ফোনের ওপার থেকে আরমান বলছিলো মায়ের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে
তার এজমার কারনে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে আর একটা দুঃসংবাদ আছে রিপোর্টে দেখা গিয়েছে তার দুটো কিডনি ড্যামেজ। যতো দ্রুত সম্ভব কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। আমি ভাবছি একটা কিডনি আমিই দেবো মাকে।
এই কথা গুলো শুনেই মালিহা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। আরমান একটি বার মালিহার কথা ভাবলো না। তার জীবন যে মাত্র শুরু হয়েছে তারতো একটা সন্তান ও নেই। আর মালিহা কিছু বলবেই বা কি করে? মায়ের কিডনি দরকার যে কত কষ্ট সহ্য করে ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করেছে। আজ সে অসুস্থ
সব কিছু ভেবে দেখে আরমানের মত কে সমর্থন করলো। আরমানের জন্য মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভুতির জন্ম নিলো নিজের অজান্তে। সময় চলছে সময়ের নিয়ম মেনে শেফালি বেগম এখন একটু সুস্থ দু'দিন পরে অপারেশন তার। শেফালি বেগম অপারেশন করাতে রাজি না। ছেলেকে অসুস্থ করে দিয়ে নিজে সুস্থ হয়ে কয়েকটা দিন বেশী বাঁচতে সে পারবে না। আরমানের কাছে মনে হচ্ছে দিন যেন কাটছে না আগামিকাল সকালে অপারেশন তাই আরমান রাতে বাসায় চলে আসলো ।খাওয়া দাওয়া শেষে
আরমান শুয়ে আছে কিন্তু আরমান কিছুতেই তার দু'চোখের পাতা এক করতে পারছে
না। অস্থিরতায় ভরে উঠেছে আরমানের মন। বুকের মাঝে কেমন চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে। কেউ যেন বুকটা চিরে হৃদয়টাকে বের করে নিচ্ছে এমন কেন হচ্ছে আরমান কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।ছোট বেলায় মায়ের দেয়া খাটের পাশে রাখা সেই এর্লাম ঘড়ির দিকে তাকাতেই আরমানের চোখ ছানাবড়া । গতো পাঁচ দিন আগেই ঘড়িতে নতুন ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। আর আজই তিনটার কাটায় গিয়ে ঘড়িটা বন্ধ হয়ে আছে। আরমান সোয়া থেকে উঠে বসে ঘড়িটা হাতে নিয়ে ফোনটা ও হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনটা বেজে পাঁচ মিনিট। এটা দেখে আরমানের মনটা কুডালো। পাশে শুয়ে থাকা মালিহাকে ডেকে তুললো। আরমান : মালিহা এই ঘড়িটা কখন থেকে বন্ধ হয়ে আছে? মালিহা এতো রাতে আরমানের প্রশ্ন শুনে হতোবাগ! মালিহা: আমি শোয়ার
আগে এর্লাম লাগিয়েছি তখনও ঘড়িটা চলছিলো। এ কথা শুনে আরমান আরও ঘাবড়ে গেলো তার পর মালিহাকে বলতে লাগলো তার মানে ঘড়িটা পাঁচ মিনিট আগেই বন্ধ হয়েছে। ঠিক তখনই আরমানের ফোনটা ও বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলো হসপিটালের নাম্বার ভয়ে ভয়ে আরমান
ফোনটা কানের কাছে নিয়ে হ্যালো বলতে অন্য পাশ থেকে ডাক্তার বললো সরি মিস্টার আরমান ডাক্তার জানায় হঠাৎই
রাত ২ টা ৫৫ মিনিটে শেফালি বেগমের শ্বাস কষ্ট শুরু হয় আমরা তাতক্ষনিক চিকিৎসা শুরু করি
অক্সিজেন দেই কিন্তু ঠিন তিনটা বাজে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
তার চিকিৎসা করার সময় মনে হচ্ছিলো তার নিজেরই বাচ্চার ইচ্ছে নেই।যতদ্রুত সম্ভব আপনারা চলে আসুন। আরমান কাঁদছে না পাথরের মতো বসে আছে আরমানের এ অবস্থা দেখে মালিহার খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই মালিহা আরমানকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাদের তো হসপিটালে যেতে হবে একথা শুনে
আরমানে কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে। আরমান সারা রাত ছটফট করেছে তার মা যে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে তাই তো আরমানের দু'চোখে কোন ঘুম আসেনি। নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে আরমান যে বড্ড একা হয়ে পড়েছে। তার কষ্ট হলে কার আচঁলে গিয়ে মুখ লুকাবে। আরমানের কান্না দেখে মালিহা ও কাঁদছে। আরমানের বোনকে ফোন করে মায়ের মৃত্যর খবরটা জানালো মালিহা। আরমান কে নিয়ে কোন ভাবে হসপিটাল গেলো। মায়ের মুখটা দেখে
আরমান মায়ের দেহটা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। একে একে আত্মীয়-স্বজন সবাই খবর পেয়ে চলে এসেছে। কেউই আরমানকে সামলাতে পারছে না। অনেক কষ্টে আরমানকে সরিয়ে মৃত দেহ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো সবাই। আরমান বাচ্চাদের মতো হাত পা ছুড়ে কাঁদছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন