেয়ের জামাই ও।
আশেপাশের
তিন
বাড়ির
অনেকেই
আড়ালে
লুকিয়ে
থেকে
ভয়ে
জড়সড়
হয়ে
টমি
আর
জন্তুটার
কর্মকাণ্ড
দেখছিল।
দুজন
মানুষকে
এভাবে
জন্তুটার
সামনে
চলে
আসতে
দেখে
আৎকে
উঠলো
তারা।
হাতে
মোটা
লাঠি
আগেই
ছিল।
এবার
তারাও
হৈ
হৈ
হুংকার
দিতে
দিতে
এগিয়ে
গিয়ে
উঠানে
হাজির
হলো। মুহূর্তেই ভড়কে গেল যেন জন্তুটা। দিশেহারা হয়ে তাকালো এদিক সেদিক। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গর্জে উঠলো কয়েকবার, কয় পা এগিয়ে পিছিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো গর্জাতে লাগলো। লোকগুলোও এবার আতঙ্কিত হলো।
কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই। ওটা হামলা করলে ওরাও প্রতিরোধ হামলা করবে এই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে জন্তুটা ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে। একবার তাকালো তার মৃত শিকার পরে থাকা গাভিটার দিকে। মুহূর্তেই ওটার উপর উঠে দাঁড়ালো টমি। এতগুলো মানুষ দেখে তার সাহস আর মনোবল দুটোই বেড়ে গেছে। তার ঘেউ ঘেউ যেন বিভ্রান্ত করে দিল ভয়ানক জন্তুটাকে। শেষ একটা হিংস্র গর্জন দিয়ে উল্টো ঘুরে ছুট লাগালো ওটা জঙ্গলের দিকে।
একে অপরের দিকে তাকালো গ্রামবাসী লোকগুলো। চোখে-মুখে কিছুটা বিজয়ের গর্ব। এই একটা কুকুরের সাহস তাদের ভেতরে কতটা ভয়হীন সাহস জাগিয়ে তুলেছে বুঝে অবাক হলো। এক মুহূর্তে জন্তুটা সম্পর্কে তাদের মনে থাকা ভয় অর্ধেক হয়ে এলো। লিয়াকত ব্যাপারী ঝুকে গিয়ে টমিকে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। ওটার অনেক জায়গায় ছিলে গেছে। ওরও শুশ্রূষা প্রয়োজন। আনন্দে লেজ নাড়িয়ে, ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে ওটাও যেন সাধুবাদ জানাচ্ছে সবাইকে।
পরদিন সকালের মধ্যে পুরো গ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো রাতের এই ঘটনাটা। সবাই যেন একটা আশার আলো দেখতে পেল আতঙ্কের মাঝে। ওই জন্তুটাকে শায়েস্তা করতে পারবে এখন শুধু কুকুর। একটা নয়, প্রয়োজনে শতাধিক কুকুর এনে পুষবে তারা এই গ্রামে!
এরপর বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। গ্রামে রাতের শেষ অংশ। আর আধ-ঘণ্টা পরেই সূর্য উঠে যাবে। গ্রামের সবাই এই সময়টাতে ঘুমিয়ে থাকে। এমন সময়েই জঙ্গলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো এক সুন্দর, লম্বা সুদর্শন যুবক। পিঠে আর বুকে কিছু আঁচড়ের দাগ, কালো চোখজোড়া
কিসের
এক
নেশায়
জ্বলছে।
পরনে
গাছের
ছালের
তৈরি
ছোট
একটা
জামা
আর
সমস্ত
শরীরই
উদোম।
ধীরে
ধীরে
পা
ফেলে
সতর্ক
ভাবে
চারদিকে
তাকিয়ে
গ্রামের
ভেতরের
দিকে
চলছে
সে।
কোনো
মানুষের
পায়ের
আওয়াজ
পাওয়া
মাত্রই
সরে,
অন্য
পথ
ঘুরে
নির্জনতা
খুঁজে
হাঁটছে।
হাঁটতে
হাঁটতে
পৌছালো
শেষ
পর্যন্ত
গন্তব্যে।
বাড়িটা
চিনতে
পারলো
সে।
বাড়ির
কেউ
এখনো
ওঠেনি।
বাড়ির একদম পেছনের দিকে চলে এলো সে , সে চলে নিঃশব্দে। লিয়াকত ব্যাপারীর বাড়ির পোষা কুকুর টমি একটা গাছের পাশে চুপচাপ শুয়ে আছে। নিঃশব্দে যুবক একদম ওটারর পিছু এসে দাড়ালো। ভন করে মাথা ঘোরালো টমি, চমকে উঠেছে। ‘ঘেউ ঘেউ’ করে উঠলো। যুবক শরীর ঝুঁকিয়ে আলতো করে স্পর্শ করলো টমির মাথা। হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগলো ওটাকে। টমি চোখ বন্ধ করে ঘনঘন জিহ্বা বের করতে লাগলো, তার সাথে সমানে নাচছে তার লেজ। থেমে গেছে ঘেউ ঘেউ প্রতিবাদ। যুবক বসে আরেকটু গনিষ্ঠ হলো কুকুরটার। জড়িয়ে ধরলো ওটার শরীর। টমির শরীর কাঁপছে। সে প্রভু ভক্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে।
যুবক তার ছালের তৈরি ন্যাংটির ভেতর থেকে সুচালো একটা পাথরের লম্বা ফলা বের করে আনলো। টমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ফলাটা সজোরে চালিয়ে দিল ওটার গলায়। ফিনিক দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো, টমির গলা থেকে ফসফস, গররগরর শব্দ বের হতে লাগলো রক্তের স্রোত। যুবক শক্ত করে চেপে ধরে আছে ওটার শরীর। ছটফট করলেও একটুও নড়তে পারলো না ওটা।
আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে এলো ওটার শরীর। যুবক এবার টমির ধর মুখ দিয়ে চেপে ধরলো, চুষতে লাগলো সমানে। রক্তে ভিজে উঠতে লাগলো তার মুখ। গলা নিয়ে টেনে পাকস্থলীতে নামাচ্ছে কুকুরটির রক্ত। রক্ত পান শেষে ধারালো ফলাটা ঢুকিয়ে দিল ওটার পেট বরাবর প্রচণ্ড আক্রোশে। একটানে পেট ফেড়ে দুভাগ হয়ে গেল। বেরিয়ে
পড়লো
নাড়িভুঁড়ি। সে এবার মুখ ঢুকিয়ে দিল ওখানে। সমানে কামড়াতে লাগলো জায়গাটা। দাঁত দিয়ে ছিন্নভিন্ন করছে খাবার।
পৈশাচিক কাজ শেষে চেটেপুটে, টমির শরীর থেকে ছিলা চামড়া দিয়ে নিজের শরীর পরিষ্কার করলো সে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। ঘুরে হাটা শুরু করলো সে ধীরও পায়ে সতর্কতার সাথে জঙ্গলের পথে। কিছুদূর যাওয়ার পরেই চমকে উঠলো । একজন ষোলবর্ষীয়া কিশোরী মেয়ে কাঁখে কলসি নিয়ে হেটে আসছে এদিকে। সে হতভম্ব হয়ে সরে যাওয়ার আগেই মেয়েটার সাথে তার চোখাচোখি হলো।
কিশোরী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে
আছে
যুবকটির
দিকে।
ভোরের
হালকা
আভা
ফুটছে
কেবল।
এত
অপরূপ
রূপবান
পুরুষ
সে
তার
পুরো
জীবনে
আর
দেখেনি।
কী
অদ্ভুত
জংলিদের
মতো
পোশাক
পরে
আছে।
এ
এই
গ্রামে
আসলো
কী
করে!
কী
মিষ্টি
চেহারা,
সুন্দর
শরীর।
কলসী
তার
হাত
থেকে
ছুটে
পড়ে
গেল।
ধীরে
ধীরে
এগিয়ে
গেল
সে
ছেলেটির
একদম
কাছে।
কিসের
এক
তীব্রতা
টানছে
তাকে।
হাত
বাড়িয়ে
স্পর্শ
করে
দেখল
সে
ছেলেটির
শরীর,
যেন
এ
স্বপ্ন
নাকি
বাস্তব
বুঝতে
চেষ্টা
করছে।
মুখ
ফুটে
বেরিয়ে
এলো,
‘কে
গো
তুমি?’
যুবক এবার কয়েক পা পিছিয়ে গেল। উল্টো ঘুরে ছুটতে লাগলো জঙ্গলের দিকে। সেও যেন চমকে গেছে। কিশোরী সকিনা স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। কে এই যুবক?
সকালে উঠে টমির ছিন্নভিন্ন বীভৎস শরীর দেখে লিয়াকত ব্যাপারী সহ গ্রামের সকলেও একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেল। ভয়ানক সেই আতংক জুড়ে বসলো আবার তাদের মনে।……………………………
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন